1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন

শেক্সপিয়রের দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি ঢাকা থিয়েটারের

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১২
  • ১১২ Time View

বিশ্বখ্যাত নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়রের বিখ্যাত নাটক ‘দ্য টেম্পেস্ট’। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় নাট্যদল ঢাকা থিয়েটার এই নাটকটি শেক্সপিয়র প্রতিষ্ঠিত লন্ডনের গ্লোব থিয়েটারে মঞ্চস্থ করবে আগামী ৭ ও ৮ মে। শেক্সপিয়রের দেশে ‘দ্য টেম্পেস্ট’ মঞ্চায়নের আগে প্রস্ততি হিসেবে আগামী ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে নাটকটির।

এ বছর লন্ডনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খেলাধুলার সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিক। এরই অংশ হিসেবে উইলিয়াম শেক্সপিয়র প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী গ্লোব থিয়েটার আয়োজন করা হয়েছে ‘গ্লোব টু গ্লোব’ উৎসব। এতে শেক্সপিয়র রচিত ৩৭টি নাটক মঞ্চস্থ হবে। তবে এর অভিনবত্ব এই যে, প্রতিটি নাটকই ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় উপস্থাপন করা হবে। শেক্সপিয়রের নাটক নিয়ে এটি এ যাবৎ সবচেয়ে বড় উৎসব।

dhaka_teaterবিশ্বের প্রায় ৬ হাজার ভাষার মধ্য থেকে উৎসবে প্রদর্শনের জন্য  নির্বাচিত ৩৭টি ভাষার  নাটকের মধ্যে আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষাও রয়েছে। বাংলা ভাষার নাট্য উপস্থাপনের জন্য উৎসব আয়োজকরা নির্বাচন করেছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষায় নাট্যচর্চাকারী সহস্রাধিক নাট্যদলের মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়েছে ঢাকা থিয়েটার। বীরমুক্তিযোদ্ধা ও নাট্য-ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফের নিদের্শনায় শেক্সপিয়রের ‘দ্য টেম্পেস্ট’ নাটকটি বাংলা ভাষায় ও বাংলা ঐতিহ্যবাহী আঙ্গিকের মাধ্যমেই মঞ্চায়িত হবে লন্ডনে।

শেক্সপিয়রকে বৈশ্বিক নাট্যকার হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন নাট্যাঙ্গিকের মাধ্যমে তার রচিত নাটকগুলোকে মঞ্চে আনার পরিকল্পনা হিসেবেই ‘গ্লোব টু গ্লোব’ উৎসবের আয়োজন। ঢাকা থিয়েটারের ৩৮ বছরের ঐতিহ্যসংলগ্ন নাট্যচর্চার সামর্থ্যরে কারণেই উৎসব আয়োজক কর্তৃপক্ষ বাংলা ভাষায় শেক্সপিয়র মঞ্চায়নের দায়িত্ব এই নাট্যদলের ওপর অর্পণ করেছে। বাংলাভাষাভাষী প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ কোটি মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আগামী ৭ ও ৮ মে লন্ডনের গ্লোব থিয়েটারে নাট্যমঞ্চায়ন করবে ঢাকা থিয়েটার।

লন্ডনের গ্লোব থিয়েটার কর্তৃপক্ষ ‘দ্য টেম্পেস্ট’ বাংলা ভাষায় মঞ্চায়নের জন্য নির্বাচন করার কারণ হলো এ নাটকটির কাহিনী। জাহাজডুবির শিকার হয়ে রাজা ও তার সফরসঙ্গীরা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে এসে আশ্রয় নেন। সেখানেই কাহিনীর আদি-মধ্য-অন্তসংঘটিত হয়। ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশ’ বিবেচনা করে ‘দ্য টেম্পেস্ট’ কেই তারা বাংলাদেশের জন্য নির্ধারণ করে দেয়।

ঢাকা থিয়েটার বরাবরই বাংলা ঐতিহ্যবাহী নাট্যআঙ্গিককে তাদের প্রযোজনায় প্রাধান্য দিয়ে থাকে। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন ও নাসির উদ্দীন ইউসুফের নেতৃত্বে এই সংগঠনটি দেশজ নাট্যআঙ্গিক নির্মাণে প্রয়াসী। ১৬১১ সালে রচিত শেক্সপিয়র ‘দ্য টেম্পেস্ট’ প্রযোজনাতে দলটি এই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয় নি।

dhakaTheaterরুবাইয়াত আহমেদ অনূদিত‘দ্য টেম্পেস্ট’ নির্দেশনার মাধ্যমে দীর্ঘ চার বছর পর আবার মঞ্চে আসছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। নাটকটির মঞ্চায়নে ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশের মণিপুরী জাতিগোষ্ঠীর নৃত্যকে। তার সঙ্গে রয়েছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের সংমিশ্রণ।

‘দ্য টেম্পেস্ট’-এর নির্মাণ প্রসঙ্গে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, আমরা সবসময়ই আমাদের আদিবাসী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আমাদের নাট্যে সংশ্লিষ্ট করতে চেষ্টা করেছি। এবারের নাট্যপ্রযোজনায় মণিপুরী থিয়েটারের দুই সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি বগুড়া থিয়েটারের রুবেল লোদীকেও দলভুক্ত করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঢাকার বাইরের মেধাবী কোনো অভিনয়শিল্পীকে উৎসাহিত করা। অন্তরালে থাকা আমাদের ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারাকে ঢাকা থিয়েটার সব সময়ই সমকালীনতায় উপস্থাপন করতে চেষ্টা করে। ইউরোপীয় নাটক ‘দ্য টেম্পেস্ট’ প্রযোজনাতেও এই বিষয়ে কোনো আপস করেনি, আদর্শবিচ্যুত হয়নি ঢাকা থিয়েটার। আমরা মনে করি, শেক্সপিয়রের নাটক মঞ্চায়নে এলিজাবেথীয় ধারা অনুসরণ করার কোনো প্রয়োজন নেই।

বাংলার নিজস্ব নাট্যাঙ্গিকের যে আভাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটকে পাওয়া যায়, সেলিম আল দীন যে আঙ্গিককে আধুনিক সময়ে নতুনভাবে সনাক্ত করেছেন, তুলে এনেছেন, যাকে দিয়েছেন তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক ভিত্তি, সেই আঙ্গিকের মাধ্যমেই মঞ্চস্থ হবে ‘দ্য টেম্পেস্ট’।

‘দ্য টেম্পেস্ট’ নাটকটির অনুবাদক রুবাইয়াত আহমেদ বলেন, শেক্সপিয়রের এই বিখ্যাত নাটকটি অনুবাদের ক্ষেত্রে আমি আমার দেশকাল ও সংস্কৃতিকে বিবেচনায় রেখেছি। দেশের ক্ষমতা কাঠামোর অংশীদারিত্বের জন্য যে কূটচাল, আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির আধিপত্য ইত্যাদি বিষয়গুলো নাট্যকাহিনীর সঙ্গে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। পাশ্চাত্যের প্রসেনিয়াম ভিত্তিক রিয়েলস্টিক ধারা পরিহার করেছি। এই কাজটি সেই পাঁচালি আঙ্গিকেই সম্পন্ন হয়েছে, যে আঙ্গিক আমাদের নিজস্ব, হাজার বছর ধরে এই ভূখন্ডে প্রবহমান। নৃত্য, সঙ্গীত, সংলাপ, বর্ণনা প্রভৃতির অদ্বৈত মিশ্রণে ‘দ্য টেম্পেস্ট’ পুনর্নির্মিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমার বিবেচনা এই যে, আমাদের ঐতিহ্যবাহী নাট্যআঙ্গিকের সেই শক্তি রয়েছে যাতে বিশ্বের যে কোনো সৃষ্টি অভিযোজিত হতে পারে।

নাটকটিতে সুর, সঙ্গীত ও পোশাক পরিকল্পনা করেছেন মঞ্চকুসুম শিমূল ইউসুফ। এতে কোরিওগ্রাফি করেছেন শিমূল ইউসুফ, নীলমনি সিনহা ও বিধান সিনহা। শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন ঢালী আল মামুন এবং আলোক পরিকল্পনা করেছেন নাসিল হক খোকন।

আগামী ৭ ও ৮ মে লন্ডনের গ্লোব থিয়েটারে ‘দ্য টেম্পেস্ট’ মঞ্চায়ন করবে ঢাকা থিয়েটার। এর আগে ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে।

‘দ্য টেম্পেস্ট’ এর বিভিন্ন চরিত্র রূপায়ন করছেন, শিমূল ইউসুফ, কামাল বায়েজীদ, শহীদুজ্জামান সেলিম, খায়রুল ইসলাম পাখি, এশা ইউসুফ, চন্দন চৌধুরী, রুবেল লোদী, রফিকুল ইসলাম, সামিউন জাহান দোলা, সাজ্জাদ রাজীব, রুবাইয়াৎ আহমেদ, নীলমনি সিনহা ও বিধান সিনহা। মঞ্চসজ্জায় কাজ করছেন ঢালী আল মামুন। মঞ্চসহযোগী হিসেবে রয়েছেন ওয়াসিম আহমেদ।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় নাটক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সে বিষয়ে আজ আর কারো মনে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। সেই নাট্যচর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন। নাট্যচক্র, নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়, আরণ্যক, ঢাকা থিয়েটার, থিয়েটারসহ আরো বেশকিছু নাট্যদল এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আজ দেশে শত শত নাট্যদল নাট্যচর্চায় ব্যাপৃত। হচ্ছে অনেক ভালো মানের নাটক। সবার মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই বাংলা নাট্য আজ বিশ্বমঞ্চে ঝংকৃত হচ্ছে। আজ শেক্সপিয়রের দেশে ঢাকা থিয়েটারের এই অভিযাত্রা শুধুমাত্র একটি নাট্যদলের একার যাত্রা নয়, বাংলাদেশের যাত্রা, সমগ্র বাংলানাট্যেরই যাত্রা, বাংলানাট্যেরই প্রতিনিধিত্ব করবে তারা।

শেক্সপিয়র ও গ্লোব থিয়েটার :

বিশ্বখ্যাত নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়র ১৫৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল স্ট্যাটফোর্ড অন অ্যাভন শহরের হেনলি স্ট্রিটের একটি বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। সম্ভবত বিশ্বে শেক্সপিয়রের নাটকই সবচেয়ে বেশি মঞ্চস্থ হয়েছে। গ্রিক নাটকের অলঙ্ঘণীয় কাঠামো ভেঙ্গে মানুষের কল্পনার বিস্তারে সাধারণ মানুষ নাটকের চরিত্র হয়ে উঠেছে যে কয়েকজন নাট্যকারের হাতে, শেক্সপিয়র সেই কতিপয়ের একজন। ১৫৯৯ সালে শেক্সপিয়র আরো কয়েকজনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন গ্লোব থিয়েটার। এই থিয়েটারেই একে একে মঞ্চস্থ হয় শেক্সপিয়রের বিখ্যাত নাটকগুলো। তাঁর হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, ওথেলো, কিং লিয়র প্রভৃতি ট্র্যাজেডিগুলো এই মঞ্চেই প্রথম অভিনীত হয়। এসব নানাবিধ কারণে কালক্রমে মঞ্চকর্মীদের অন্যতম তীর্থস্থানে পরিণত হয় এই গ্লোব থিয়েটার।  ১৬১৩ সালে এই থিয়েটারটি আগুনে পুড়ে যায়। তার কিছুকাল পর সেটি পুনর্নিমিত হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ