1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন

কাতার সংকটের পেছনের প্রকৃত রহস্য ও সৌদির আসল রূপ

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭
  • ৪৪ Time View

কাতার সংকটে দুটি বিষয় প্রমাণিত : আরব রাষ্ট্রগুলোর অব্যাহত ভাঙন ও মোটা দাগে সুন্নি মুসলিম ঐক্যের পতন। দুই সপ্তাহ আগে সৌদি সামিটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্বাভাবিক উপস্থিতির কারণেই আরবের এ সংকটের শুরু হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।

শিয়া ইরানিদের সন্ত্রাসে প্রাণহানির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকারের পর সৌদি আরব ও এর অন্য ঘনিষ্ঠ মিত্ররা তাদের প্রতিবেশী ও সম্পদশালী দেশ কাতারের বিরুদ্ধে একযোগে দল বেঁধেছে; সন্ত্রাসের উৎস হওয়ার অভিযোগে। একমাত্র শেক্সপিয়ারের নাটক এ ধরনের চাতুরির বর্ণনা করতে পারে। অবশ্যই শেক্সপিয়ারের কমেডিগুলোও পারে।

আসলে সত্যিকার অর্থে এ ধরনের চরিত্রে বিস্ময়কর কিছু তো আছেই। কাতারের নাগরিকরা অবশ্যই জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে সহায়তা করেন। কিন্তু সৌদি নাগরিকরাও এতে কম যান না। ৯/১১ হামলায় কোনো কাতারিই বিমানযোগে নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে উড়ে যাননি। কিন্তু বিমানের ১৯ ঘাতকের চারজনই সৌদি আরবের ছিল। ওসামা বিন লাদেন কাতারি ছিলেন না। তিনি ছিলেন সৌদি।

কিন্তু ওসামা বিন লাদেনকে কাতারের সম্প্রচার মাধ্যম আল-জাজিরা তার ব্যক্তিগত সম্প্রচারে আনুকূল্য দিয়েছিল। আল-কায়েদা কিংবা তাদের অনুসারী সিরিয়ার জাবহাত আল-নুসরা কি ধরনের মতাদর্শ লালন করে এবং তাদের শান্তির দর্শনের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে লাদেনকে কয়েক ঘণ্টার সম্প্রচারে এনেছিল আল-জাজিরা।

প্রথমত, চলুন এ গল্পের ঐতিহাসিক মজার বিষয়টি থেকে একটু দূরে যাওয়া যাক। দেখা যাচ্ছে, কাতারের সঙ্গে আকাশপথের যোগাযোগ ছিন্ন করেছে ইয়েমেন। কাতারি আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির জন্য এটি এক ধরনের বড় আঘাত। ইয়েমেন যখন সৌদি ও আমিরাতের বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে তখন দেশটির আকাশপথে চলাচলের জন্য মাত্র একটি সেবাযোগ্য বিমানও ছিল না। ইয়েমেনের সেই দুর্দিনে কাতার বিমান যোগাযোগ স্থাপনে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু এখন পুরো একটি আকাশপথ বিচ্ছিন্ন করছে ইয়েমেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালদ্বীপও কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক গুটিয়ে নিয়েছে। মালদ্বীপে পাঁচ বছর মেয়াদি ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি সম্প্রতি সৌদি আরব দিয়েছে; তাতে এটা করা ছাড়া মালদ্বীপের করার কিছুই নেই। মালদ্বীপে একটি পারিবারিক রিসোর্টে সৌদির রাষ্ট্রীয় একটি কোম্পানি ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবের ধর্মীয় স্কলাররা মালদ্বীপে বিশ্বমানের ১০টি মসজিদ নির্মাণে এক লাখ ডলার ব্যয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

এখানে উল্লেখ না করলেও চলবে যে বিশালসংখ্যক আইএস ও অন্যান্য জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর যে সদস্যরা ইরাক এবং সিরিয়ায় পাড়ি জমায় তাদের মধ্যে মালদ্বীপের নাগরিকরাও রয়েছেন। এই মুহূর্তে ছোট্ট দেশকে রক্ষা করার জন্য কাতারি আমিরের পর্যাপ্ত সৈন্য নেই। এখন কাতারের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য রিয়াদের সেনাবাহিনীকে সেদেশে প্রবেশে কী সৌদিকে অনুরোধ জানানো উচিত কাতারি আমিরের? ২০১১ সালে বাহরাইনের বাদশাহকে একই ধরনের অনুরোধ জানিয়েছিল সৌদি আরব। কিন্তু শেখ তামিমের কোনো আশা নেই যে, সৌদি আরবের এ ধরনের আগ্রাসন মোকাবেলায় কাতারে ঘাঁটিতে থাকা বিশাল মার্কিন সেনা এগিয়ে আসবে।

এর আগে কাতারের আমিরের বাবা শেখ হামাদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, কেন তিনি মার্কিনিদের কাতার থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন না। এর জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমি যদি এটা করি, তাহলে আমার আরব ভাইয়েরা আমাকে আক্রমণ করবে। যেমন বাবা তেমন ছেলে। সৃষ্টিকর্তা আমেরিকাকে আশীর্বাদ করুক।

এসব শুরু। সুতরাং আমাদের বিশ্বাস করতে হচ্ছে; যার শুরু হয়েছে কাতার নিউজ এজেন্সির হ্যাকিংয়ের অভিযোগের মাধ্যমে। যেখানে কাতারের আমির বেশ কিছু সত্য মন্তব্য করেছেন। তিনি ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। তবে কাতার এ গল্পের সত্যতা অস্বীকার করেছে। কিন্তু সৌদি আরব বলছে, স্বেচ্ছায় এবং স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিতর্কিত বিষয় (সৌদির ভাষায় ব্যাপক বিরক্তিকর) কাতার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্কে সম্প্রচার করেছে; এটা সত্য। হামবড়া ভাবের আমিরের এই বক্তব্য এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এখন উপসাগরীয় নীতিমালা নিয়ে ভাবছে সৌদি আরব, ছোট্ট কাতারকে নিয়ে নয়। এটা যে ট্রাম্পের সফরের কারণেই হচ্ছে তা কি প্রমাণিত নয়?

কিন্তু সৌদি আরবের দুশ্চিন্তা করার মতো অন্যান্য বিষয়ও আছে। কুয়েত কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেনি। এখন এই দেশটি কাতার, সৌদি আরব ও আমিরাতের মধ্যে শান্তির দূত হিসেবে কাজ করছে। এদিকে দুবাইয়ের আমির আবার ইরানের ঘনিষ্ঠ। দুবাইয়ে হাজার হাজার ইরানি প্রবাসী রয়েছে। এর আগে কাতারবিরোধী অবস্থান খুব কমই নিয়েছিল আবুধাবি।

কয়েক মাস আগে ইরানের সঙ্গে যৌথ নৌ-মহড়া চালিয়েছে ওমান। ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সৌদি আরবকে সহায়তা করতে অনেকদিন আগেই পাকিস্তান সেনা পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। কারণ সৌদি আরব শুধুমাত্র সুন্নি সেনাদের পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছিল; শিয়া সেনাদের নয়। পাক সেনাবাহিনীতে সৌদি আরব যে বিভাজন তৈরি করতে চেয়েছিল; তা বুঝে ফেলে পাকিস্তান। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সৌদি নেতৃত্বাধীন মুসলিম দেশগুলোর সামরিক জোটের প্রধানের দায়িত্ব নিতে জেনারেল রাহেল শরীফ পাক সেনাপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়েছিল।

মিসরের নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থনের জন্য কাতারের বিরুদ্ধে গর্জন করছেন প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি। সিসি মুসলিম ব্রাদারহুডকে আইএসের শাখা বললেও কাতার এখনো এই দলটির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। সৌদির সুরে কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলেও ইয়েমেনের বিপর্যয়কারী যুদ্ধে সৌদিকে সহায়তা করতে কোনো সৈন্য পাঠায়নি মিসর। এছাড়া ইসরায়েল, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাসহ দেশের ভেতরে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জন্য সিসির প্রয়োজন তার সেনাদের।

কিন্তু আমরা এই পথ থেকে যদি অন্যদিকে তাকাই তাহলে এটা দেখা কঠিন নয় যে, আসলে সৌদি আরবের দুশ্চিন্তার পেছনে কী কারণ রয়েছে। সিরিয়ায় আসাদ সরকারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে চলছে কাতার। এর ফলে অবশ্য জাবাত আল-নুসরার হাতে থাকা সিরীয় খ্রিষ্টান সন্যাসীদের মুক্তি মিলছে। এছাড়া সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাতে বন্দী লেবানি সেনাদের মুক্তিতে সহায়তা করছে। সন্যাসীরা যখন জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাচ্ছে তখন তারা কাতার এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের প্রশংসা করছেন।

এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে সন্দেহ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে যে, কাতারের অনেক বড় উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে : যুদ্ধোত্তর সিরিয়ার পুনর্গঠনে অর্থায়ন। এমনকি আসাদ যদি প্রেসিডেন্ট থেকেও যান, কাতারের কাছে ঋণী সিরিয়া দোহার অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে।

এতে ক্ষুদ্রাকৃতির কাতার দুটি সুবর্ণ পুরস্কার পাবে। আল-জাজিরার মিডিয়া সাম্রাজ্য বিস্তারে একটি ভূখণ্ড পাবে। এবং সিরিয়া ভূখণ্ডে কাতারি মূলধন বিনিয়োগের প্রসারণ ঘটবে। এর ফলে অনেক তেল কোম্পানি পাইপলাইন রুট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে সিরিয়াকে অথবা সিরীয় বন্দর লাটাকিয়া থেকে ট্যাঙ্কারে করে তেল সরবরাহ করবে; যা তুরস্ক হয়ে ইউরোপে ঢুকে পড়বে।

ইউরোপীয়দের জন্য এ ধরনের একটি রুট তেল নিয়ে রুশ ব্ল্যাকমেইলের সম্ভাবনা কমিয়ে আনবে এবং সমুদ্রগামী তেল রুটগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সমৃদ্ধির জন্য সৌদি কিংবা কাতার দুই দেশেরই আগ্রহের ঘাটতি নেই। যদি উভয় আমির হামাদ এবং তামিমের ওপর মার্কিন ক্ষমতা সম্পর্কে কেউ বাজি ধরেন; তাহলে তা অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে। সৌদি সামরিক বাহিনী কাতারের সব ধরনের তরল গ্যাস দখলে নিতে রিয়াদকে অনুমতি দেবে। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই শান্তিকামী ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ সৌদি এক মুহূর্তের জন্য হলেও মাথা কাটতে ভুলে যাবে। এবং এক আরব ভাইয়ের এ ধরনের ভাগ্যের জন্য কখনো চিন্তা করবে না।

সুতরাং চলুন সেই মুহূর্তের জন্য স্বপ্ন দেখি!

সূত্র : দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, এএফপি, রয়টার্স।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ