আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আইন বাস্তবায়ন হবে জানিয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ভ্যাট হার বহু রকমের হবে না। একই হবে। বর্তমানে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। প্রস্তাবিত এই হার আরও কমবে। আগামী ২৫-২৬ তারিখের বৈঠকে এ হার চূড়ান্ত করা হবে। এরপর গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আজ রবিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
এসময় তিনি বলেন, ‘১ জুলাই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। তবে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ হবে না এর চেয়ে কমানো হবে। ভ্যাট কমিয়ে আগামী ২৫ অথবা ২৬ মে নতুন হার নির্ধারণ করে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।’
“ভ্যাটের হার কমবে বলে জানিয়েছেন, এখনও কি সেই সিদ্ধান্তেই আছেন”- এমন প্রশ্নে মুহিত বলেন, ‘ইয়েস ইয়েস ইয়েস অফকোর্স। …ইট উইল বি ফাইনালাইজড অন দি টুয়েন্টিফিফথ অর টুয়েন্টিসিক্সথ।’
ভ্যাটের একটি হারই থাকবে এবং ভ্যাট আইন আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এত যখন আপত্তি আছে, সেটা কমানোর ব্যবস্থা হবে। আগামী ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে। এটাই স্বাভাবিক কারণ বাজেট ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়।’
ভ্যাট হার কমাতে প্রধানমন্ত্রী কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনি তো অনেক বিষয়েই পরামর্শ দেন। তবে ভ্যাট হার কমানোর বিষয়ে কোনো পরামর্শ দেননি।’
ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আপনাকে কোনো দায়িত্ব দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মুহিত বলেন, ‘না, নাথিং স্পেশাল। আমিই সব সময় রিপোর্ট করে আসছি। ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া অবহিত করছি।’
তিনি বলেন, ভ্যাট আইন ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়েছে। একটু একটু করে বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু এটার ওপর হঠাৎ কেন হুমকি? দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হবে কেন বলা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।
ইসলামী ব্যাংক সংক্রান্ত এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই ব্যাংকের বোর্ডে যে সমস্যা চলছে তাতে সরকারের হস্তক্ষেপ করার মতো এখন পর্যন্ত কোনো কারণ নেই। এটি দেখবে ব্যাংক পরিচালনা বোর্ড। বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য ভালো। সুতরাং সরকারের নথি দেয়ার কিছু নেই।’
ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তন নিয়ে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-আইডিবি সম্মেলনে কোনো কথা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তন স্বাভাবিক। এনিয়ে নতুন কোনো আলোচনা হয়নি। আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধি নিয়ে আইডিবি’র নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি।’
আইডিবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংক নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটি খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তাদের কাছে। এটি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে আইডিবির একটি বিনিয়োগ আছে, সেটি ইসলামী ব্যাংকে। এ বিনিয়োগ তারা তুলে নিচ্ছে।’
ইসলামী ব্যাংকের বোর্ডে সৃষ্ট বিতর্কের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই। ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আমার সচিব ছিল, সে দক্ষ। ফলে কোন কারণ সেখানে হস্তক্ষেপ করার? তবে আইডিবি থেকে কোনো অভিযোগ দেয়া হলে, সরকার তখন হস্তক্ষেপ করবে।’
মুহিত বলেন, ‘কয়েকদিন আগে সৌদি আরবে আইডিবি’র বৈঠক হলেও বাংলাদেশের কোনো একটি কাগজে (পত্রিকা) এ সম্পর্কে একটি কথাও নেই। এটি আমার কাছে আশ্চর্য মনে হয়েছে। কী করে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা হচ্ছে!’
এর আগে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিশেন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বীমা গ্রাহকের বোনাসের ওপর থেকে কর প্রদান অব্যাহতি, বীমা কোম্পানির বার্ষিক নিবন্ধন নবায়ন ফি মওকুফ, স্বাস্থ্য বীমা প্রিমিয়ামকে আয়কর আইনের অধীনে কর অব্যাহতি, এজেন্ট কমিশনের বিপরীতে উৎস কর রহিতকরণ এবং কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব দেয়।
এ সময় অর্থমন্ত্রী বীমা নিবন্ধন নবায়ন ফি মওকুফ ও কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর আশ্বাস প্রদান করেন। সম্প্রতি জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) বার্ষিক বৈঠকের বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন তিনি।