1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪১ পূর্বাহ্ন

ইন্টারনেটের স্বাধীনতা হুমকির মুখে

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১২
  • ৫৮ Time View

আজ থেকে তিন দশক আগে উন্মুক্ততা এবং সার্বজনীন প্রবেশগম্যতা এই নীতি ইন্টারনেট সৃষ্টির একটা শক্ত ভিত্তি নির্মাণ করেছিল। কিন্তু এই নীতি এখন এতোটাই হুমকির মুখে যে এর আগে এমনটি কখনো হয়নি।

এই মত দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বের সবচে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সেরগেই ব্রিন।

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে ব্রিন এসব কথা বলেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘একটি ক্ষমতাশালী মহল রয়েছে যারা নানা দিক থেকে এবং সারা বিশ্বে উন্মুক্ত ইন্টারনেটের বিরুদ্ধে একাট্টা। এই মুহূর্তে আমি খুবই উদ্বিগ্ন, ইন্টারনেটের স্বাধীনতা নিয়ে এতোটা উদ্বেগ এর আগে আমার হয়নি। এটা একটা ক্ষতের মতো।’

ব্রিনের দাবি, ইন্টারনেটের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে হুমকিটা আসছে সমন্বিতভাবে কয়েকটি পক্ষ থেকে। সরকারগুলো তাদের নাগরিকদের মধ্যে যোগাযোগ এবং তাদের ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে আর তাদের এ প্রচেষ্টা দিন দিন বাড়ছে। বিনোদন শিল্প ইন্টারনেটে পাইরেসির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে এবং সেই সঙ্গে ফেসবুক এবং অ্যাপলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণপ্রবণ আচরণ তো রয়েছেই। কোন সফটওয়্যারটি তাদের পরিসেবার আওতায় বাজারে আসবে তা তারা খুব কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

ইন্টারনেটে সেন্সরশিপ আরোপ এবং সাইবার হামলা নিয়ে উদ্বেগ বশতঃ ২০১০ সালে চীন থেকে গুগলের কার্যক্রম আংশিক বন্ধ করে দেওয়ার পেছনে ব্রিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়।

৩৮ বছর বয়সী এ বিলিয়নেয়ারের পরিবার সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসে তখন তার বয়স মাত্র ছয় বছর। যুক্তরাষ্ট্রেই গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক করেন তিনি। পরে বন্ধু ল্যারি পেজের সঙ্গে সার্চ এঞ্জিন গুগল উদ্ভাবন করেন।

অতীতের ভুল ধারণার কথা উল্লেখ করে ব্রিন বলেন, তিনি ধারণা করেননি যে, চীন বা অন্য কোনো দেশ ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ আরোপ খুব বেশি দিন কার্যকর রাখতে পারবে। কিন্তু এখন তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্রিন বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এ ভূতটাকে আবার বোতলে ভরার আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, নির্দিষ্ট কিছু দেশে এই ভূতটাকে আবার বোতলে ভরা হয়েছে।’

চীন, সৌদি আরব এবং ইরানের মতো দেশ যারা ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর সেন্সরশিপ এবং বিধিনিষেধ আরোপের যে চেষ্টা করছে তাদের ব্যাপারে সবচে উদ্বিগ্ন ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন সেরগেই ব্রিন। তবে এখন ফেসবুক এবং অ্যাপল নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে এবং ব্যবহারকারীদের প্রবেশগম্যতার ওপর যেভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে সে ব্যাপারেও সতর্কবাণী শুনিয়েছেন ব্রিন।

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘এভাবে চললে অনেক কিছু হারাতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, সব তথ্য অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে থাকে- এসব তথ্য আপনি চাইলেও সার্চ করতে পারবেন না।’

সেসময় ইন্টারনেট ফেসবুক প্রভাবিত থাকলে গুগল সৃষ্টি সম্ভব হতো না বলে মনে করেন ব্রিন। তিনি বলেন, আপনাকে তাদের নিয়ম মতো চলতে হবে। আর এসব নিয়ম আসলেই খুব নিয়ন্ত্রিত। বিপরীত পক্ষে সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলে এরকম কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বলে দাবি করেন তিনি।

ইন্টারনেটের স্বাধীনতার ব্যাপারে সেরগেই ব্রিনের উদ্বেগ উপেক্ষা করার মতো নয়। ভিন্ন মত প্রকাশ বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট এবং ব্লগে সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং পাইরেসি ঠেকানোর নামে অনেক ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তোড়জোড় ব্রিনের উদ্বেগেরই প্রতিফলন ঘটায়।

যেমন- সম্প্রতি পাইরেট ওয়েবসাইট বন্ধ করতে আইন করার জন্য চেষ্টা করছে হলিউড, ব্রিটিশ সরকার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা করছে।

চীনে এখন বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে সবচে বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। দেশটির সরকার সম্প্রতি ‘প্রকৃত পরিচয়’ প্রকাশ বাধ্যতামূলক করে নতুন আইন করেছে। সরকারের সমালোচনামূলক মাইক্রোব্লগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের লক্ষ্যেই এ আইন করেছে তারা। রাশিয়াতে পুতিন বিরোধী বিক্ষোভের জন্য ব্লগের ভূমিকাকেই বড় করে দেখা হচ্ছে। এদিকে ইরান এই গ্রীষ্ম থেকেই ‘ন্যাশনাল ইন্টারনেট’ নামে নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট চালুর পরিকল্পনা করেছে।

সম্প্রতি সিরিয়াতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিরোধী আন্দোলনেও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের ব্যাপক অবদান রয়েছে।

একারণেই সারা বিশ্বে সরকারগুলো এই শক্তিশালী মাধ্যমটিকে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। ব্রিন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘এটা শুধু চীন বা উত্তর কোরিয়াতে হচ্ছে না। আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রে এ ব্যাপারে কংগ্রেসে বিল আনা হয়েছে। এছাড়াও ইতালিসহ বিশ্বজুড়েই এখন ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রক্রিয়া ও প্রচেষ্টা চলছে।’

এখানে পাইরেসি ঠেকানোর দোহাই দিয়ে পাইরেট ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়ার বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কয়েক মাস আগে Sopa ও Pipa নামে দু’টি বিল আনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে তার কথা উল্লেখ করেছেন ব্রিন। তবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিল দু’টি পরে স্থগিত করা হয়।

গুগলও যে এমন বাধ্যবাধকতার শিকার হচ্ছে সে কথা স্বীকার করেছেন গুগল সহ-প্রতিষ্ঠাতা সেরগেই ব্রিন। তিনি বলেছেন, অনেক মানুষ এখন এই ভেবে উদ্বিগ্ন যে তাদের তথ্য মার্কিন কর্তৃপক্ষের হাতে যাচ্ছে কারণ এগুলো গুগল সার্ভারে রয়েছে। ব্রিন স্বীকার করেন, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে গুগল যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিতভাবে তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য থাকে। তবে গুগলের পক্ষ থেকে এটা ব্যবহারকারীদের জানানো হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ