1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০৫ অপরাহ্ন

আবারো আন্দোলনে নামছেন শিক্ষকরা

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫
  • ১০৯ Time View

1113অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হয়ে আবারো আন্দোলনে নামছেন বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। বঞ্চিত শিক্ষকদের দাবি পূরণে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস অর্থমন্ত্রী নাকচ করে দেয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে। যে কারণে এবারের আন্দোলন আরো দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে আবারো আন্দোলনের প্রভাবে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে অভিমত শিক্ষাবিদদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট জারি করে সরকার। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে একে একে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আগে থেকেই এ বেতন কাঠামোর বিরোধী শিক্ষকরা। এবার নতুন বেতন কাঠামোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবির প্রতিফলন না হওয়ায় গত মঙ্গলবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

সংগঠনের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান অবস্থায় অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত হলে সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর তুলনায় গ্রেড-১ প্রাপ্ত শিক্ষকদের সংখ্যা অর্ধেক কিংবা তারও নিচে নেমে আসবে। গ্রেড-১ প্রাপ্ত শিক্ষকদের থেকে সুপার গ্রেডের ২য় ধাপে যাওয়ার কোনো সুযোগ ও নির্দেশনা  পরিলক্ষিত হয়নি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, জাতীয় অধ্যাপকদের জ্যেষ্ঠ সচিবদের পর্যায় এনে এই বরেণ্য ব্যক্তিদের যেমন অপমান করা হয়েছে, তেমনি তাদের পে-স্কেলে আনার এই প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে জাতীয় বেতন কাঠামোকে করা হয়েছে বিতর্কিত। এ বেতন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তি অনাকাঙ্খিত ও জাতির জন্য লজ্জাজনক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, গত ৬ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিরা। এ সময় অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের দাবিসমূহ পূরণের সুস্পষ্ট আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকাশিত গেজেটে তার কোনো প্রতিফলন হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মসূচি :
আগামী ২৭ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে সংবাদ সম্মেলন, ২ জানুয়ারির আগে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ, ২ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবনে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে সাধারণ সভা এবং সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা।

ক্ষুব্ধ বিসিএস সাধারণ শিক্ষকরা :
বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকদের অভিযোগ, নতুন বেতন কাঠামোতে অধ্যাপকদের পদমর্যাদা ও বেতনক্রমের অবনমন করা হয়েছে। সিলেকশন গ্রেড বাতিলের ফলে অধ্যাপকদের চতুর্থ গ্রেড থেকেই অবসরে যেতে হবে। ফলে মর্যাদা ছাড়াও বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। সরকারের এ ব্যবস্থা ‘সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার সামিল’ বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক শিক্ষক।

গত ১ জুলাই থেকেই পঞ্চম গ্রেডের সহযোগী অধ্যাপকদের অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে তৃতীয় গ্রেডের বেতন প্রদানসহ নায়েম মহাপরিচালক, এনসিটিবি চেয়ারম্যান, সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা সদরের অনার্স ও মাস্টার্স কলেজের অধ্যক্ষের পদকেও গ্রেড-১ এ উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সংগঠনের সভাপতি নাসরীন বেগম অষ্টম পে-স্কেলে সরকারি কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে ‘প্রতারণা করা হয়েছে’ বলে  অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পঞ্চম থেকে সরাসরি তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেডের সহযোগী অধ্যাপকরা পদোন্নতি পেয়ে চতুর্থ গ্রেডে অধ্যাপক হতেন। চতুর্থ গ্রেডের অধ্যাপকদের অর্ধেক সিলেকশন গ্রেড পেয়ে তৃতীয় গ্রেড পেতেন। কিন্তু নতুন বেতন কাঠামোর গেজেটে এসব বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। তাদের সঙ্গে রীতিমত প্রতারণা করা হয়েছে।

এদিকে বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ৪ ও ৫ জানুয়ারি সরকারি কলেজের শিক্ষকরা পরীক্ষা বর্জনসহ পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করবেন বলে আল্টিমেটাম দিয়েছেন। দুই দিন কর্মবিরতি পালনের পর ২২ জানুয়ারি ঢাকায় সমিতির সাধারণ সভায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও জানানো হয়েছে।

আন্দোলনে যাচ্ছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা :
নতুন বেতন কাঠামোতে ৪০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে দাবি বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতাদের। অবিলম্বে শিক্ষকদের গেজেটেড মর্যাদাসহ বেতন নির্ধারণের মাধ্যমে এ জটিলতা দূর করা না হলে আবারও আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা। গত শুক্রবার সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি জুলফিকর আলী ও সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুল ইসলাম তোতার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ আল্টিমেটাম দেয়া হয়।

প্রধান শিক্ষকদের অভিযোগ :
২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা এবং সহকারী শিক্ষকদের এক ধাপ বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়ার কারণে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে তাদের টাইম স্কেল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যেসব প্রধান শিক্ষক সপ্তম জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী আট হাজার টাকা স্কেলে বেতন পেতেন, তাদের বেতন ১৬ হাজার টাকার স্কেল (দশম ধাপে) হওয়ার কথা। কিন্তু তাদের বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা স্কেলে (এগারোতম ধাপে) নির্ধারণ হয়েছে। এতে নতুন ৪০ হাজার প্রধান শিক্ষক প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা করে কম পাবেন।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের মহাসমাবেশ :
ছয়দফা দাবি আদায়ে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

সংগঠনটির সভাপতি শাহিনুর আল আমীন জানান, তারা দীর্ঘ দিন ধরে বেতনসহ নানা ধরণের পেশাগত বৈষম্যের শিকার। এ দাবি আদায়ে শহীদ মিনারে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সংগঠনের সভায়।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো :
সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে পুন:নির্ধারণ, প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বন্ধ করে সহকারী শিক্ষক পদ থেকে নিয়োগ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে মহাপরিচালন পদ পর্যন্ত শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি, নিয়োগ বিধিমালা পরিবর্তন করে নারী-পুরুষের জন্য ন্যূনতম স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি যোগ্যতা নির্ধারণ, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা ও সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু, টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল করে দ্রুত পদন্নোতির ব্যবস্থা করা এবং অর্জিত ছুটির বিধান প্রণয়ন করা।

অনিশ্চিত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পে-স্কেল :
নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী সরকারি অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত ১ জুলাই থেকে দেশের প্রায় পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীকে সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। গত ২০ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপণ জারি করেছে। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে সঠিক সময়ে এই অর্থ প্রাপ্তি নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, আমাদের সম্পদ বাড়েনি কিন্তু নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উচ্চস্তরে ওঠার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বিসিএস ক্যাডারের শিক্ষকদের মনে কষ্ট রয়েছে। আমি শিক্ষকদের পক্ষে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের স্বার্থের পক্ষে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও বিসিএস শিক্ষকদের টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারা (শিক্ষকরা) যেন সর্বোচ্চ পদে যেতে পারেন সে পথ খোঁজা হচ্ছে।

নতুন বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের দাবি পূরণের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, তাদের (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা) দাবি একেবারেই অজ্ঞতাপ্রসূত। আমি তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে বেতন কাঠামো ঠিক করেছি। জাতীয় অধ্যাপক বলে কিছু নেই। তাদের কোনো স্কেলও নেই। এটা একটা সম্মান।

তিনি আরো বলেন, এ জন্য আগেও ৪০ হাজার টাকা সম্মানি দেওয়া হত, এখনো আগের মতোই আছে। এটা আলাদা করার কিছু নেই। এরই মধ্যে অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কারো দাবি-দাওয়া আর মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। নতুন বেতন পেলে সবাই সন্তুষ্ট হবেন।

প্রসঙ্গত, নতুন বেতন কাঠামোর খসড়া ঘোষণার পর থেকেই শিক্ষকরা দাবি আদয়ে দীর্ঘদিন পাঠদান বন্ধ করে আন্দোলন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে অর্থমন্ত্রী কটাক্ষ করায় সারাদেশে সামলোচনার ঝড় ওঠে। এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী ক্ষমাও চান।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ