ফেসবুক ও টুইটারের সুপরিচিত শিল্পী আবিদা

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস প্রবাসী বাঙালী গায়িকা ড. আবিদা আক্তার। তিনি মূলত গজল ও ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীতশিল্পী। সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুপরিচিত। জনপ্রিয় এই দুটি সাইটে তার গাওয়া গানের ভিডিও ক্লিপিংস সর্বাধিক আপলোড হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

সম্প্রতি লন্ডনের বিশ্বখ্যাত বার্তা সংস্থা বিবিসিতে তার একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আমেরিকার বেশ কিছু ম্যাগাজিনের পাশাপাশি লন্ডন, লাহোর ও ইসলামাবাদের একাধিক পত্রিকা তাকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ছোটবেলায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিশুকিশোর প্রতিযোগিতা নতুন কুড়িতে অংশ নিয়েছিলেন আবিদা। ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় তিনি ক্ল্যাসিক্যাল গানে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। বাংলাদেশ মেডিকাল কলেজ থেকে ১৯৯৫ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি নেওয়ার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে চিকিৎসক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার পাশাপাশি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন।

২০০৫ সালে টেক্সাস হেলথ সাইন্স সেন্টার অফ সেন অ্যান্টিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গেরিয়াটিক মেডিসিন, প্যালিয়াটিভ মেডিসিন এবং ইন্টারনাল মেডিসিন হসপিটালিষ্ট বিভাগ থেকে এমডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে টেক্সাসের হোস্টনের ব্যস্ততম চিকিৎসক তিনি।

বৃদ্ধদের চিকিৎসা সেবায় নিজেকে আবিদা নিয়োজিত করেছেন। পাশাপশি আরো ৬টি সাধারণ হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। একই সঙ্গে হোষ্টনে টেক্সাসে লঙ পয়েন্ট ড্রাইভে তার পারিবারিক মালিকানায় গেরিয়াটিক ক্লিনিকও পরিচালনা করেছেন। অনলাইন জরিপে ডক্টর আবিদার জ্ঞান ও কর্মজীবনের মেধা এবং একনিষ্ঠতার কথা বিবেচনা করে ৫ এর মধ্যে ৪.৩ স্কোর দেওয়া হয়েছে। কর্মজীবনের ব্যস্ততার মধ্যেই তিনি ঘরে বসে সঙ্গীত চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাঙালীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আবিদা নিয়মিত শিল্পী। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের জনপ্রিয় শিল্পীরা আমেরিকা সফরে গেলে তাদের সঙ্গেও ডা. আবিদাকে প্রায়ই পারফর্ম করতে দেখা যায়। বাংলা, উর্দু ও হিন্দি ক্ল্যাসিক্যাল আর গজল গেয়ে তাকে অনুষ্ঠান মাতিয়ে তোলেন। ডক্টর আবিদার ক্লাসিক্যাল মিউজিক ও গজল চর্চার প্রতি গভীর অনুরাগ ও ভক্তি দেখে বিখ্যাত গজল শিল্পী মেহেদী হাসান তার প্রশংসা করেছেন।

২০০৯ সালে আমেরিকার হোষ্টনের জজ ব্রাউন কনভেনশনাল হলে অনুষ্ঠিত প্রথম ফোবানা সম্মেলনে ডক্টর আবিদা ক্লানিক্যাল সঙ্গীত ‘আমি যে তোমার’ গানটিতে পারফর্ম করে প্রশংসিত হন।

ইউটিউবে খোঁজ করলে আবিদার কমপক্ষে ৫০টি মিউজিক ভিডিও পাওয়া যাবে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গান হলো ‘আমার এই দুটি চোখ পাথর তো নয়’, পৃথিবীর যত সুখ, ‘শুধু তোমায় ভেবে ভেবে’, আমি যে তোমার’, ‘আমার চোখের জলের মাঝে’, ‘ যেভাবে তুমি সকাল দেখ’, ‘তুমি বললে আকাশ হব’, ‘মেরা মাওলা কারাম হো কারাম’, ‘ হাম সে বাদাল গেয়ে’, ‘যাব সে তুনে মুঝে’, ‘লাগা চুনড়িমে দাগ’, ‘রাফতা রাফতা ও মেরি’, ‘বেবাফা ইউ তেরি মুসকারানা’, হামারে সাসো মে আজ তাক’ , ‘আপ জিনকে কারিব হোতে হে’, ‘সাওয়ান আয়ে সাওয়ান যায়ে’, ‘কাভি খুদ পে’, ‘তেরি দিওয়ানি’, ‘তোম জিদ তো কার রাহে হো’ প্রভৃতি।

ড. আবিদার বিয়ে হয় ইঞ্জিনিয়ার মো: নূরুল আক্তারের সঙ্গে। নূরুল আক্তার হোষ্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিরিয়ারিং ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পেশায় ব্যবসায়ী হলেও আবিদার সঙ্গীত চর্চায় তিনি উৎসাহ-উদ্দিপনার যোগান দিয়ে চলেছেন। ১৫ বছর বয়সী নিকি এবং ৭ বছর বয়সী কাইয়ানা নামে দুটি কন্যা সন্তানের মা ডক্টর আবিদা আক্তার। মেয়েদেরও তিনি সঙ্গীত চর্চায় আগ্রহী করে তুলেছেন।

চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় তিনি রোগীদের গান শুনিয়ে সুস্থ করে তোলেন কিনা, তা অবশ্য জানা যায় নি।

বিনোদন