1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ কি এখন পালাবেন?

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৫
  • ১০৫ Time View

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ বা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড সেখানকার ইকুয়েডর দূতাবাসের 14সামনে থেকে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরা স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়ার পর প্রশ্ন জাগছে, তিন বছরের বেশি সময় ধরে ওই দূতাবাসে আটকে থাকা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বন্দিদশার অবসান কি শেষ পর্যন্ত ঘটতে যাচ্ছে? এখন কি ধারণা করা যায় যে অ্যাসাঞ্জের ব্যাপারে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছে? অথবা ভেতরে-ভেতরে কি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জ ও ইকুয়েডর সরকারের কোনো ধরনের বোঝাপড়া চলছে? অথবা অ্যাসাঞ্জের ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসন কি তার কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে?
মোট কথা, অ্যাসাঞ্জের ওপর থেকে সার্ব​ক্ষণিক পুলিশি নজরদারি সরিয়ে নেওয়া তাঁর অবস্থা পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত বহন করে কি না?
স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১২ সালের জুনে অ্যাসাঞ্জকে সুইডিশ সরকারের কাছে প্রত্যর্পণ করার মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণার ঠিক আগে তিনি তাঁর জামিনের শর্ত ভেঙে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে ঢুকে পড়েন এবং ইকুয়েডর সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন।তিনি ধরে নিয়েছিলেন, মামলায় হেরে যাচ্ছেন, ফলে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে সুইডিশ সরকারের হাতে প্রত্যর্পণ করবে এবং সুইডিশ সরকার তাঁকে তুলে দেবে আমেরিকান সরকারের হাতে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গোপনীয় কূটনৈতিক নথির বিশাল এক ভান্ডার উইকিলিকস ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফাঁস করে দেওয়ার কারণে মার্কিন সরকার গুপ্তচরবৃত্তিসংক্রান্ত আইনে তাঁর বিচার করবে এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেবে।অর্থাৎ​ মৃত্যুদণ্ড এড়ানোর উদ্দেশে তিনি লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছেন।
তখন থেকে লন্ডনের পুলিশ ওই দূতাবাসের সামনে সার্বক্ষণিক প্রহরা বসায়; উদ্দেশ্য অ্যাসাঞ্জের নিরাপত্তা রক্ষা করা নয়, বরং তিনি দূতাবাসের বাইরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তার করে সুইডেনে পাঠিয়ে দেওয়া।
কিন্তু তিন বছর ধরে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা তক্কে তক্কে থেকে লন্ডন পুলিশের কোনো লাভ হয়নি, বরং লোকসান হয়েছে বিরাট।তারাই হিসাব দিয়েছে, অ্যাসাঞ্জকে পাকড়াও করার উদ্দেশ্যে ইকুয়েডর দূতাবাসের সামনে সার্বক্ষণিক প্রহরার পেছনে এ বছরের এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত তাদের খরচ হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড।এই নিষ্ফল কাজে তারা আর অর্থ ব্যয় করতে চায় না, তাই পুলিশ প্রহরা সরিয়ে নিয়েছে।
যদি এমন হয় যে, শুধু পুলিশ প্রহরার কারণেই অ্যাসাঞ্জ ওই দূতাবাস থেকে বেরোতে পারছিলেন না, তাহলে এখন সে বাধা দূর হলো। এখন কি তিনি বেরোবেন? বিমানবন্দরে গিয়ে ইকুয়েডরগামী বিমানে উঠে বসবেন? এবং সেই বিমান তাঁকে সহিসালামতে ইকুয়েডরে নামিয়ে দেবে? পুলিশ প্রহরা সরিয়ে নেওয়ার মানে কি এই যে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অ্যাসাঞ্জকে তাঁর আশ্রয়দাতা দেশ ইকুয়েডরে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিল? নাকি ব্যাপারটা এমন হয়ে থাকতে পারে যে, অ্যাসাঞ্জ ও ইকুয়েডর দূতাবাসের সঙ্গে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের গোপনে এমন একটা বোঝাপড়া হয়েছে যে দূতাবাসের সামনে থেকে পুলিশ সরিয়ে নেওয়া হবে, তারপর অ্যাসাঞ্জ সেখান থেকে বেরিয়ে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন?
গত বছরের আগস্টে ব্রিটিশ পত্রপত্রিকায় এমন একটা খবর বেরিয়েছিল যে, অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, তিনি শিগগিরই দূতাবাস থেকে বের হচ্ছেন।কিছু পত্রপত্রিকা লিখেছিল, অ্যাসাঞ্জ বলেছেন তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। কিন্তু দৈনিক গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত এক খবরে অ্যাসাঞ্জকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছিল, তিনি ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে বেরোবেন বটে, তবে ‘মারডক প্রেস’ আর ‘স্কাই নিউজ’ যেভাবে বলছে, ব্যাপারটা সেভাবে ঘটবে না।অর্থাৎ​ তিনি আত্মসমর্পণ করবেন, এই কথা সত্য নয়, তবে তিনি দূতাবাস থেকে বেরোবেন। তাঁর বন্ধু-সহযোদ্ধা ও উইকিলিকসের আনুষ্ঠানিক মুখপাত্র স্ক্রিস্টিন হ্রাফন্সনকে গার্ডিয়ান সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিল, অ্যাসাঞ্জ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন কি না। উত্তরে হ্রাফন্সন সোজাসাপটা বলে​ দিয়েছিলেন ‘না’। তবে তিনি এই কথা স্পষ্ট করেই বলেছিলেন যে, পুলিশ প্রহরা সরিয়ে নেওয়া হলেই অ্যাসাঞ্জ ওই দূতাবাস থেকে বেরিয়ে যাবেন। তাঁর ব্যাগ-বোঁচকা গোছানো হয়ে গেছে।
তার এক বছরেরও বেশি সময় পর অবশেষে পুলিশ প্রহরা উঠে গেল। তাহলে কি অ্যাসাঞ্জ এখন সেখান থেকে বেরোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন? উইকিলিকস, অ্যাসাঞ্জ বা ইকুয়েডর দূতাবাস পুলিশ প্রহরা সরে যাওয়ার পর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তারা কী পরিকল্পনা করছে, ভেতরে-ভেতরে কোনো বোঝাপড়া চলছে কি না-তা বোঝার কোনো উপায় নেই।তবে নানা রকমের জল্পনা-কল্পনা ডালপালা ছড়াচ্ছে। অবশ্য জল্পনা-কল্পনা চলছে তিন বছর ধরেই।যেমন, অ্যাসাঞ্জ ছদ্মবেশে দূতাবাস থেকে ​বেরিয়ে ইকুয়েডর চলে যাবেন, তাঁকে কূটনৈতিক স্যুটকেস কিংবা ব্যাগে ভরে ইকুয়েডরে পাচার করে দেওয়া হবে, ওই দূতাবাসের ছাদ থেকে আশপাশের অন্যান্য ভবনের ছাদ দিয়ে তাঁকে কাছের কোনো হেলিপ্যাডে নেওয়া হবে, সেখান থেকে তিনি উড়ে যাবেন গোপন কোনো স্থানে, অথবা ছদ্মবেশে তিনি দূতাবাস থেকে বেরিয়ে গিয়ে ঢুকে পড়বেন অদূরের হ্যারডস ডিপার্টমেন্টাল স্টোর নামের বিশাল বিপণি কমপ্লেক্সে, সেখানে হাজার হাজার ক্রেতার ভিড়ে তিনি হারিয়ে যাবেন, কিংবা ইকুয়েডর তাঁকে জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দেবে, তিনি কূটনৈতিক সুরক্ষা ব্যবহার করে লন্ডন থেকে বেরিয়ে যাবেন, ইত্যাদি।কিন্তু গত তিন বছরে এসবের কিছুই ঘটেনি। অ্যাসাঞ্জ আদৌ ওই দূতাবাস থেকে পালানোর চেষ্টা করেছেন কি না-সেটাও জানা যায়নি।এসবের কোনো একটা উপায় যদি তিনি বা তাঁর আশ্রয়দাতারা আসলেই ভেবে থাকেন, আর সার্ব​ক্ষণিক পুলিশ প্রহরার কারণেই যদি তা সম্ভব না হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশ প্রহরা উঠে যাওয়ার পর সেরকম চেষ্টার পথ খুলে গেল।এক বছর আগে অ্যাসাঞ্জ যে বলেছিলেন, তিনি আত্মসমর্পণ করবেন না, কিন্তু দূতাবাস থেকে বেরিয়ে আসবেন-সেটার মর্মার্থ তাহলে কী ছিল? ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া অ্যাসাঞ্জের এই বন্দিদশার অবসানের একটা স্বাভাবিক পথ হতে পারে বোঝাপড়া। কিন্তু ব্রি​টিশ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বা ব্রিটিশ-মার্কিন সম্পর্কে এমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি যে ব্রিটেন অ্যাসাঞ্জকে ইকুয়েডরে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে। তাঁর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মনোভাব নমনীয় হওয়ারও কোনো কারণ ঘটেনি।
বরং এড​ওয়ার্ড স্নোডেনের মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার বিপুল পরিমাণ ‘টপ সিক্রেট’ নথিপত্র ফাঁস করে দেওয়া এবং অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে স্নোডেনের সুসম্পর্কের কারণে অ্যাসাঞ্জের প্রতি মার্কিন কর্তৃপক্ষের ক্রোধ আরও বেড়ে যাওয়ার কথা।তা ছাড়া, অ্যাসাঞ্জ ও স্নোডেনদের মতো প্রবল রাজনৈতিক আদর্শবাদী হুইসলব্লোয়ারদের গোপনীয়তা-বিরোধী সংগ্রাম ব্রিটেন-আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের শাসক, সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান ও করপোরেট মালিকদের বিরাট মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।একুশ শতকের সমস্ত যোগাযোগপ্রযুক্তি ও মাধ্যমের ওপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তারা পৃথিবীটাকে যেভাবে অরওয়েলীয় রাজ্যে পরিণত করতে চাইছে, অ্যাসাঞ্জ-স্নোডেনরা তাতে প্রবল বাধা সৃষ্টি করছেন।উপরন্তু অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে ভ্লা​দিমির পুতিনের সুসম্পর্ক এবং স্নোডেনকে রাশিয়ায় আশ্রয়দানের মধ্য দিয়ে ভূরাজনৈতিক বিভাজনে অ্যাসাঞ্জ ও স্নোডেনের অবস্থান চলে গেছে পশ্চিম-বিরোধী শিবিরে।পশ্চিমা শাসকদের বিচারে অ্যাসাঞ্জ ও স্নোডেন নিজেরা যেমন শত্রু, তেমনি তাঁরা কাজও করছেন আরও বড় শত্রুপক্ষের হয়ে​।
ফলে, লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসের সামনে থেকে পুলিশ প্রহরা সরে যাওয়ার পরেও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বন্দিদশার আশু অবসান স্বাভাবিক পন্থায় প্রত্যাশা করা বাস্তবসম্মত বলে মনে হচ্ছে না।অন্ততপক্ষে ২০২০ সাল পর্যন্ত তাঁকে ওই দূতাবাসেই কাটাতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে সুইডেনের দুই নারীর করা অভিযোগগুলোর মধ্যে দুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, একটি অভিযোগ (ধর্ষণ) এখনো বহাল আছে। সুইডিশ প্রসিকিউশন তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র এখনো তৈরি করতে পারেনি, সে জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।সেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তারা অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাজ্য থেকে সুইডেনে নিয়ে যেতে চায়।কিন্তু অ্যাসাঞ্জ মনে করেন, জিজ্ঞাসাবাদ একটা অজুহাত মাত্র, সুইডিশ সরকার তাঁকে কবজায় পেয়ে চায় আসলে তাঁকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।
২০২০ সালের মধ্যে সুইডিশ প্রসিকিউশন অ্যাসাঞ্জকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারলে সে দেশের আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগও তামাদি হয়ে যাবে।তাহলে কি সে পর্যন্ত, মানে, আরও পাঁচটা বছর অ্যাসাঞ্জকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে ভেতরেই কাটাতে হবে?
নাকি তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ কোনো গোপন অ্যাডভেঞ্চারের মধ্য দিয়ে অচিরেই পৌঁছে যাবেন আশ্রয়দাতা দেশ ইকুয়েডরে?
মশিউল আলম: সাংবাদিক
mashiul.alam@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ