আমাদের দেশের অর্জনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। দুই
বিদেশিকে একই স্টাইলে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড সুপরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
দুই বিদেশি নাগরিকের খুনিদের গ্রেফতার ও বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুনিরা ধরা পড়বে। বিচারও হবে। তাদের বিচারিক ব্যবস্থা আর আমাদের বিচারিক ব্যবস্থা আলাদা। তারাতো ধরা পড়লে গলা কেটে দেয়। আমরা তো এমন করলে আপনারা বলবেন, গেল গেল সব গেল। ইরাক ও সিরিয়ায় গত কয়েক বছরে সাংবাদিক, সেনা সদস্য ও কয়েকজন এনজিও কর্মীকে প্রকাশ্যে গলাকেটে হত্যা করে আলোচনায় আসে আইএস। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ইতালিয়ান নাগরিক হত্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চারটা গুলির একটাও মিস হয়নি। তাহলে এটা সুপরিকল্পিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা যুদ্ধাপরাধী, তাদের যখন বিচার করছেন, তারাই স্বাধীনতার পর রাজত্ব করেছে করেছে পঁচাত্তরের পর ২১ বছর- এটা ভুলে যাবেন না। তারাই ক্ষমত্য়া ছিল। আজকে যখন তার বিচার করছি, তার কিছু রি-অ্যাকশন তো হবেই।
এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সব অর্জন একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল এই দুই ঘটনায়, এই যদি আপনাদের চিন্তা ভাবনা হয়, তাহলে তো আমার মনে হয় যে বিএনপি-জামায়াত রাজাকারদের যে উদ্দেশ্য সেটাই সফল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা বিদ্যুত ও জ্বালানি সমস্যার সমাধান এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলা ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারের দিক দিয়ে সফলতা অর্জন করেছি। জাতিসংঘের অধিবেশনে এসব ভূমিকার ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি)-এর ধারাবাহিকতায় এবারের অধিবেশনে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) গৃহীত হয়েছে। ১৭টি উন্নয়নের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করে ১৬৯টি আশু লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এ কাজে বাংলাদেশের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
২০০০ সালে ১৫ বছরের জন্য গৃহীত হয় এমডিজি। এ বছর এর মেয়াদ শেষ হওয়ায় পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য এসডিজি গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ। এবার দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নিরসন, পুষ্টি বিদ্যুত সেবা নিশ্চিতকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলা করা, সাগর ও মহাসাগরের সম্পদগুলো জনগণের কাজে লাগানো, বায়োডাইভার্সিটি, ফরেস্ট, ইকোসিস্টেম, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট, শিল্পায়ন, ট্রান্স বাউন্ডারি ম্যানেজমেন্ট, মাইগ্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টসহ অনেক বিভিন্ন বিষয়ে আশু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এমডিজির মতো এসডিজি অর্জনেও বাংলাদেশ সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে যেভাবে এগিয়ে গেছি, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনেও এগিয়ে যাবো। বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে দ্রুত এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের ভূমিকা যথেষ্ট ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বাংলাদেশে না আসার বিষয়েও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের দেশে (অস্ট্রেলিয়া) সম্প্রতি গোলাগুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আমেরিকার একটি কলেজেও গুলিতে দশজন মারা গেছে। তারা কী তাদের দেশে রেড এলার্ট ঘোষণা করেছে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ছোট ভূখণ্ড। আমেরিকার ৫২ স্টেটের একটা স্টেটের সমান বাংলাদেশ। আমেরিকায় ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজমুলকে রাস্তায় হত্যা করা হয়েছে। কানেকটিকেটে আমাদের য্গ্মু সাধারণ সম্পাদককে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে প্রতিনিয়ত ট্যাক্সিচালক খুন হয়েছে। মিডিয়া কিন্তু এসব হাইলাইট করে না। এখানে একটা ঘটনা ঘটলে আমরা খুব সেনসিটিভ হয়ে যাই, মনে হয় সব অর্জন হারিয়ে গেল। আমরা মানসিক দীনতায় ভুগি। জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। লন্ডন হয়ে গতকাল শনিবার দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।