1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের জনপ্রিয়তা কেন?

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১১ জুলাই, ২০১৫
  • ১৬৯ Time View

indian dramaবাংলাদেশে টেলিভিশন দর্শকদের কাছে ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলো বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম । বিশেষ করে, এই চ্যানেলগুলোর নাটক বাংলাদেশেও জনপ্রিয়।

একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপেও দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে অনেক বিনোদনমূলক টিভি চ্যানেল থাকলেও, জনপ্রিয়তার দিক থেকে যথাক্রমে তৃতীয় এবং সপ্তম রয়েছে স্টার জলসা এবং জি বাংলা। ভারতীয় বাংলা এই চ্যানেলগুলোর মূল আকর্ষণ নাটক এবং কিছু রিয়েলিটি অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশে ভারতীয় বাংলা নাটকের এই জনপ্রিয়তার কারণ কি?

“পরিবারের সুখ-দুঃখ নিয়ে কাহিনীটা হয়, সেটা ভালো লাগে। রোমাঞ্চও থাকে। এছাড়াও ভারতের জামা-কাপড় এবং মেকআপও ভালো হয়। এজন্যই দেখি।” বলছিলেন ঢাকার একজন গৃহিণী শিমু আক্তার ।

একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা নার্গিস জাকিয়া সুলতানা বলেন, সময় কাটানোর জন্য তিনিও ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালকেই বেছে নেন।

“প্রথমে জি বাংলার রাশি নাটকটা আমার নজরে পড়ে। কিছুদিন দেখার পর মনে হলো বাস্তবের সাথে তেমন মিল নেই। কিন্তু এরপরও এটা-ওটা করে কয়েকটা দেখা শুরু করলাম।”

তবে ভারতীয় বাংলা নাটকের জনপ্রিয়তা শুধু টিভি পর্দায়ই সীমাবদ্ধ নেই। দীর্ঘ এই সিরিয়ালগুলোর চরিত্রের নামে জামা থেকে শুরু করে শিশুদের খাতার মলাটেও স্থান পেয়েছে এসব নাটকের নায়িকারা।

এই নাটকগুলোর জনপ্রিয়তার পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে, তবে সবচেয়ে বড় যে কারণটি বারবার উঠে আসছে এবং সবার মুখ থেকেই উঠে আসছে সেটি হচ্ছে বিজ্ঞাপন। ভারতীয় চ্যানেলে নয়, বাংলাদেশি চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপন।

“বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোতে এখন অনেকটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে নাটক দেখানো হয়।” বলেন শফিউল আলম ভূঁইয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক।

অধ্যাপক ভূঁইয়া বলছেন, বাংলাদেশে যে হারে যে হারে নাটক তৈরি হচ্ছে, সে হারে অভিনেতা বা কলাকুশলী তৈরি হয়নি।

তার সাথে একমত প্রবীণ অভিনেতা এবং নির্মাতা মামুনুর রশিদ। তিনিও বলছেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রচুর নতুন টেলিভিশন চ্যানেল যাত্রা শুরু করেছে এবং নাটকের পরিমাণও বেড়েছে। কিন্তু সেই বৃদ্ধির সাথে সাথে মান তো বাড়েইনি বরং আরো নেমে গেছে।

“ভারতীয় নাটকে যারা অভিনয় করে তাদের একটি গ্রুমিং সেন্টারই আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়াও যারা ভালো অভিনয় করে, তাদের অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। আর বেশি টাকা দিতে হয় বলে ভালো অভিনেতাদেরও নির্মাতারা নিচ্ছে না।”

বাংলাদেশে এখন প্রায় ২৩ টি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে রয়েছে এবং প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে আরো প্রায় ১৮ টি চ্যানেল। হাতেগোনা কয়েকটি সংবাদভিত্তিক চ্যানেল ছাড়া সবগুলোতেই প্রচারিত হয় নাটকসহ অন্যান্য বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। তবে বাংলাদেশি এত চ্যানেলের ভিড়ে, এত নাটকের ভিড়ে ভারতীয় বাংলা নাটকের এতটা জনপ্রিয়তা কেন?

“ওরা সিরিয়ালের একটি ভাষা বের করেছে। একটু উচ্চগ্রামের, উচ্চস্বরে কথা বলা, বিস্তৃত একটা সুর আছে তাদের নাটকে। বাঙ্গালি কিন্তু এই সুর ভালবাসে। আর ওরা যেভাবে গল্পটা বলতে পারে তাতে প্রতি মুহূর্তে কৌতুহলটা উদ্রেক হয়।”

নারীদের মধ্যে ভারতীয় নাটকের জনপ্রিয়তা বেশি হলেও, পুরুষেরাও যে এতে আকর্ষিত হন না তা নয়।

“দেখলাম আমার বাসায় মা আর বোন নিয়মিত দেখছে। তাদের সাথে বসে আমিও দেখা শুরু করলাম। একটা পর্যায়ে দেখলাম আমিও উদগ্রীব হয়ে বসে থাকি যে ভবিষ্যতে কি ঘটবে।” একজন দর্শক সৌমিত্র বড়ুয়া ব্যাখ্যা করছিলেন ভারতীয় নাটকের প্রতি তার আকর্ষণের কারণ।

অনেক দর্শক বলছেন, বাংলাদেশি নাটক ভালো লাগলেও বিজ্ঞাপনের বাড়াবাড়ির কারণে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

দর্শকদের বিরক্তি সত্ত্বেও চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপনের এই আধিক্য কেন?

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান শামীম শাহেদ বলেন, “ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলো দেখার জন্য আমাদের অথবা কেবল অপারেটরদের একটি কার্ড কিনতে হয়। সেই কার্ডের টাকাটা পায় চ্যানেলের মালিক কর্তৃপক্ষ, কিন্তু আমাদের বিজ্ঞাপন ছাড়া আয়ের আর কোনো উৎস নেই।”

নাটক নির্মাণে বাজেটের অভাবকেও একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন শামীম শাহেদ।

অধ্যাপক শফিউল আলম ভুঁইয়া বলছেন, হঠাৎ করেই টেলিভিশন নাটকের যে চাহিদা তৈরি হয়েছে, সেটি যোগান দেবার মতো অবকাঠামো তৈরি হয়নি। যার ফলাফল, নাটকের মানের অবনতি।

“আমাদের এখানে প্রবণতা হচ্ছে কম বিনিয়োগে বেশি নাটক তৈরি করা। চ্যানেল বাড়ার ফলে নাটকের যে চাহিদা তৈরি হয়েছে, সেটি পূরণ করতে গিয়ে যেনতেন জিনিস তৈরি হচ্ছে।”

২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা নিয়েলসেনের জরিপে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ টেলিভিশন দেখে এবং সংবাদ ও চলচ্চিত্রের পরই সবচেয়ে বেশি দেখে টেলিভিশন নাটক। উন্নত দেশগুলোতে যখন টেলিভিশনের দর্শক দিনকে দিন কমছে, সেখানে এই চিত্র বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য বেশ আশাব্যঞ্জক।

কিন্তু দর্শকদেরকে ধরে রাখার উপায় খুঁজে বের করতে না পারলে যেমন কঠিন হবে, তেমনি বিদেশী অনুষ্ঠানের সাথে পাল্লা দেয়াটাও দিন-দিন আরো কঠিন হতে পারে।– বিবিসি

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ