1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন

বাকৃবির সফল পথচলার ৫৩ বছর

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৪
  • ৬৯ Time View

কৃষিই আমাদের কৃষ্টি। মানব জীবনে সভ্যতার ভিত্তি রচিত হয়েছে কৃষিকেই কেন্দ্র করে। দেশের বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর জীবন এবং জীবিকার প্রধান মাধ্যম হচ্ছেন কৃষি। আর দেশের এই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৬১ সালে ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।image_94779_0

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৃষি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মানসম্পন্ন উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ব্যবস্থার নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব বহনে সক্ষম তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কৃষিবিজ্ঞানী, কৃষিবিদ, কৃষিপ্রযুক্তিবিদ ও কৃষি প্রকৌশলী তৈরি করে আসছে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে কৃষিশিক্ষা উচ্চতর এই প্রতিষ্ঠানটি কৃষিশিক্ষা, গবেষণার ও কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণের পথিকৃৎ বাকৃবি ৫৩ বছর অতিক্রম করে ৫৪ বছরে পদার্পণ করছে আজ ।

ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম প্রান্তে গাছ-পালার চিরসবুজ ঘেরা গ্রামীণ নৈসর্গিক পরিম-লের ১২০০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

কৃষি শিক্ষার এই প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৬১ সালে ‘পূর্ব-পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে শুধুমাত্র ভেটেরিনারি ও কৃষি অনুষদ শুরু করে। প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই শিক্ষা কায়ক্রমে পশুপালন অনুষদ নামে আরো একটি অনুষদ যুক্ত হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে যুক্ত কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান, কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি এবং মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাংলাদেশের কৃষি শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছয়টি অনুষদ রয়েছে। অনুষদগুলোর অধীনে সর্বমোট ৪৩ বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয় ক্ষেত্রেই সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৩৭২ জন শিক্ষার্থী এবং তাদের পাঠদানে জন্য ৫৬০ জন শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিশাল ও ক্রমবর্ধমান শিক্ষা কাযৃক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রয়েছে সুপরিকল্পিত ভৌত অকাঠামো। ভৌত অবকাঠামোর মধ্যে আছে দুটি প্রশাসন ভবন, ছয়টি অনুষদীয় ভবন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), কৃষি সম্প্রসারণ ভবন, কেন্দ্রীয় গন্থাগার ভবন, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি মিলনায়সহ শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ১২টি আবাসিক হল এবং একটি পিএইচডি ডরমিটরি বিল্ডিংরয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ রয়েছে জিমনেসিয়াম, স্টেডিয়াম, ক্লাব ভবন, কমিউনিটি সেন্টার, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও মন্দির।

গবেষণা নির্ভর হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে ব্যবহারিক শিক্ষা দেয়া এবং গবেষণা কর্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ ফলজ গাছের সংগ্রহশালা জার্মপ্লাজম সেন্টার, সীড প্যাথলজি সেন্টার, ভেটেরিনারি ক্লিনিক, প্ল্যান্ট ডিজিজ ক্লিনিক এবং প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগারসহ ফিল্ড ফার্টিলিটি ক্লিনিক, বায়োটেকনোলজি, ফিশ নিউট্রিশন ও ডিজিজ গবেষণাগারসহ প্রায় ১২টি ফর্ম, ফর্ম-ল্যাব, ক্লিনিক ও ওয়ার্কশপ। বিরল ও বিলুপ্ত প্রায় ফলজ, ওষুধী, শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষরাজির বিশাল সংগ্রহ নিয়ে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেন।

দেশের প্রথম কৃষি জাদুঘর ও দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম মৎস্য জাদুঘর, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এবং বাংলাদেশ মাৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই অবস্থিত। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধারণের জন্য এবং শহীদদের স্মৃতি স্বরুপ জন্য বাকৃবি শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য বিজয়-৭১ এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্বর। বর্তমানে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি কলেজ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানশীলতা বিকশিত করে সৃজনশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলতে রয়েছে বিনোদন সংঘ, সাহিত্য সংঘ, নাট্য সংঘ, সংগীত সংঘ, বিজ্ঞান সংঘ, ডিবেটিং ক্লাব প্রভৃতি সংগঠন। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা স্কাউটিং, বিএনসিসি ও বাঁধন এর সঙ্গে যুক্ত থেকে ভবিষ্যত জাতি গঠনে নেতৃত্ব দিতে নিজেকে তৈরি করছেন। সংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক বিভাগের অধিতে ছাত্র- শিক্ষক কেন্দ্রে তাদের সাংস্কৃতিক ও সমাজ সেবা মুলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে।

দীর্ঘ ৫৩ বছরের পথ চলায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবন করেছে বহুসংখ্যক শস্যের জাত ও কৃষি ফসল উৎপাদন ও সংরক্ষণের প্রযুক্তি। এগুলোর মধ্যে বাউকুল, দুটি উফশী ধান, চারটি উফশী সরিষা, পাঁচটি সয়াবিন, দুটি আলু, তিনটি মুখীকচুর জাতসহ কলা ও আনারস উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি, রাইজোবিয়াম  জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি, সয়েল টেস্টিং কিট, অ্যারোবিক প্রদ্ধতিতে শুকানো মৌসুমে বোরো ধান চাষ প্রযুক্তি, আইপিএম ল্যাব বায়োপেস্টিসাইড, মোরগ-মুরগির রাণীক্ষেত রোগ ও ফাউলপক্সের প্রতিষেধক টিকা, হাঁসের প্লেগ রোগের ভ্যাকসিন ও হাঁস-মুরগির ফাউল কলেরার ভ্যাকসিন তৈরি, মুরগির স্যালমোনোসিস রোগ নির্ণয় প্রযুক্তি; হাওর অঞ্চলে হাঁস পালনের কলাকৌশল, গবাদিপশুর ভ্রুণ প্রতিস্থাপন, ছাগল ও মহিষের কৃত্রিম প্রজনন, গাভীর উলানফোলা রোগ প্রতিরোধ কৌশল, হরমোন পরীক্ষার মাধ্যমে গরু ও মহিষের গর্ভ নির্ণয়, মাগুর ও শিং মাছের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল, দেশি পাঙ্গাসের কৃত্রিম প্রজনন, মাছের বংশ পরিক্রম নির্ণয়, তারাবাইম, গুচিবাইম, বড় বাইম, কুচিয়া ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন, একোয়াপনিক্সের মাধ্যমে মাছ এবং সবজি সমন্বিত চাষ প্রযুক্তি, কচি গমের পাউডার উৎপাদনপদ্ধতি প্রভৃতি  আবিষ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সাফল্য।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশেষ অনুষ্ঠানসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সোমবার সকাল ১০ টায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, মহিলা সংঘ, রোভার স্কাউট, বিএনসিসি শিশু-কিশোর কাউন্সিল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সমাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশ গ্রহণে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন ও আনন্দ র্যা লি, আলোচনা সভা বৃক্ষরোপন, গাছের চারা বিতরণ, মাছের পোনা অবমুক্তকরণ প্রভৃতি।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল হক বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে যাচ্ছে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ভবিষতে আরো নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে কৃষকের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ নিরলসভাবে করে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমাদের প্রত্যাশা, বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে আরো কার্যকর ও ত্বরান্বিত করা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ