চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি সফরের আগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙঘ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সতর্ক করল৷ এই প্রথম আরএসএস প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশনীতি বিষয়ে পরামর্শ দিল৷
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তান-সহ সার্ক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে আরএসএস কোনো প্রশ্ন তোলেনি৷ কিন্তু আরএসএস মুখপাত্র রাম মাধব সরাসরি লিখিতভাবে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, “পাকিস্তান সম্পর্কে ভারতের জনসাধারণের একটি বিশেষ ধারণা রয়েছে৷ কিন্তু চীন সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানা না থাকায় কোনো ধারণা নেই৷”
তিনি এই পরামর্শও দিয়েছেন, “কেবলমাত্র বিদেশমন্ত্রকের কূটনীতিবিদদের গতে বাঁধা বুলি যদি চীন নিয়ে উচ্চারিত হয়, তা হলে তা হবে বিপদের৷” প্রসঙ্গত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে স্বাগত জানান৷
আজ সকালে দিল্লি আসছেন চীনের প্রেসিডেণ্টের বিশেষ দূত হিসাবে বিদেশমন্ত্রী ওয়াং উই৷ তিনি এসেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন৷
তবে এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বৈঠকের কোনো কর্মসূচি নেই৷ তবে চীনা মন্ত্রী আসছেন প্রধানমন্ত্রী মোদিকে চীন সফরে আমন্ত্রণ জানাতে৷ প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠক না হলেও চীনা মন্ত্রী সোমবার রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন৷ মাত্র দুটি বৈঠক এখনও পর্যন্ত নির্ধারিত হলেও চীনা মন্ত্রী তিনদিন দিল্লি থাকছেন৷ তিনি বেইজিং ফিরবেন মঙ্গলবার৷ তাৎপর্যপূর্ণ হল, এতদিন বিদেশি অতিথিরা এলে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাত্ করতেন৷ এবার তেমন কোনও কর্মসূচি নেই৷ লোকসভায় কোনো বিরোধী নেতা মনোনীত না হওয়ায় চীনা মন্ত্রী বিরোধী নেতার সঙ্গেও দেখা করতে পারছেন না৷
উল্লেখ্য, এই বছর চীন ও ভারতের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্হানের পঞ্চশীল চুক্তির ষাট বছর পূর্তি৷ এই উপলক্ষে চীন বিশেষভাবে এই চুক্তির ষাট বছর পূর্তি পালন করতে চায়৷ কিন্ত্ত বিজেপির প্রধান চালিকাশক্তি আরএসএস এই চুক্তি সম্পর্কে যে মনোভাব প্রকাশ করেছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী মোদি শেষ পর্যন্ত ওই চুক্তির ষাট বছরপূর্তি পালনের সিদ্ধান্ত নেবেন কিনা, তা এখনও পরিষ্কার নয়৷
আরএসএস মুখপাত্র লিখেছেন, “ভারত ও চীন সবসময়ই পঞ্চশীল চুক্তিকে দু’দেশের সম্পর্কের ভিত্তি বলে মেনে এসেছে৷ প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী-সহ সব প্রধানমন্ত্রীই এই নীতি মেনে এসেছেন৷ বলা যায় না বর্তমান নেতৃত্ব (নরেন্দ্র মোদি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই নীতি অনুসরণ করে চলতে পারেন৷” এরপর তিনি লিখেছেন, “আমরা ভুলে গিয়েছি মাও সে তুং নিজেই সেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্হানের নীতির কবর দেন৷ ১৯৬২ সালে তিনিই প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইকে বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে চীনের নীতি ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ হওয়া উচিত নয়৷ বরং চীনের উচিত ‘সশস্ত্র সহাবস্থান’ নীতি অনুসরণ করা৷”
বলা বাহুল্য, সীমানা নিয়ে বিবাদের কারণেই ১৯৬২ সালে চীন ভারত আক্রমণ করায় যুদ্ধ বাধে৷ এবারেও চীনের অন্যতম লক্ষ্য সীমান্ত সমস্যার সমাধান৷ তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসছেন প্রেসিডেণ্টের বিশেষ প্রতিনিধি হয়ে৷ ভারতের সঙ্গে আগেই স্থির রয়েছে বিশেষ দূতস্তরে সীমানা নিয়ে আলোচনা হওয়ার৷ এবার সেই আলোচনা প্রধানমন্ত্রী শুরু করার নির্দেশ দেন কি না, তা-ই দেখার৷