1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:২৬ অপরাহ্ন

মুসলমানদের মানবেতর জীবনযাপন

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৪
  • ৭৪ Time View

musolmanআসামের ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যে দ্বীপের মতো রয়েছে অসংখ্য চর। নদীভাঙনের ফলে চরগুলো সবই ক্ষণস্থায়ী-একদিকে চর ভাঙলো তো অন্যপাড়ে চর জেগে উঠল। গত প্রায় ছয় দশকে নদীগর্ভে এভাবেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বহু গ্রাম।

চর অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষই বাংলাভাষী মুসলমান, যাদের পূর্বপুরুষরা তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে জীবিকার সন্ধানে আসামের দিকে চলে এসেছিলেন ১০০-১৫০ বছর আগে। তাদের বসতি বা জীবনও চর ভাঙা-গড়ার মতোই অনিশ্চিত।

ধুবরীর জেলা সদরের যোগমায়া ঘাট থেকে মোটর-নৌকায় ঘণ্টাখানেক চলার পরে পৌঁছিয়েছিলাম কাইজা-র চরে। আদতে এটি ছিল চলাকুরা গ্রাম পঞ্চয়েত এলাকা। নদী ভাঙতে ভাঙতে আসল গ্রামটা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। মাঝে প্রায় তিন কিলোমিটার চওড়া ব্রহ্মপুত্র।

মাসকয়েক আগে থেকে এই চরেও শুরু হয়েছে ভাঙন, গ্রামবাসীরা বেশিরভাগই চলে গেছেন অন্যান্য চর এলাকায়। তবে এখনো রয়ে গেছেন সবেদ আলি মন্ডল। তিনি বলছিলেন, আমার জীবনেই যে কতবার নদী ভাঙল, তার হিসাব নেই – বার ৫০ তো হবেই। গ্রামের সবাই বিভিন্ন চরে চলে গেছে। আমার বাড়িটা পাড় থেকে একটু ভেতরে, তাই এখনো যাই নি। কিন্তু যেকোনো দিন চলে যেতে হবে।

আরেকটা বেশ বড় আর পুরনো চর বেরুরঝাড়। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আব্দুস সায়েদ দেখাচ্ছিলেন আশপাশের প্রায় সাত-আটটা গ্রাম কোন জায়গায় ছিল – যেখানে এখন শুধুই ব্রহ্মপুত্র।

ওই চরেরই বৃদ্ধ চাঁদ মহম্মদ বলেছিলেন নদীর ভাঙা গড়া তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ বলছিলেন, ভাঙনে জমি-বাড়ি চলে গেলেও কোনো সরকারি ক্ষতিপূরণ পান না চরের মানুষরা। কিন্তু একটা সময়ে এই এলাকাগুলো ছিল নদীপাড়ের ডাঙ্গা কৃষি জমি। বেরখাখালি চরের কেরামৎ আলির পরিবার তিনপুরুষ আগে পূর্ববঙ্গ থেকে নদীপথেই এসেছিলেন এই অঞ্চলে, চাষাবাদ করতে।

চরগুলো যেন একেকটা নেই-রাজ্য। বেশিরভাগ চরেই বিদ্যুৎ নেই সৌরশক্তিতে আলো জ্বলে। স্কুলও বহু দূরে, হাসপাতাল নেই। রাতবিরেতে কেউ অসুস্থ হলে নৌকা ভাড়া করে ধুবড়ি নিয়ে যেতে হয়।

এই চরগুলো দক্ষিণ শালমারা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। এই নেই-রাজ্যেরই আদি বাসিন্দারা একাধিকবার সংসদ সদস্য বা রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে মানুষ ভোটও দেয়, কিন্তু চরের মানুষের জীবন পাল্টায় না।

আবার বহু মানুষকে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয় – ‘ডাউটফুল’ বা সন্দেহজনক ভোটার আখ্যা দিয়ে। এমনই একজন সন্দেহজনক বা ‘ডি’ ভোটার কাশেম আলির সঙ্গে দেখা হয়েছিল বেরখাখালি বাজারে।

তিনি ১৯৮৫ সাল থেকেই ভোট দিতেন নিয়মিত। হঠাৎ করেই ১৯৯৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে জানতে পারেন যে তার নামের পাশে ‘ডি’ লিখে দেয়া হয়েছে। সেই থেকে বিদেশী নাগরিক ট্রাইবুনালে তার মামলা চলছে। এখনো ফিরে পান নি ভোটাধিকার।

রাজনীতির মানুষরা যেহেতু তাদের সহায়তা করেন না, তাই নিজেদের বাঁচার পথ চরের মানুষেরা নিজেরাই খুঁজে নিয়েছেন। জীবিকার জন্য চরের পুরুষদের পাড়ি দিতে হয় রাজধানী গোয়াহাটি – এমনকি দিল্লি, মুম্বাই-ও। কাজের খোঁজে সেসব জায়গায় গিয়ে হেনস্থার শিকার হতে হয় এঁদের অনেককেই। কাইজার চরের যুবতী ময়না খাতুনের স্বামী গুয়াহাটিতে রিকশা চালাতে গেছেন।

ময়না খাতুনের কথায়, এক দেড় মাসে একবার বাড়ি আসে মানুষটা। শুনেছি গোয়াহাটিতে বাংলাদেশী বলে ধরপাকড় করেছে কয়েকবার। তবে এখন সব কাগজপত্র সঙ্গে রাখেন উনি।

জীবিকার সন্ধানে চরের মানুষ শুরু করেছেন পাট আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে দোলনা, ঝোলা বানানোর কুটির শিল্প। প্রায় প্রতিটা ঘরেই মহিলারা এগুলো তৈরি করেন আর কমবয়সী পুরুষরা এগুলো নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে বিক্রি করেন। মুহম্মদ আহসান আলি আসামেরই একটি শহরে দোলনা আর ঝোলা বিক্রি করতে গিয়ে বাংলাদেশী বলে চিহ্নিত হয়ে হাজতবাস করেছিলেন।

চরগুলোতে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বহু কিছুই নেই। কিন্তু বেরুরঝাড় বাজারে বেশ কয়েকটা মোবাইল ফোনের সিমকার্ড বিক্রি বা রিচার্জ করার দোকান দেখতে পেলাম। আর সেখানেই কথা হচ্ছিল ছাত্র নাসের খানের সঙ্গে, যিনি মোবাইল ফোনেই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন নিয়মিত। বেশিরভাগ সময়ে ফেসবুক আর ক্রিকেটের স্কোর দেখেন তিনি। তার প্রায় সব বন্ধুই মোবাইলেই নেট ব্যবহার করেন।

সারাদিন চরগুলোতে ঘুরে যখন ফিরছিলাম, তখন ধুবড়ি শহর থেকে একের পর এক যন্ত্রচালিত নৌকা যাত্রী ভরে ফিরছে চরের দিকে। কোনো কাজে শহরে গেলে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরতে হয়। তারপরে গোটা পৃথিবী থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় চরগুলো। বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে মোবাইল ফোন আর কারো কারো ইন্টারনেট সংযোগ। সূত্র: বিবিসি

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ