1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫১ অপরাহ্ন

সেন্টমার্টিন ট্রাজেডি : নোমান ও বাপ্পীর গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৪
  • ৭১ Time View

noman_bappiবন্ধুদের সঙ্গে সেন্টমার্টিনে বেড়াতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে আসা ঢাকার আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এসএম গোলাম রাহিম বাপ্পী ও শাহরিয়ার  ইসলাম নোমানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে চলছে মাতম। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও আশপাশের লোকজনের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস।

জানা গেছে, নিহত শিক্ষার্থী এসএম গোলাম রাহিম বাপ্পীর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কানহারি ইউনিয়নের স্বরস্বতিকান্দা গ্রামে এবং শাহরিয়ার ইসলাম নোমানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের মহিষতারায়।

আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এসএম গোলাম রাহিম বাপ্পী নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর বুধবার সকালে তার লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের মধ্যে কান্না যেন থামছে না। লাশ উদ্ধারের খবর বাড়িতে পৌঁছলে বাপ্পীর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও আশপাশের লোকজনের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে। দূর-দুরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা নিহত বাপ্পীর বাড়িতে ভিড় করছে। আর লাশের জন্য অধির আগ্রহে প্রহর গুণছেন তার পরিবার ও এলাকাবাসী।

ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে মা শামছুন্নাহার ছেলের কথা মনে করে বাড়িতে আসা আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিদের জড়িয়ে ধরে ‘বাপ্পী বাপ্পী’ বলে আহাজারি করে মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। আর বলেছেন, ‘আমার সোনার ধন বাপ্পীকে এনে দাও।’ কারো শান্তনাই বোঝ মানছে না মা শামছুন্নাহারের।

জানা গেছে, ভালুকা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাসরত অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার শামছুদ্দিন আহমেদ দম্পতির পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে বাপ্পী ছিল চতুর্থ। সে স্থানীয় শাপলা বিদ্যানিকেতন থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়। প্রাথমিকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও মির্জাপুর ক্যাডট কলেজে থেকে ২০০৬ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি ও ২০০৮ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা আহছান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয় বাপ্পী।

নিহত বাপ্পীর বাকরুদ্ধ পিতা শামছুদ্দিন আহমেদ জানান, আমার অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয়ে গেছে। অনেক স্বপ্ন ছিল বাপ্পীকে নিয়ে। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর গত ১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সে বাড়িতে এসে সবার সাথে দেখা করে বন্ধুদের নিয়ে সেন্টমার্টিন বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে শনিবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

সেখানে পৌঁছে আমার মোবাইল ফোনে এসএমএস করে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়। এটাই যে ছেলের সাথে আমার শেষ যোগাযোগ হবে- তা ভাবতে পারিনি।

মৃত বাপ্পীর ছোট ভাই সাব্বির জানান, সোমবার সকালে ফোনে ভাইয়ার সাথে আমার শেষ কথা হয়। ওই দিন দুপুরে ভাইয়ার বন্ধু সাকিলের মাধ্যমে সেন্টমার্টিনে দুর্ঘটনার খবর শুনে ভাইয়ার মোবাইলে ফোন দিলে অন্যলোকে মোবাইল ধরে ভাইয়ার নিখোঁজের সংবাদ জানান।

বাপ্পীর মামা শাহজাহান জানান, ওই এলাকার ইউএনও’র সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে, তিনি জানিয়েছেন, লাশ সেন্টমার্টিনে রাখা সম্ভব নয়, লাশ কঙবাজারে পাঠানো হচ্ছে। আমরা সেখান থেকে লাশ আনার জন্য যাচ্ছি।

বাপ্পীর লাশ তার গ্রামের বাড়ি ত্রিশাল উপজেলার কানহারি ইউনিয়নের স্বরস্বতিকান্দা গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ইসলাম নোমানের গ্রামের বাড়ি মুক্তাগাছা উপজেলার মহিষতারায় গিয়ে সরেজমিন দেখা গেছে, একমাত্র ছেলে শাহরিয়ার ইসলাম নোমানের লাশ উদ্ধারের খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা নজরুল ইসলাম, অবচেতন অবস্থায় বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে আছেন মা শামসুন নাহার। ভাইকে ফিরে পাবার খবর জানতে টিভির পর্দায় নিঃস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে একমাত্র ছোট বোন নুসরাত জাহান নিশি। আর নাতিকে ফিরে পাবার প্রত্যাশায় কান্নাজড়িত কন্ঠে আল্লাহর কাছে প্রার্থনারত নব্বই বছরের বৃদ্ধা দাদি করিমন নেছা। বুধবার দুপুরে নোমানের বাসায় গেলে এ রকমই হৃদয়বিদারক দৃশ্য চোখে পড়ে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার রাজধানীর আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ জন শিক্ষার্থীর একটি দল সেন্টমার্টিন ভ্রমণে গিয়ে সাগর সৈকতে গোসলের সময় স্রোতের টানে কয়েকজন শিক্ষার্থী ভেসে যায়। এরপর বুধবার লাশ উদ্ধার হওয়া দুইজনের একজন শাহরিয়ার ইসলাম নোমান।

নোমানের বাবা মুক্তাগাছা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে উপজেলা শহরের লক্ষ্মীখোলার বাসায় থাকেন। পরিবারে দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছিল নোমান।

পরিবারের সদস্যরা জানান, নোমান ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে মেধা তালিকায় বৃত্তিসহ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ভর্তি হয়। ফাইনাল পরীক্ষা শেষে গত ১৩ এপ্রিল বন্ধুদের সাথে সেন্টমার্টিনে বেড়াতে যায়। পরে সোমবার সেখানে সমুদ্রে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর বুধবার সকালে তার লাশ উদ্ধার হয়।

বাবা নজরুল ইসলাম জানান, পরীক্ষা শেষে বাড়িতে আসতে বললেও সে বাড়িতে না এসে দাদিকে ধরে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সমুদ্র দেখতে যায়।

তিনি জানান, ছেলে বলেছিল- পরীক্ষা শেষ হয়েছে, ভ্রমণ শেষে একেবারেই বাড়ি ফিরব। কথাগুলো বলে বাবা ‘হাউ-মাউ’ করে কাঁদতে থাকেন। আর বলতে থাকেন ‘তার ফেরা আর হলো না।’

মা শামসুন নাহার অবচেতন অবস্থায় নির্বাক হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন কোন কথা বলতে পারছেন না। কতক্ষণ পরপর ছেলের নাম ধরে চিৎকার দিয়ে উঠে মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। আত্মীয়-স্বজনদের কোনো শান্তনাতেই তাকে থামানো যাচ্ছে না।

এদিকে নোমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। অসংখ্য লোকজন এসে তাদের বাড়িতে ভিড় করছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ