অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় শ্রমিক চার্টার প্রকাশ করেছে কাতার। ২০২২ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের কাজ করতে গিয়ে প্রায় দুইশ নেপালি শ্রমিক মারা যাবার পর এই সিদ্ধান্ত এলো। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের সহযোগিতায় কাতার ৫০ পৃষ্ঠার নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।
আজ বুধবার ফিফাকে নতুন পরিকল্পনা জানাবে কাতার।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, শ্রমিকদের দাবিদাওয়া ও উদ্বেগ জানানোর জন্য একটি হটলাইন থাকবে। চুক্তিভুক্ত শ্রমিকরা বার্ষিক তিন সপ্তাহ ছুটির মজুরি পাবেন, সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করবেন এবং মালিকপক্ষ দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করাতে পারবেন না। সপ্তাহে শ্রমিকরা একদিন বিশ্রাম করবেন। এদিন তারা কাজ করলে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক পাবেন। শ্রমিকদের দাবিদাওয়া সমাধানে ওয়েলফেয়ার অফিসার পদও সৃষ্টি করা হবে।
তবে এই প্রস্তাব যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (আইটিউসি)। ২০২২ সালের মধ্যে চার হাজার পর্যন্ত শ্রমিক মারা যেতে পারে। সাধারণ সম্পাদক শ্যারন বুউরো বলেন, নিজেদের পর্যবেক্ষণের এই ব্যবস্থা অত্যন্ত পুরনো। যা বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে ব্যর্থতার কারণে হাজার হাজার শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন।
অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় নতুন কর্মপরিকল্পনার জন্য ফিফা চাপ দিয়ে আসছিল। গত বছর ১৮৫ বিদেশি শ্রমিক মারা যাবার পর এটি স্পষ্ট হয় যে, সেখানে শ্রমিকদের অবস্থা ভালো নয়। অনিরাপদ পরিবেশের কারণে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান ব্যবস্থা নিয়েও অভিযোগ উঠে। তবে কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজকের সুপ্রিম কমিটির সেক্রেটারি হাসান আল থাওয়াদি জোর দিয়ে বলেছেন, ‘নিরপরাধ শ্রমিকদের রক্ত দিয়ে এই টুর্নামেন্ট হবে না।’
এদিকে, ট্রেড ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো কাতারে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে ‘কাফেলা’ পদ্ধতির সমালোচনা করেছে। এ পদ্ধতি অনুযায়ী, বিদেশি শ্রমিকরা নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে এক রকম জিম্মি। স্পন্সর কোম্পানির অনুমতি ছাড়া শ্রমিকরা নিজ দেশে যাবার ভিসাও পান না।
তবে নতুন নিয়মে শ্রমিকদের উন্নয়নের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বকাপ আয়োজকের সুপ্রিম কমিটি। সব শ্রমিকদের কল্যাণে আইনটি কঠোর ও কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলেও জানান তারা।
গত বছরের অক্টোবরে ফিফা বিশ্বকাপ কাতারে হবে এমন নিশ্চিতের পর ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার শ্রমিকদের এই ইস্যুর প্রতি জোর দেন এবং এনিয়ে কাতারের আমিরের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রসঙ্গত, বিশ্বকাপ আয়োজনে প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণে ২০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে কাতার।