1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন

আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদার ডিজিটাল কামাল

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৪
  • ৯৫ Time View

এক সময় পেশায় ডিজিটাল ব্যানার-ফেস্টুন তৈরির কারিগর ছিলেন তিনি। পরে শুরু করেন মিউজিক ভিডিও নির্মাণ। মাঝে মধ্যে গান লিখতেন এবং গাইতেনও। নিজের লেখা গানে সুরও দিতেন। এভাবেই সংস্কৃতি অঙ্গনে তার পথচলা শুরু। আস্তে আস্তে ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তিনি হয়ে উঠেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদার। সংসদ সদস্য না হয়েও এমপিদের স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। এমনকি পুলিশ সদস্যরা তার হাতে মার খেয়েছেন তার বেপরোয়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে তিনি ডিজিটাল কামাল হিসেবে পরিচিত। ঢাকার সন্ত্রাসী জগতে তাকে কামাল হোসেন নয়, ডিজিটাল কামাল নামেই সবাই চেনে। সর্বশেষ আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধরা খেয়ে তিনি আবারো পুলিশ রিমান্ডে এসেছেন। রহস্যজনক কারণে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে কামালের সঙ্গী মডেল পল্লবকে।
গত শনিবার রাতে রামপুরা থানা পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হন ডিজিটাল কামাল। রামপুরা টিভি সেন্টারের পেছনে কুঞ্জবন এলাকার বাড়ি থেকে তিনটি অস্ত্র, ১৪ রাউন্ড গুলি ও কার্তুজসহ ডিজিটাল কামালকে আটক করা হয়। এর আগে ২০১১ সালে একবার আটক হলেও পরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বড় ভাই জামালের প্রভাবে ডিজিটাল কামাল হয়ে উঠেন অপ্রতিরোধ্য গডফাদার। নিজের গড়ে তোলা বাহিনীর মাধ্যমে দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ এমন কোনো কাজ নেই যে তিনি করেননি। বড় ভাই জামাল হোসেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেত্রীর এপিএস ছিলেন।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে সন্ত্রাসী জগতে জিডিটাল কামালের আধিপত্য বিস্তার শুরু হয়। তার নিয়ন্ত্রণে শুটার সীমান্তসহ একাধিক পেশাদার কিলার রয়েছে। বছর দুয়েক আগে রামপুরা এলাকায় এক ট্রাফিক সদস্যকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, রামপুরা থানার তৎকালীন এক ওসির ছত্রচ্ছায়ায় ডিজিটাল কামালের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে ওঠে। তার বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তার বড় ভাই জামাল হোসেনকে ওই নেত্রীর এপিএস পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এর পর ২০১১ সালে রামপুরা থানা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর অনেকটা আত্মগোপনে চলে যান ডিজিটাল কামাল। এত দিন আত্মগোপনে থাকলেও নতুন করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে পুরনো অধিপত্য ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠে ডিজিটাল কামাল। রামপুরার কুঞ্জবন এলাকায় একটি বাসা থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। এরই মধ্যে কয়েকটি বাড়ি দখল করে নিয়েছেন ওই এলাকার।
শনিবার রাতে বৈঠক করার সময় ডিজিটাল কামালসহ ১১ জনকে আটক করে রামপুরা থানা পুলিশ। এ সময় সেখানে ছোট পর্দার অভিনেতা পল্লব, ইসমাইল, ওবায়দুর রহমান বাদল, আফতাব উদ্দিন, লিটন মাতব্বর, সাদ্দাম হোসেন মাসুম, মনিরুজ্জামান মিলন এবং শুটার সীমান্তকেও আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৪ রাউন্ড গুলি, চারটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার কাজী শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, কুঞ্জবন এলাকায় ফাঁকা গুলির শব্দ পেয়ে শনিবার রাত ১টায় ঘটনাস্থলে যায় রামপুরা থানার পেট্রোল ডিউটিরত একটি দল। ঘটনাস্থলে থাকা কয়েক ব্যক্তিকে গুলির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা ডিজিটাল কামালের বাড়ির সামনে দেখিয়ে দেয়। তখন পুলিশ উৎস খুঁজতে গিয়ে ডিজিটাল কামালের বাসায় অভিযান চালিয়ে কামাল ও ছোট পর্দার অভিনেতা পল্লবসহ ১১ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। কোনো দোষ না পাওয়ায় অভিনেতা পল্লব, নির্মাতা সাদ্দাম হোসেন মাসুম, মনিরুজ্জামান মিলন এবং এক গাড়িচালককে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় ডিজিটাল কামাল, সহযোগী ইসমাইল, ফরিদউদ্দিন, ওবায়দুর রহমান বাদল, আফতাব উদ্দিন জনি ও লিটন মাতব্বরকে। তিনি আরো জানান, মূলত একটি ছবি বিক্রির জন্য অভিনেতা পল্লব, সাদ্দাম হোসেন, মনিরুজ্জামান মিলন ডিজিটাল কামালের বাসায় যান। ডিজিটাল কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় তাকেসহ ছয়জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এডিসি শফিকুর রহমান জানান, ডিজিটাল কামাল নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে জমিদখল, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রামপুরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, অস্ত্র বাড়ি দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে ডিজিটাল কামালের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় এ পর্যন্ত আটটি মামলা হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়ে থাকায় এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হয়নি।
এ দিকে ডিজিটাল কামালের বোন রিতা দাবি করেছেন, শনিবার তার ভাই বাসায় ঘুমাচ্ছিলেন। তিনিও তার ভাইয়ের বাসায় ছিলেন। ওই সময় পুলিশ বাসা থেকে কামালকে ধরে আনে। বাকিদের কোথা থেকে ধরে এনেছে তা বলতে পারেননি তিনি। বাসা থেকে ধরে আনার পর পুলিশ তার ভাইয়ের গাড়িটিও নিয়ে আসে। নতুন গাড়িটি ভেঙে ফেলে পুলিশ। তার ভাইয়ের কাছে কোনো অস্ত্রও পায়নি পুলিশ। তার ভাইকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।
ডিজিটাল কামালসহ ছয়জনকে গতকাল সোমবার রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এ দিকে পল্লবকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি রহস্যজনক বলে দাবি করেছেন কয়েকজন। রাতে তিনি কেন ওই বাসায় গিয়েছিলেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ