ব্যাংক খাতে দিন দিন বেড়েই চলেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণীকরণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে চার হাজার ৪১০ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক। দ্রুত খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। অথচ গত জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ বেড়েছে চার হাজার ৪১০ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুসারে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হয়েছে ২৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বর শেষে এ ব্যাংক ২৯ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।
অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশের অভাব, শিল্প খাতে জ্বালানি সংকট, ঋণ শ্রেণীকরণের নতুননীতিমালা এবং অনিশ্চয়তা খেলাপি ঋণ বাড়ছে। একইসাথে হলমার্ক, বিসমিল্লাহসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের ঋণ জালিয়াতিও খেলাপি ঋণবাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, খেলাপি ঋণের এসব অর্থ আদায়ে পদক্ষেপ নিয়েও তেমন লাভ হচ্ছে না। অর্থ আদায় করতে গিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে বাধার মুখে পড়ছে ব্যাংক। বিশেষ করে বড় বড়ি ঋণখেলাপি আদালতে রিট করে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসছেন। যা ব্যাংকের জন্য নতুন করে ভাবনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা চলছে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হলে খেলাপি ঋণের পরিমান কমে আসবে।
এদিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ হিসেবে উদ্যোক্তা নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সুকোমল সিংহ চৌধুরী। তিনি বলেন, “সঠিক উদ্যোক্তা নির্বাচন সম্ভব হলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ অনেক কমে যাবে।”
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এএফএম আসাদুজ্জামান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, “খেলাপি ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে বড় বড় গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে ঋণ খেলাপির হার কমিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।”
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, “খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। একই সাথে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যয় বেড়ে যায়। তাই সুদের হার কমানো কঠিন হয়।”
এছাড়া খেলাপি ঋণের প্রভাব গ্রাহকদের ওপরে পড়ছে বলেও মনে করেন তিনি।