শেষবেলায় মান্না দের তালাবন্দি জীবন!

শেষবেলায় মান্না দের তালাবন্দি জীবন!

manna-deপ্রবোধ চন্দ্র দে মূল নাম হলেও, তিনি জগত বিখ্যাত হয়েছেন মান্না দে নামে। ভারত বর্ষের অন্যতম সেরা শিল্পী তিনি। গানই ছিল তার জীবনের সব। মায়াবী-দরদী কণ্ঠে গান গেয়ে লাখো-কোটি মানুষকে সুরের যাদুতে মোহিত করে রেখেছিলেন তিনি। গান গেয়ে পেয়েছেন জাতীয় সম্মাননাও। গত ২৪ অক্টোবর লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান গুনী এ শিল্পী।

সারাজীবন মানুষের কাছে সুরের মুগ্ধতা বিলিয়ে গেলেও তার শেষ দিনগুলো ছিল নিদারুণ যন্ত্রণাক্লিষ্ট। স্ত্রী সুলোচনার মৃত্যুর পর একেবারেই একা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কাছে থেকেও সন্তানরা ছিলেন তার পর। সারাজীবনের অর্জন দিয়ে যে সন্তানদের মানুষ করেছিলেন, তারাই তাকে দিয়েছে জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট।

মান্না দে’র জীবনের শেষ দিনগুলো খুব কাছ থেকে দেখেছেন তার একশ’র বেশি গানের সঙ্গীত পরিচালক শান্তনু বসু। স্ত্রী সুলোচনাকে উৎসর্গ করে কিছু গান করতে চেয়েছিলেন মান্না দে। অ্যালবামটির সবগুলো গান করার দায়িত্ব তিনি দিয়েছিলেন শান্তনু বসুকে। শেষ পর্যন্ত অ্যালবামের কাজটি সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি।

শেষ অ্যালবামটির কাজ সম্পূর্ণ করা না গেলেও খুবই দুর্ভাগ্যজনকভাবে মান্না দে’র জীবনের অপ্রকাশিত কষ্ট দেখতে হয়েছে শান্তনু বসুকে। সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকার সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। যে কথায় বেরিয়ে এসেছে এমন কিছু বিষয়- যা মান্না দে’র ভক্তদের জন্য সহ্য করা অনেক কঠিন।

ভারতীয় গানের কিংবদন্তী এই শিল্পীর মৃতদেহ শৎকার করা হয়েছে একেবারের সাধারণ ব্যবস্থাপনায়। যেখানে বাঙ্গালির ভিড় ছিল না। ছিল না গুণী এই মানুষটিকে শেষ সম্মান জানানোর বিশেষ কিছুও। শান্তনু’র বিবেচনায়, এসবই মান্না দে’র বিদেহী আত্মার কষ্ট বাড়াবে বহুগুণ।

শেষ অ্যালবামটির কিছু কাজ করার সময় শান্তনু বসু গিয়েছিলেন ব্যাঙ্গালুরে, মান্না দে’র নিজ বাড়িতে। সেখানে শান্তনু দেখেছেন গান পাগল মানুষটিকে রেওয়াজ করার হারমোনিয়াম দেওয়া হয়নি! সারাদিন একা ঘরে সময় কাটানো মান্না দে’র টেলিফোনের লাইনটিও বিকল করে রেখেছিলো তার ছোট মেয়ে চুমু- (সুমিতা)! কারণ, টেলিফোনের রিংয়ের শব্দে ঘুম নষ্ট হতো তার!

এরচেয়ে ভয়াবহ তথ্য জানিয়েছেন শান্তনু বসু। মান্না দে’কে একা ঘরে তালাবন্দি রেখে চাবি নিয়ে কাজে চলে যেতেন বাড়ির লোকজন! বিছানায় একা শুয়ে কাঁদতেন মান্না দে। এক সময় ঘুমিয়ে পড়তেন।। এতোটাই অনাদরের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে হয়েছে ‘কফি হাউজের’ গায়কের!

এসব অনাদরের কথা শান্তনু বসুকে বলে কেঁদে ফেলেছিলেন কোটি মানুষের প্রিয় এ গায়ক।

শেষ অ্যালবামটি করার জন্য বেশ কিছুদিন রেওয়াজ করার প্রয়োজন হয়েছিলো তার। কিন্তু পরিবারের লোকদের হারমোনিয়ামের ‘প্যা প্যা’ আওয়াজ ভালো লাগে না বলে, রেওয়াজ করতে পারেননি তিনি!

শান্তনু বসু মনে করেন, মান্না দে’র শেষ অ্যালবামটি সম্পূর্ণ করতে না পারার অন্যতম বড় কারণ এটি।

বিনোদন