‘৫ বছর আমাকে রাজনৈতিক কারাগারে রাখা হয়েছে’

‘৫ বছর আমাকে রাজনৈতিক কারাগারে রাখা হয়েছে’

দীর্ঘদিন পর সরব হলেন সুলতান মুহাম্মদ মনসুর। তবে সভা-সমাবেশ বা রাজনৈতিক মঞ্চে নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। দীর্ঘ সময়ের অব্যক্ত যন্ত্রণার কথাগুলো তুলে ধরেছেন নিজের একাউন্টে। আওয়ামী লীগের সাবেক এ সাংগঠনিক সম্পাদক, ডাকসু’র সাবেক ভিপি লিখলেন দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির পর দলীয় রাজনীতির বাইরে থাকা পাঁচ বছর সময়ের যন্ত্রণার কথা। এক/এগারোর পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে দলের পদ হারান সুলতান মনসুর। এরপর গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন থেকেও বঞ্চিত হন। এরপর রাজনীতির মাঠে অনেকটা নীরব হয়ে যান। তবে সামপ্রতিক সময়ে এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কিছুটা সরব হলে কথাবার্তায় ছিলেন অনেকটা চাপা। স্বাধীনতার ৪২তম বার্ষিকীতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে আওয়ামী লীগের সাবেক এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সভানেত্রী হিসেবে সকল পথ অবরুদ্ধ করে তাকে পাঁচ বছর রাজনৈতিক কারাগারে রেখেছেন। এই সিদ্ধান্ত সঠিক না ভুল তা আগামী নির্বাচনই প্রমাণ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোসাহেবি নয়, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার মধ্য দিয়েই জনগণের পাশে থাকবো।
উল্লেখ্য, একই সময়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ হারান ডাকসু’র আরেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। তবে দলের পদে না থাকলেও তিনি বরাবরই আওয়ামী লীগ ও সরকারের সমালোচনা করে আসছেন। তবে সুলতান মনসুর পুরো সময় জুড়ে ছিলেন নিশ্চুপ।
ফেসবুকে দেয়া সুলতান মনসুরের প্রতিক্রিয়া এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো:
‘স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও জয়বাংলা কোন দলের নয়
বাংলার জনগণের’
২৬শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন, সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ মুজিবনগর সরকার, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী, উপ-প্রধান জেনারেল এমএ রব, উপ-প্রধান একে খন্দকার, জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল খালেদ মোশাররফ, জেনারেল একেএম সফিউল্লাহ, জেনারেল মঈনুল হোসেন চৌধুরী ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সহ সকল সেক্টর কমান্ডারদের এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক, সেনাবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার সহ সকল জনগণকে সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।
শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি ৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের মুখে প্রতিবেশী ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সহ ভারত সরকার, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের জনগণকে- যারা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অস্ত্র দিয়ে, ১ কোটি শরণার্থীদেরকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যসহ গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের জনগণকে অভিনন্দন জানাই, যারা সেদিন খুনি পাকিস্তানি ইয়াহিয়ার সামরিক জল্লাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।
আজকের এই দিনে স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানাই। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, নুরে আলম সিদ্দিকী, আসম রব, শাজাহান সিরাজ ও আবদুল কুদ্দুস মাখনকে।
‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল ‘‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য।” এ যুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ, এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ১৯৬৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত রাজনীতির মধ্য দিয়ে আমি জনগণের কল্যাণার্থে কাজ করে যাচ্ছি, যার মধ্যেও রয়েছে আমার বিশ্বাস, চেতনা ও শ্রমের অংশীদারিত্ব। জনগণের ভালবাসা, বিশ্বাস ও আস্থা একজন রাজনীতিবিদের শক্তির মূল উৎস, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য গত ৫ বছর যাবৎ জনগণের আশা আকাঙক্ষা, চাহিদা ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার স্বীকৃত রাজনৈতিক ভূমিকা পদদলিত, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াস এবং জনগণের সেবা এবং ভূমিকা রাখার সকল পথ অবরুদ্ধ করে আমাকে “রাজনৈতিক কারাগারে” রাখার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। তার এই সিদ্ধান্ত সঠিক না ভুল ইনশাআল্লাহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি তা প্রমাণ করবে।
বৃহত্তর স্বার্থে সক্রিয় রাজনীতি, প্রশাসনিক কার্যক্রমে ভূমিকা, টকশো, ইলেকট্রিক মিডিয়া সহ সর্বপ্রকার প্রচার মাধ্যমের ভূমিকায় “নীরব সুলতান” থাকলেও নেতা, কর্মী ও জনগণের সঙ্গে চিন্তা ও সামাজিক যোগাযোগ সবসময়ই ছিল এবং আছে। মানুষের জীবনে জানা ও শেখার শেষ নেই আমি দেখছি, অপেক্ষা করছি এবং শিখছি, এ দেখা ও শেখার মধ্য দিয়ে চিন্তা ও চেতনার মাঝে রাজনীতিতে সার্বক্ষণিক রয়েছি। বঙ্গবন্ধুর একজন কর্মী হিসেবে দৃঢ়ভাবে বলতে চাই- কোন করুণা বা মোসাহেবি নয় সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলার মধ্য দিয়ে সব সময় জনগণের পাশে আছি, এবং থাকবো। আর এটাই মহান স্বাধীনতা দিবসে বর্তমান প্রজন্ম ও বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমার অঙ্গীকার। সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় হোক বাংলার জনগণের।

অন্যান্য পাঠক মতামত