রাজনীতি ডেস্ক
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসলামী দলগুলোর সম্ভাব্য ঐক্য এবং রাজনৈতিক সমন্বয় প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামী–নেতৃত্বাধীন একটি উদ্যোগের ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, আগামী দিনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে এবং এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ইসলামী দলকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার বিষয়ে তার দল বদ্ধপরিকর। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকায় তার বাসভবনে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাক্ষাৎকালে চৌদ্দগ্রাম অঞ্চলের রাজনীতি, প্রার্থীতা, মাঠপর্যায়ের সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ সংগঠনের বর্তমান অবস্থা, স্থানীয় পর্যায়ের ভোটারদের ধারা, সম্ভাব্য রাজনৈতিক সমীকরণ এবং ভবিষ্যৎ সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তারা নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও মতবিনিময় করেন।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, অতীতের মতপার্থক্য ও বিভেদ পিছনে রেখে ইসলামী দলগুলোকে একটি সাধারণ লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। তার বক্তব্যে রাজনৈতিক সহনশীলতা, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সংগঠনগুলোর মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। তিনি উল্লেখ করেন, নীতিগত ঐক্য এবং নির্বাচনী সহযোগিতা গড়ে উঠলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইসলামী ধারার প্রতিনিধিত্ব আরও সুসংগঠিত হতে পারে।
সাক্ষাৎকারের বিষয়ে জানা যায়, ইসলামী দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কৌশলগত মতভেদ রয়েছে। নির্বাচনী টিকিট, সংগঠনের বিস্তার, স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব এবং আদর্শিক অবস্থানসহ নানা প্রশ্নে এ বিভেদ বজায় ছিল। সামনের নির্বাচনে প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়বে—এ বিষয়টি আলোচনা সভায় উঠে আসে। অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, মাঠপর্যায়ের সংগঠনের সমর্থন শক্তিশালী হলে স্থানীয় রাজনীতিতে ইসলামী ধারার ভূমিকা আরও দৃশ্যমান হতে পারে।
চৌদ্দগ্রামসহ কুমিল্লা অঞ্চলের রাজনৈতিক বাস্তবতা আলোচনায় বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। এলাকার ভোটারদের আচরণ, বিভিন্ন দলের প্রভাব, সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে যে আলোচনা রয়েছে, তা সাক্ষাৎকারে উপস্থাপন করা হয়। আসনটির রাজনৈতিক ইতিহাস, পূর্ববর্তী নির্বাচনের ফলাফল এবং ভোটারদের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কেও সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করা হয়। উপস্থিত নেতারা জানান, নির্বাচনে শক্তিশালী উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সংগঠিত প্রচার, পর্যাপ্ত জনসম্পৃক্ততা এবং সুসমন্বিত কৌশল।
আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীদের প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হয়। কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে দলটির মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মো. মহিউদ্দিন সহিদ পাটোয়ারী সভায় উপস্থিত থেকে দলের স্থানীয় কার্যক্রম ও সংগঠনের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি মাঠপর্যায়ের জনপ্রতিক্রিয়া, প্রচারণার পরিকল্পনা এবং নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে মতামত জানান। স্থানীয় নেতৃত্ব নির্বাচনী কাজে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে, সে বিষয়েও ধারণা দেওয়া হয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা আব্দুল ওহাব, উপজেলা উত্তরের সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা উত্তর সদরের সভাপতি মাওলানা মুফতি আব্দুল্লাহ নোমান, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব পাটোয়ারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বৈঠকে অংশ নেন। তারা স্থানীয় সংগঠনের অবস্থা, ভোটারদের প্রত্যাশা এবং নির্বাচনী পরিবেশের সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে মতামত প্রকাশ করেন। মাঠপর্যায়ের সংগঠন আরও সক্রিয় হলে নির্বাচনী প্রচারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তারা মনে করেন।
সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণকারীরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনা এবং ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ স্বচ্ছ হলে দলগুলো নীতি ও কর্মসূচি অনুযায়ী জনগণের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ পাবে। অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, অংশীদারিত্বমূলক রাজনীতি এবং পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে পারলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও সুস্পষ্ট ভূমিকা পালন করা সম্ভব হবে।
সভা শেষে নেতারা নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার করার পাশাপাশি পারস্পরিক সংযোগ ও আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাদের মতে, সামনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয় বজায় রাখা হলে ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ সহজ হবে এবং রাজনৈতিক কাঠামোর ভেতরে ইসলামী ধারার উপস্থিতি আরও সুসংগঠিত হবে।