1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৭ অপরাহ্ন

অ্যাপোলো ১৩-কে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পথপ্রদর্শক জিম লাভেল প্রয়াত

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫
  • ৩৮ Time View

প্রয়াত হলেন মার্কিন মহাকাশচারী জিম লাভেল, যিনি ১৯৭০ সালে অ্যাপোলো ১৩ মিশনের নাটকীয় উদ্ধার অভিযানকে সফল করে তোলেন ইতিহাসের অন্যতম বিস্ময়কর অধ্যায়ে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।

নাসা এক বিবৃতিতে বলেছে, “তিনি একটি সম্ভাব্য ট্র্যাজেডিকে পরিণত করেছিলেন এক অনন্য সাফল্যে।” মহাকাশযানে বিস্ফোরণের পর চাঁদের যাত্রা স্থগিত হলেও, লাভেলের নেতৃত্বে ক্রুরা নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসেন, যা আজও বিশ্বের অন্যতম সাহসী উদ্ধার অভিযানের উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত।
মহাকাশের পথে যাত্রা

জিম লাভেল জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৮ সালের ২৫ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রে। কৈশোরেই তাঁর আগ্রহ জন্ম নেয় মহাকাশ ও বিমানবিজ্ঞানে। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমেরিকান নৌবাহিনীতে যোগ দেন এবং প্রশিক্ষিত পাইলট হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করেন। ১৯৬২ সালে নাসার ‘নিউ নাইন’ নভোচারী দলে নির্বাচিত হন লাভেল, যেখানে ছিলেন নীল আর্মস্ট্রং ও জন ইয়াং-এর মতো ভবিষ্যতের কিংবদন্তিরা।

তাঁর প্রথম মহাকাশযাত্রা ছিল জেমিনি ৭ মিশনে, যেখানে ১৪ দিন মহাশূন্যে অবস্থান করে মানুষের দীর্ঘস্থায়ী অভিযানের সক্ষমতা যাচাই করা হয়। এরপর জেমিনি ১২ মিশনে বাজ অ্যালড্রিনের সঙ্গে অংশ নিয়ে মহাকাশে কাজ করার দক্ষতা সফলভাবে প্রমাণ করেন।
পৃথিবীর দিকে তাকানো, চাঁদের পেছন থেকে

১৯৬৮ সালের অ্যাপোলো ৮ মিশনে লাভেল ছিলেন প্রথম মানুষদের একজন, যারা চাঁদের পেছনের অংশ দেখেন। এই মিশনে তোলা হয় সেই বিখ্যাত ‘আর্থরাইজ’ ছবি, যেখানে চাঁদের দিগন্তের ওপরে পৃথিবীকে উদিত হতে দেখা যায়—এক মহাকাশ ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
“হিউস্টন, আমাদের একটা সমস্যা হয়েছে”

১৯৭০ সালের এপ্রিলে শুরু হয় তাঁর জীবনের সবচেয়ে নাটকীয় অভিযান—অ্যাপোলো ১৩। লাভেল, জ্যাক সুইগার্ট ও ফ্রেড হাইস চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেও, এক অক্সিজেন ট্যাংকের বিস্ফোরণে মহাকাশযান বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

জ্যাক সুইগার্ট প্রথম জানান, “আমার মনে হয় আমাদের একটা সমস্যা হয়েছে।” লাভেল তা নিশ্চিত করে ইতিহাসে অমর হয়ে যাওয়া বাক্যে বলেন, “হিউস্টন, আমাদের একটা সমস্যা হয়েছে।”

চাঁদে নামার জন্য প্রস্তুত লুনার মডিউল ‘অ্যাকোয়ারিয়াস’ ব্যবহৃত হয় জীবনরক্ষার আশ্রয় হিসেবে। শূন্য তাপমাত্রা, সীমিত পানি ও খাবারের মধ্যে চার দিন টিকে থাকার লড়াইয়ে তাঁরা জয়ী হন। পৃথিবীতে ফেরার সময় আবার মূল কমান্ড মডিউল ‘ওডিসি’-তে ফিরে যান তাঁরা।

পুনঃপ্রবেশের পর প্রায় ছয় মিনিট রেডিও নীরবতা ছিল, যা দেখে বিশ্বজুড়ে মানুষ ধরে নিয়েছিল তাঁরা বোধ হয় আর ফিরে আসবেন না। অবশেষে ভেসে ওঠে সুইগার্টের কণ্ঠ, প্যারাসুট খুলে যায়, এবং তাঁরা প্রশান্ত মহাসাগরে নিরাপদে অবতরণ করেন।
প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা থেকে মানবিক সাফল্যে

অ্যাপোলো ১৩ মিশনকে অনেকে নাসার একটি ব্যর্থতা হিসেবে দেখলেও, এটি একইসাথে তাঁদের অন্যতম সাফল্যের গল্প—চরম বিপর্যয়ের মধ্যে মানুষ বাঁচানোর এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শন ডাফি বলেন, “জিম লাভেল আমেরিকার মহাকাশ ইতিহাসে এক সাহসী পথিকৃত।”
অবসরের পর

১৯৭৩ সালে নৌবাহিনী থেকে অবসর নেন জিম লাভেল। এরপর ব্যবসায় ও বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকেন। তিনি লিখেছিলেন ‘Lost Moon: The Perilous Voyage of Apollo 13’ নামের আত্মজীবনীমূলক বইটি, যা পরে ১৯৯৫ সালে টম হ্যাঙ্কস অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমায় রূপ নেয়।

সেই সিনেমায় একটি ক্যামিও চরিত্রে নিজেই অভিনয় করেন লাভেল। পরিচালক চেয়েছিলেন তিনি অ্যাডমিরালের পোশাকে থাকবেন, কিন্তু লাভেল বলেছিলেন, “আমি একজন অধিনায়ক হিসেবে অবসর নিয়েছি এবং আমি অধিনায়ক হিসেবেই থাকব।” নিজের পুরনো ইউনিফর্ম পরেই তিনি সেই দৃশ্যে অংশ নেন—প্রমাণ করে দেন, তিনি শুধু মহাকাশে নয়, নীতিতেও ছিলেন অটল।
এক অনন্য মানুষ

জিম লাভেলের পরিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা তাঁর অটুট আশাবাদ, রসবোধ আর সবাইকে অসম্ভবকে সম্ভব বলে বিশ্বাস করানোর ক্ষমতাকে খুব মিস করব। তিনি ছিলেন সত্যিকারের এক অনন্য মানুষ।”

জিম লাভেলের জীবন ও কাজ শুধু মহাকাশবিজ্ঞানের জন্য নয়, মানবজাতির ইতিহাসেই এক অনন্য প্রেরণা হয়ে থাকল।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ