1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২৮ পূর্বাহ্ন

শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন দিলেন শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫
  • ৩১ Time View

ঢাকার উত্তরায় একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন লাগার ঘটনায় অসীম সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়েছেন শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী। স্কুলে ক্লাস চলাকালে দুর্ঘটনার মুখে পড়েও নিজের জীবন বাজি রেখে অন্তত ২০ শিক্ষার্থীকে নিরাপদে সরিয়ে দেন তিনি। পরে আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এই সাহসিনী। তার এই আত্মত্যাগে শোকাহত হলেও গর্বিত পুরো দেশবাসী।

সোমবার (২১ জুলাই) উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশের একটি ভবনে প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় পুরো ভবনে। চারপাশে হাহাকার, আতঙ্ক ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পরিবেশেও নিজের দায়িত্ব থেকে একচুল সরে যাননি মাহেরীন। শিশু শিক্ষার্থীদের একজন একজন করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান তিনি। একপর্যায়ে আগুনে নিজেই আটকে পড়েন। শরীরের অধিকাংশ অংশ দগ্ধ অবস্থায় তাকে দ্রুত জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। রাতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায়, রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি গ্রামের সন্তান মাহেরীন চৌধুরী ছিলেন স্থানীয় বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাহী কমিটির সভাপতি। পরিবারেও তার পরিচিতি ছিল বিশিষ্ট। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। তার বাবা মহিতুর রহমান ছিলেন জিয়ার খালাতো ভাই এবং মা সাবেরা চৌধুরী সমাজসেবায় যুক্ত ছিলেন।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে গ্রামের স্কুল মাঠে জানাজা শেষে তাকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। জানাজায় অংশ নেন হাজারো মানুষ। তার স্বামী মনসুর হেলাল কান্নাভেজা কণ্ঠে জানান, মৃত্যুর আগে মাহেরীন তার হাত ধরে বলেছিলেন, “আমার সঙ্গে আর দেখা হবে না।” তিনি আরও জানান, মাহেরীনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তুমি নিজের দুই সন্তান, তাদের কথা একবারও ভাবলে না?” উত্তরে মাহেরীন বলেছিলেন, “ওরাও তো আমার সন্তান। আমি তাদের একা রেখে আসতে পারিনি।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পর সবাই যখন জীবন বাঁচাতে ছুটছিল, তখন মাহেরীন শিশুদের নিয়ে বের হচ্ছিলেন, আবার ফিরে যাচ্ছিলেন বাকি শিক্ষার্থীদের জন্য। সেই ফেরাটা আর শেষ হয়নি।

তার আত্মত্যাগে শোকাহত বগুলাগাড়ি এলাকার মানুষও। স্থানীয় বাসিন্দা ও সোনালী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মোস্তফা আজাদ বলেন, “তিনি ছিলেন একজন আদর্শ মানুষ। বই-খাতা কিনে দিতেন এলাকার দরিদ্র শিশুদের। আমরা একজন মানবিক মানুষকে হারালাম।”

বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহুবার রহমান বলেন, “তিনি শুধু একজন শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন একজন মানবিক বীর। শিক্ষক সমাজ তার আত্মত্যাগে গর্বিত এবং গভীরভাবে শোকাহত।”

মাহেরীন চৌধুরীর এই আত্মত্যাগের স্মৃতি শুধু তার শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো জাতির হৃদয়ে দীর্ঘদিন জেগে থাকবে সাহস ও দায়িত্ববোধের অনন্য উদাহরণ হয়ে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ