নাঈম ছুটছেন আপন গতিতে

নাঈম ছুটছেন আপন গতিতে

চাকরি জীবনে শখের বসে অভিনয় শুরু করলেও নাঈম এখন মডেল ও অভিনেতা। টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপন ও অনেকগুলো ধারাবাহিকে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে তাঁকে।

বিশেষ করে বর্তমানে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত গ্রামীণ ফোনের বন্ধু প্যাকেজের বিজ্ঞাপনটি দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। তানভীর হাসানের নির্দেশনায় এ বিজ্ঞাপনটিতে তার জুটি হিসেবে কাজ করেছেন অভিনেত্রী অগ্নিলা।

নতুন এ বিজ্ঞাপনটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা বিষয়ে নাঈম বলেন, ‘‘এর আগেও তানভীর ভাইয়ের নির্দেশনায় মুরগী মার্কা ঢেউটিন শিরোনামের একটি বিজ্ঞাপনে আইনস্টাইনের চরিত্রে কাজ করেছি। ওই বিজ্ঞাপনে ‘নতুন দিনের নতুন সিদ্ধান্ত‘ সংলাপটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। আর গ্রামীণফোনের এ নতুন কাজটি করার পর ভাবতেই পারিনি এতটা সাড়া পাবো। বিজ্ঞাপনটি প্রচারের পর থেকে অনেক সাড়া পাচ্ছি।’

এছাড়া ২০১০ সালে খিজির হায়াত খানের পরিচালনায় ‘জাগো’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে তার। আর সম্প্রতি শেষ করেছেন সৈয়দ নাবিল আশরাফের নতুন চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসার রংধনু’র কাজ। এখানে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন আঁচল ও অ্যানি।

নিজের অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র  নিয়ে নাঈম বলেন, ‘‘ এখানে আমি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক যুবকের চরিত্রে অভিনয় করেছি। একদিন ট্রেনে ওঠার পর আমার পাশে বসা এক তরুণীর সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। মেয়েটিকে দেখে অদ্ভুত এক ভালোলাগা তৈরি হয় আমার মনে। কিন্তু আমার অপেক্ষায় থাকে শহরের আরেক বান্ধবী।  কিন্তু ট্রেনের মেয়েটিকে দেখার পর আমি সবকিছু ভুলে সে মেয়ের পিছু নেই। তারপর ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। আশা করি সিনেমার গল্প ও আমার অভিনয় দর্শকদের ভালো লাগবে।’

নাঈমের জন্ম মানিকগঞ্জের গোপালপুরে। বাবা আব্দুল ওয়াদুদ সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার কারণে ঢাকায় পড়াশুনা। ছোটবেলা থেকে হাসিমাখা প্রাণবন্ত এই ছেলেটি সারাক্ষণ বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে থাকতেন। নাটক ও সিনেমা পাগল এই ছেলে মতিঝিল গভ: বয়েজ স্কুলে থেকে এস.এস.সি পাস করেন ১৯৯৯ সালে।

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কোডা (কলেজ অব ডেভলপমেন্ট অলটারনেটিভ) থেকে ২০০১ সালে এইচএসসি শেষ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এআইইউবি-তে (আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশ) ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হন। তখনও মিডিয়া বা অভিনয়ের সঙ্গে নিজেকে জড়ানোর কথা চিন্তাও করেননি তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালে চ্যানেল আইয়ে মার্কেটিং অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন । কে জানত এই চাকরি থেকেই তার অভিনয় জীবনের সূত্রপাত ঘটবে।

২০০৭ সালের কথা। তখন রীতিমত  নাঈম চ্যানেল আই’র একজন মার্কেটিং এক্সিউটিভ অফিসার। হঠাৎ অফিসে একদিন জানলেন তার সিনিয়র অফিসার রুমানা রশীদ ঈশিতা ‘এক নিঝুম অরণ্যে’ নামে একটি নাটক পরিচালনা করছেন। এতে তাকে সহযোগিতার জন্য নাঈম ধামরাই শ্যুটিং লোকেশনে গেলেন।  সেখানে শ্যুটিং এর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সেই সময়ের লাক্স তারকা শানু ও সোমা।

জীবনে প্রথম তারকাদের সামনে থেকে দেখা ও লাইট, ক্যামেরা, শট সবকিছু  মিলে নাঈমের মনে তখন নতুন এক স্পন্দন শুরু হল। হঠাৎ ঈশিতা নাঈমকে ডেকে বললেন, তুমি তোমার সঙ্গে করে কি কি জামা কাপড় নিয়ে আসছ? নাঈম তো শুনে অবাক, কেন আপু? ঈশিতা হাসতে হাসতে বলল এই নাটকের প্রধান চরিত্রে তুমি অভিনয় করবে, এটা আমার সিদ্ধান্ত।

এ বিষয়ে নাঈম বাংলানিউজকে  বলেন, ‘কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না, এমনকি আমি কথাটা শুনে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিলাম। তারপর কোন রকম কাপড় যোগাড় করে অভিনেতা হিসেবে জীবনে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম। ‘

এরপর সবার উৎসাহে ও ইচ্ছায় ফটোগ্রাফার ইকবাল আহমেদের কাছে ব্যক্তিগত ফটোসেশন করে দেশের নামকরা বিজ্ঞাপন এজেন্সিতে ছবি জমা দেন নাঈম। ২০০৮ সালে অমিতাভ রেজার পরিচালনায় প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হবার সুযোগ ঘটে তার। ‘মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলি’-এর এই বিজ্ঞাপনের সুবাদে সবার কাছে মডেল হিসেবেও অভিষেক ঘটে তার মিডিয়াতে।

এর মধ্যে চ্যানেল আই-এর ‘মরুর বুকে সবুজ বাংলাদেশ’ ও ‘আইস্পিড’ নামে দুটো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনাও করেন তিনি।

৪ বছর আগে ঈশিতা পরিচালনায় ‘এক নিঝুম অরণ্যে’ নাটকের মাধ্যমে অভিষেক হলেও এখন নাঈমের বেশ কিছু ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হচ্ছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে। সেগুলো হলো এনটিভিতে সকাল আহমেদের ‘টার্মিনাল’, সাইফুল ইসলাম মান্নুর ‘অজানা গন্তব্যে’, চ্যানেল আই-এ সকাল আহমেদের ‘সীমানা পেরিয়ে’, এনটিভিতে রাইয়ান খানের ‘অচেনা প্রতিবিম্ব’। তাছাড়া  বেশ কিছু এক ঘণ্টার নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি।

সেগুলোর মধ্যে কৌশিক শংকর দাসের ‘বন্ধুত্ব ভালবাসা ইত্যাদি’, শিহাব শাহীনের ‘ইট কাঠের খাঁচা’, ইফতেখার আহমেদ ফাহমীর ‘পেন্ডুলাম’, রুমানা রশীদ ইশিতার ‘রবে নীরবে’ ও ‘বাতাস খুজে পেল কাশবন’, মাহফুজ আহমেদের ‘প্রেম আসে যাই’ ,আবুল হায়াতের ‘অতি প্রাকৃতিক’ এবং এবারের ঈদে

নাঈমের অভিনীত দেশটিভিতে প্রচারিত মাসুদ হাসান উজ্জলের ‘হিমশীতল রেফ্রিজারেটর’, এবং চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত ফয়সাল রিপনের ‘নায়িকার খোঁজে’ নাটকগুলো দারুন জনপ্রিয়তা পায়।

কাজের ব্যস্ততার মাঝেও অনার্স কমপ্লিট করে এখন নর্থ সাউথে ইংরেজি বিষয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়ন করছেন নাঈম। পড়াশুনা ও শ্যুটিং-এর বাইরে অবসরে বাবা-মার সঙ্গে গল্প করে সময় কাটান এবং সুযোগ পেলেই তার প্রিয় মেটালিক সিলভার রং-এর (মার্ক-২) মডেলের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন লং ড্রাইভে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে তার অভিনীত বেশকিছু মেগাসিরিয়াল বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখতে পাবে দর্শকরা। নাটকগুলো হচ্ছে সকাল আহমেদের ‘হাডুডু’, অরণ্য আনোয়ারের ‘আমার কিছু মেঘ আছে’, ও আলভী আহমেদের ‘শোধ’।

অভিনয় জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে নাঈম বলেন, ‘কখনও ভাবিনি অভিনেতা হব। আর এখন অভিনয়ই আমার ধ্যান-জ্ঞান ও আমার কাছে চমৎকার একটি পেশা এটি। একটা মানুষ অনেকগুলো মানুষের জীবনের বিভিন্ন চরিত্র অভিনয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারে। আর সবসময় বিখ্যাত হবার স্বপ্ন দেখতাম। আমি কাজের ক্ষেত্রে সব সময়ই অগ্রাধিকার দেই কোথায় নিজেকে নতুন ভাবে উপস্থাপনের সুযোগ পাওয়া যাবে। নাটক কিংবা চলচ্চিত্রে বিভিন্ন ভাল চরিত্রের মাধ্যমে নিজেকে দর্শকদের সামনে বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করতে চাই।’

বিনোদন