1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০৪ অপরাহ্ন

ইসলাম ও ইহুদি বিদ্বেষ এবার ব্রিটিশ নির্বাচনের বড় ইস্যু

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ১৮ Time View

এবার ব্রিটিশ নির্বাচনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইহুদিদের ভোট আকর্ষণ করতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। ব্রিটেনে নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে কোনো প্রধানমন্ত্রী ধর্মকে সামনে রেখে এগুবেন এটা গত কয়েক বছর আগেও চিন্তার বাইরে ছিল।

নির্বাচনের প্রচারণার সময় গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের মালিকানাধীন একটি বেকারিতে থেমেছিলেন। সে সময় হঠাৎ করে একজন চিৎকার করে বলতে লাগলেন, “আপনি আমাদের ওই লোকটার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।” বিরোধী নেতা জেরেমি করবিনের কথা বলছিলেন লোকটি। গণমাধ্যমের সামনে প্রচারণার জন্য এটি বেশ সতর্কভাবে পরিকল্পিত ছিল। এটা পরিষ্কার যে বরিস জনসন ইহুদিদের ভোট আকর্ষণ করতে চাইছেন আর সেজন্যেই ইহুদিদের সাথে জনসংযোগ।

এবার নির্বাচনী প্রচারণায় যে বিষয়গুলো বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো- ইসলাম ও ইহুদি বিদ্বেষ, হিন্দু ভোটার আর বর্ণবাদ। ব্রেক্সিট নিয়েও এবার ব্যাপক বিভেদ লক্ষণীয়।

কেন ইহুদিদের ভোট আকর্ষণের চেষ্টা?

যুক্তরাজ্যে মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইহুদিদের সংখ্যা মোটে ০.৫%। তাদের ভোটে বড়সড় কোন বিপর্যয় ঘটে যাবে তেমন নয়। বরিস জনসন তাদের জন্য প্রচারণায় সময় ব্যয় করবেন সেটি ভাবার বোধহয় আপাতদৃষ্টিতে কোন কারণ নেই।

কিন্তু এখানে মুল বিষয় হলো বিরোধী লেবার পার্টির পরিচয় সাধারণত বর্ণবাদ বিরোধী হিসেবে। তারা সবসময় সংখ্যালঘু নানা গোষ্ঠীর সমর্থন পেয়েছেন।

কিন্তু ২০১৫ সালে যখন জেরেমি করবিন দলের নেতা হলেন তাকে বলা হয়েছে তিনি লেবার পার্টির নেতাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচাইতে বাম ঘেঁষা।

ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে লেবার পার্টি সব সময়। লেবার পার্টি বড় কর্পোরেট বাণিজ্যের বিরুদ্ধেও কথা বলে। কিন্তু করবিন নেতৃত্বে আসার পর সেটির মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে বলে মনে করা হয়।

তাঁকে ইহুদিবিদ্বেষী বলে মনে করেন অনেকেই। ইসরাইলের সমালোচনা ইহুদি বিদ্বেষে রূপ নিচ্ছে কিনা, সে প্রসঙ্গ এর আগেও আলোচিত হয়েছে। ইহুদিরা ব্যাংক ও আর্থিক লেনদেনের জন্য বিখ্যাত। এখন কর্পোরেট বাণিজ্যের বিরোধীতাও কি ইহুদিদের বিরোধীতা কি না সেটাও বলা হচ্ছে। এসব কারণে সাম্প্রতিক সময় যুক্তরাজ্যের ইহুদি জনগোষ্ঠীর সমর্থন হারিয়েছে লেবার পার্টি।

আগে বারবার ইহুদি বিদ্বেষকে সমালোচনা করেছেন জেরেমি করবিন। ইহুদি বিদ্বেষ বিষয়ক অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্তে তার দল ধীরগতিতে কাজ করেছে তেমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেরেমি করবিন ক্ষমাও চেয়েছেন।

ইহুদিদের ভোট না পেলে তার ওপর লেবার পার্টির জয়-পরাজয় যে খুব বেশি নির্ভর করবে তা হয়ত নয়। কিন্তু ইহুদি বিদ্বেষী তকমা দলের ইমেজের জন্য ইতিমধ্যেই বেশ ক্ষতির কারণ হয়েছে। যা অন্যদের ভোটকেও প্রভাবিত করতে পারে। সেটিই হয়ত এর কারণ।

ইসলামবিদ্বেষ কেন ইস্যু?

জেরেমি করবিন যেমন ইহুদি বিদ্বেষী হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন তেমনি তার প্রধান প্রতিপক্ষ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে সমালোচনা হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার। গত মাসেই ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিল বরিস জনসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে তিনি, ‘দেশটিতে যে ইসলাম বিদ্বেষ রয়েছে সেটি পুরোপুরি নাকচ করে দিচ্ছেন এবং সে ব্যাপারে শঠতার আশ্রয় নিচ্ছেন’।

বরিস জনসনের দল ‘ইসলাম বিদ্বেষকে চলতে দিয়েছে, এটিকে সমাজে বাড়তে সাহায্য করেছে এবং এমন বর্ণবাদ নির্মূল করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে’- এটাই তাদের অভিযোগ।

এক প্রবন্ধে তিনি ইসলামি পোশাক ‘বোরকা’ সম্পর্কে সমালোচনা করেছিলেন। এসব সমালোচনা জনসন নিজেও এক অর্থে উস্কে দিয়েছেন তার কিছু মন্তব্যের মাধ্যমে। সেখানে তিনি লিখেছিলেন বোরকা ‘নিপীড়নমূলক’ পোশাক। তিনি বোরকা সম্পর্কে কটূক্তি করে আরও বলেছেন, যে নারীরা বোরকা পরেন তাদের দেখতে ‘ব্যাংক ডাকাত’ বলে মনে হয়।

এসব মন্তব্যের জন্য যদিও জনসন ক্ষমা চেয়েছেন। তার দলের বিরুদ্ধে ইসলাম বিদ্বেষ সম্পর্কিত যে অভিযোগ, বড়দিনের আগেই তার তদন্ত হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তবে এবার প্রচারণায় ইসলাম বিদ্বেষ ইস্যুকে টেনে কনজারভেটিভ পার্টিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা বেশ লক্ষণীয়।

যুক্তরাজ্যের মুসলমানদের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে সমর্থন তেমন একটা নেই। ২০১৭ সালের নির্বাচনে মুসলিমদের ৮৭ শতাংশই লেবার পার্টিকে ভোট দিয়েছে। ব্রিটেনে মুসলিম জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ।

মুসলমানদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা

লন্ডনভিত্তিক একটি লবি গ্রুপ মুসলিম পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি মুসলিমদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠাচ্ছে। যাতে বলা হচ্ছে কনজারভেটিভ প্রার্থীদের বিপক্ষে ভোট দিতে, যা বাজফিড ওয়েবসাইটে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

কনজারভেটিভ প্রার্থীরা ‘ইসলাম বিদ্বেষ উস্কে দিতে ভূমিকা রেখেছে, তারা ইসরায়েলের সমর্থক অথবা কাশ্মীরে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের যে সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সেটির সমর্থক’- এমনটাই অভিযোগ করা হয় তাতে।

যদিও হোয়াটসঅ্যাপে এমন বার্তাকে বিভেদ সৃষ্টিকারী ও নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করা হচ্ছে। তবে মুসলিম পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি বলছে, কনজারভেটিভ প্রার্থীদের ভোটের পুরনো ইতিহাস ঘাঁটলেই তাদের অভিযোগের সত্যতা যাচাই হবে।

হিন্দুদের পছন্দ এবার কোন পার্টিতে?

ইহুদি ও মুসলিম ভোটারদের মত পরিবর্তনের হাওয়া দেখা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের মত পরিবর্তন করছেন। তারাও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতো লেবার পার্টিকেই মূলত সমর্থন দিয়ে এসেছেন। কিন্তু সেই সমর্থন কিছুটা কনজারভেটিভদের প্রতি ঝুঁকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

ব্রিটেনে ১০ লাখের মতো হিন্দু জনগোষ্ঠী রয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কনজারভেটিভদের পক্ষে হিন্দুদের ভোট বেড়েছে দশ শতাংশ। সেটি এবার আরও বাড়বে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

হিন্দুদের মত পরিবর্তনের মূল কারণ কাশ্মীর ইস্যু।

ভারতীয় বিজেপির সমর্থক গোষ্ঠী ‘দা ওভারসিজ ফ্রেন্ডস’ সম্প্রতি টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছে, যুক্তরাজ্যের হিন্দুরা যাতে লেবার পার্টকে ভোট না দেয় সেজন্য তারা কনজারভেটিভ প্রার্থীদের সাথে কাজ করছেন।

কাশ্মীর নিয়ে বিজেপি সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছে লেবার পার্টি। সেটিই এখানে কারণ। এই বিষয়টিও প্রচারণার অংশ হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে।

পাকিস্তানের সমর্থক লেবার পার্টি- এমন একটি বার্তা যুক্তরাজ্যে হিন্দুদের কাছে ছড়ানো হচ্ছে। যা কিনা অন্য একটি বিষয়কে ঘিরে পুরনো বার্তা। এসব বার্তায় বিশ্বাস না করার জন্য হিন্দুদের প্রতি আহবান জানাচ্ছে লেবার পার্টির প্রার্থীরা এবং তারাও কাশ্মীর প্রসঙ্গে মরিয়া হয়ে হিন্দুদের মন পরিবর্তনের চেষ্টা করছে।

যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে এবার এসব বিষয় মিলে রাজনীতিতে ধর্ম ও বিভিন্ন জাতীয় বিষয় জড়িয়ে তিক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ