1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন

ধর্ষিতা কিশোরী আঁচ করেছিল, ধর্ষক রাজনীতিবিদ তাকে ছাড়বে না, ঘটলও তাই

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০১৯
  • ২১ Time View

২০১৭ সালের ঘটনা। চাকরির টোপ দিয়ে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের উন্নাওতে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে বিজেপি বিধায়ক সেঙ্গার। মেয়েটির বয়স তখন ছিল ১৬। এদিকে, রবিবার দুপুরে উন্নাও থেকে রায়বরেলি যাওয়ার পথে ওই মেয়ের গাড়িতে ধাক্কা মারে একটি ট্রাক। ঘটনাস্থলেই তাঁর দুই আত্মীয়ার মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখন চিকিত্‍সাধীন রয়েছেন মেয়েটি এবং তাঁর আইনজীবী। এর আগে ওই মেয়েকে হুমকি দিয়েছিলেন কুলদীপ সিং সেঙ্গারের লোকেরা। তাই প্রাণঘাতী হামলার এই আশঙ্কা থেকে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।

গত ১২ জুলাই বিচারপতি গগৈকে দেওয়া চিঠিতে নির্যাতিতা লেখেছিলেন,’‌.‌.‌.‌যারা হুমকি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। বাড়িতে কিছু লোক এসে মামলা তুলে নিতে শাসিয়ে গেছে। আমার পরিবারের সবাইকে ভুয়া মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠাতে পারে তারা।’

পরের দিন ১৩ জুলাই হুমকি বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন নির্যাতিতার মা। রেজিস্ট্রি করা চিঠি পাঠিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, দু’‌বার তাঁদের বাড়ি এসে হুমকি দিয়ে গেছে একদল লোক। তিনি লিখেছিলেন, পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন। মেয়ের ধর্ষণে অভিযুক্ত বিজেপি নেতা, উত্তরপ্রদেশের বঙ্গারমউয়ের বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার প্রভাব খাটিয়ে তাঁর পরিবারকে হেনস্তা করছেন। এই দুটি চিঠি প্রাপ্তির ক’‌দিন পর রবিবার ২৮ জুলাই রায়বরেলির কাছে গুরুবক্সগঞ্জে ঘটল ট্রাকের ধাক্কার ভয়াবহ ঘটনাটি।

সিবিআই তদন্তে চলতি বছরের এপ্রিলে গ্রেপ্তার হন সেঙ্গার। জেলে থাকা সত্ত্বেও দুর্ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ উঠছে তাঁর বিরুদ্ধে। সরব বিরোধীরা। অস্বস্তিতে পড়ে সেঙ্গারকে আজ দল থেকে সাসপেন্ড করল বিজেপি। রবিবারের ঘটনায় সেঙ্গারের হাত আছে বলে গতকাল গুরুবক্সগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেছিলেন মেয়েটির কাকা রাজেশ সিং। তারই প্রেক্ষিতে বিধায়কের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

এর আগে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ভদ্র টুইট করেন, ‘‌ঈশ্বরের দোহাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেরি হয়ে যাওয়ার আগে ওই অপরাধী এবং তাঁর ভাইকে আপনার দল যে রাজনৈতিক ক্ষমতা দিয়েছেন, তা ফিরিয়ে নিন।’‌ মেয়েটির কাকার দায়ের করা মামলার প্রতিলিপি পোস্ট করে প্রিয়াঙ্কার আরও একটি টুইটে বলেন, ‘‌এফআইআর-‌এ স্পষ্ট যে মেয়েটির পরিবারকে শাসানো হয়েছিল। তারা আতঙ্কে ছিলেন। দুর্ঘটনা ঘটানো হতে পারে, এমনও জানানো হয়েছিল।’‌

অপর একটি টুইটে প্রিয়াঙ্কা জানান, ‌কুলদীপ সেঙ্গারের মতো লোকদের ক্ষমতা ও নিরাপত্তা দিয়ে, তাঁদের শিকার যাঁরা, তাঁদের বিচ্ছিন্ন করে রাখেন কেন?‌’‌ ‌সেঙ্গার এবং তাঁর ভাইয়ের রাজনৈতিক ক্ষমতার বলয় তুলে নিতে বলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, নির্যাতিতার বাবা সেঙ্গারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে যান। সে সময় সেঙ্গারের ভাইয়ের কথায় তাঁকে ভুয়া মামলায় আটক করে পুলিশ। পরে হাজতে গিয়ে নির্যাতিতার বাবাকে পিটিয়ে মারে সেঙ্গারের ভাই এবং আরও কয়েকজন।

এদিকে, রবিবারের দুর্ঘটনায় নির্যাতিতা এবং তাঁর আইনজীবী দু’‌জনেরই অবস্থা ‘‌অত্যন্ত সঙ্কটজনক’‌।‌ লখনউয়ের কিং জর্জেস হাসপাতালের চিকিত্‍সকেরা এ কথা জানিয়েছেন। আজ সকালে মেয়েটির অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।

তাঁর চিকিত্‍সার দায়িত্বে থাকা ডা.‌সন্দীপ তিওয়ারি জানিয়েছেন, মেয়েটির কলারবোন, বুকের কয়েকটা পাঁজর এবং ডান উরুর হাড় ভেঙেছে। ফুসফুসে ফুটো হওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাঁর আইনজীবীর মাথায় ১৩টি চিড় দেখা দিয়েছে। দু’‌জনেই ভেন্টিলেশনে।‌ দু’‌জনেরই অনেক রক্তের প্রয়োজন।

মেয়েটি এবং তাঁর আইনজীবীর চিকিত্‍সার খরচ বহনের কথা ঘোষণা দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। তবে মেয়েটির এক আত্মীয় বলেছেন,‌রবিবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ওযুধ ও পরীক্ষা বাবদ ১৪ হাজার টাকা খরচ করেছি। বিলই তার প্রমাণ।’‌

এদিকে সর্বশেষে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, উন্নাও গণধর্ষণের ঘটনায় কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ৷ নিগৃহীতার পরিবারের পক্ষ থেকে ১২ জুলাই চিঠি লিখে প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করা হলেও, কেন দ্রুত কোনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হলো না, আজ এই প্রশ্ন তুললেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। একইসঙ্গে, শীর্ষ আদালতের রেজিস্ট্রির কাছে প্রশ্ন, কেন চিঠির বিষয়টি তাঁকে জানাতে এতো বিলম্ব করা হয়েছে? এ বিষয়ে দ্রুত জানাতেও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

দিন তিনেক আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন উন্নাও ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগকারিনী ৷ তারপরই গতকাল কিশোরীর পরিবারের জানানো হয়, বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের লোকজন যে ক্রমাগত তাঁদের হুমকি দিচ্ছে, প্রাণে মারার ভয় দেখাচ্ছে, সে কথা এ মাসের ১২ তারিখেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে জানানো হয়েছিল ৷ জানিয়েছিলেন কিশোরীর মা, বোন ও কাকিমা। অভিযোগ জানানো হয়েছিল পুলিশেও । এর সঙ্গে ছিল একটি ভিডিও-নথিও।

সেই চিঠির প্রসঙ্গেই আজ মুখ খুললেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তিনি বলেন, আজ সকালে বিভিন্ন কাগজে প্রকাশিত হয়েছে উন্নাওতে নিগৃহীতা এবং তার পরিবার সুপ্রিম কোর্টে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু, গতকাল এ বিষয়ে আমাকে অবগত করা হয়েছে ৷ কেন এর আগে আমাকে চিঠির বিষয়টি জানানো হলো না ৷ এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের গঠনমূলক এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

গতকাল কিশোরীর পরিবারের পক্ষে একটি ভিডিও সংবাদমাধ্যমের সামনে আনা হয়েছিল ৷ সেখানে দেখা যাচ্ছিল, নীল শার্ট পরা একটি লোক ঠায় কিশোরীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাকে বারবার চলে যেতে বলা হলেও সে বিন্দুমাত্র নড়ছে না। লোকটি উন্নাও ধর্ষণ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত শশী সিংহের স্বামী ৷ শশীই কিশোরীকে কুলদীপের কাছে নিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। শশীর ছেলে এবং গাড়িচালকের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে শশী জেলে রয়েছে।

মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ, শশীর ছেলে-স্বামী এবং কুলদীপের ভাই মনোজ নিয়মিত শাসাচ্ছিল তাদের। গত ১২ তারিখে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো চিঠিতে এই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়েছিল ৷ আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ প্রসঙ্গটি সুপ্রিম কোর্টে আলোচনা হওয়ার কথা ৷ চিঠি এবং ভিডিও প্রকাশ্যে এলে নিগৃহীতা কী জানাতে চেয়েছিলেন আদালতের কাছে তাও স্পষ্ট হয়ে যাবে।

সূত্র : ডেইলি হান্ট, ইটিভি ভারত

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ