1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন

বাবার কাঁধে মেয়ের মরদেহ উঠবে কখনোই ভাবিনি

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৯
  • ৪৩ Time View

ছুটির দিন পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটান আব্দুস সালাম। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখেন। দুপুরে জুমার নামাজ শেষে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও করেন। মাগরিবের নামাজ শেষে সবার জন্য আনেন সন্ধ্যার নাশতা। কিন্তু গতকাল শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় সবার জন্য নাশতা নিয়ে এসে জানতে পারেন আদরের ছোট্ট সায়মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথমে স্বাভাবিক ভেবেই নাশতার প্যাকেট হাতে মেয়েকে খুঁজতে যান। আধাঘণ্টা ধরে খোঁজার পর ক্লান্ত হয়ে পড়েন বাবা আব্দুস সালাম। তবুও থেমে থাকেননি। আশপাশে খুঁজতে খুঁজতে ভবনের ৯ম তলায় গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে ছোট্ট সায়মার নিথর দেহ। ততোক্ষণে সব আশা শেষ।

খবর পেয়ে পুলিশ আসে, সিআইডির ফরেনসিক টিম আলামত সংগ্রহ করে, ঘটনা তদন্তে ডিবি টিম পরিদর্শনে আসে। কিন্তু বাকরুদ্ধ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন আব্দুস সালাম। নাশতার প্যাকেটটি তখনও ছিল তার হাতে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে সায়মার বাবা আব্দুস সালাম ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সামিয়া আফরিন সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না পরিবার। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওয়ারীর বনগ্রাম সড়কের ১৩৯ নং নবনির্মিত ভবনটির নবম তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটের ভেতরে সায়মাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা।

ভবনটির ছয়তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকত সায়মা। বাবা আব্দুস সালাম নবাবপুরে মেশিনারিজের ব্যবসা করেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা। পড়তো ওয়ারী সিলভারডেল স্কুলের নার্সারিতে।

শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য সায়মার মরদেহ নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। মেয়ের মরদেহ নিতে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে আসেন বাবা আব্দুস সালামও।

সায়মাদের বাসার বিপরীত পাশের ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন মনির হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সায়মা আমার বড় ছেলে তামিমের সঙ্গে খেলাধুলা করত। গতকাল সন্ধ্যায়ও সায়মা এসেছিল। কিন্তু ছেলে তামিম ছিল ৮ম তলার পারভেজ ভাইয়ের বাসায়। ওখানে তার মেয়ের সাথে খেলছিল। ভাবি অসুস্থ থাকায় সায়মাকে পরে আসতে বলি। সায়মা বাসা থেকে বেরিয়ে লিফটেও উঠেছিল। কিন্তু আর নামেনি। এর পৌনে এক ঘণ্টা পর জানতে পারি সায়মাকে হত্যা করা হয়েছে।’

ঢামেক মর্গের সামনে সায়মার বাবা আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাবা হয়ে মেয়ের মরদেহ কাটাছেড়া করতে দেখতে হচ্ছে। বাবা হয়ে নিজের কাঁধে শিশুকন্যার মরদেহ উঠাতে হবে কখনোই ভাবিনি। এ ভার সইবার নয়।’

আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় ছেলে দেশের বাইরে থাকে। বড় মেয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে বাড়িতে আসার পর সায়মাকে পড়তে বসায়। গতকালও আসরের পর পড়াশোনা শেষ করে মাগরিবের নামাজের সময় খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সায়মা।’

তিনি বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ড কোনো বাবাই সহ্য করতে পারবেন না। আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সব অভিভাবক ও গণমাধ্যমের ভূমিকা দরকার। আর কোনো শিশুর যেন এমন ঘটনার শিকার হতে না হয়।’

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তার (সায়মা) শরীরে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ধর্ষণের পর তাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ময়নাতদন্তে তার যৌনাঙ্গে ক্ষত চিহ্ন, মুখে রক্ত ও আঘাতের চিহ্ন, ঠোঁটে কামরের দাগ দেখা গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

অন্যদিকে এ ঘটনায় সায়মার বাবা আব্দুস সালাম বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় ভবন মালিকসহ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সামসুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগ ওই শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। মামলা হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছি। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ