কিউইদের ছুড়ে দেয়া ২৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১০ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে টাইগাররা। সেই সাথে আয়ারল্যান্ড সফর শেষ করেছে জয় দিয়ে। এই সিরিজে আগেই চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত করেছে কিউইরা। টাইগাররা সেখানে রানার্স আপ। কিন্তু এই প্রতিপক্ষকে হারের তিক্ততা দিয়ে ‘সব ভালো তার শেষ ভালো যার’ প্রবাদে হাসিমাখা মুখে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য ইংল্যান্ডের পথ ধরতে পারল টাইগাররা। আইসিসির নতুন র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ৭ থেকে ৬ এ চলে আসার কথা এই জয়ে।
সাদা চোখে দেখলে সাধারণ একটি ম্যাচই তো। আয়ারল্যান্ডকে আগের ম্যাচে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ ইতোমধ্যেই জিতে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। তবে বাংলাদেশের পাওয়ার ছিল অনেক কিছুই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগে ৮ জয় আছে বাংলাদেশর। কিন্তু তার প্রতিটি বাংলাদেশের মাটিতেই। বিদেশের মাটিতে এতোদিন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো জয় ছিল না। শেষ চার ম্যাচে হারতে হয়েছে। এই আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম দেখাতেও একই হতাশা। কিন্তু ক্লনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে মাশরাফি বিন মুর্তজার বাংলাদেশ গড়ল নতুন ইতিহাস।
কত স্বপ্ন আর কত আকাঙ্খা কত সমীকরণ জড়িয়ে ছিল এই একটি ম্যাচ ঘিরে। এই একটি ম্যাচে হবে অনেক অর্জন। মোটা দাগে বললে তিনটি বড় বড় অর্জন তো হবেই বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডই একমাত্র দেশ বাকি ছিল, যাদেরকে বিদেশের মাটিতে পরাজয়ের স্বাদ দিতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই অপূর্ণ স্বাদ আস্বাদন করা। একই সঙ্গে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে শ্রীলংকাকে পেছনে ফেলে ছয় নম্বরে উঠে যাওয়া এবং সর্বশেষ বড় প্রাপ্তি, ২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলা নিশ্চিত করে ফেলা! এটি জেনেই মাঠে নেমেছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
আজ বুধবার দলীয় নৈপুণ্যে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ‘অনেক অর্জনের’ এক জয়কে সঙ্গী করে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।
টস হেরে এই ম্যাচে দারুণ শুরু ছিল নিউজিল্যান্ডের। তারা বড় স্কোর গড়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে বাংলাদেশি বোলারদের সামনে লড়াইয়ে তাল মেলাতে পারেনি। এক পর্যায়ে তাই দিশেহারা হয়ে ৮ উইকেটে ২৭০ রানে থেমেছে। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বশীলতায় ১০ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
মাশরাফি-সাকিবরা জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তামিম ইকবাল ইনিংসের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বল হারালেন। সৌম্য সরকার আবার ওই ওভারেই গোল্ডেন ডাক মেরে ফিরলেন।
‘অনেক অর্জনের’ এক ঐতিহাসিক জয় টাইগারদের!
দলীয় ৭ রানের মাথায় বাংলাদেশ সৌম্য সরকারকে হারানোর পর তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমানের দুর্দান্ত জুটিতে কক্ষপথে ফেরে বাংলাদেশ।
‘অনেক অর্জনের’ এক ঐতিহাসিক জয় টাইগারদের!
দ্বিতীয় উইকেটে নিউজিল্যান্ডের ১৩৩ রানের জবাবে তামিম-সাব্বির রহমান মিলে উপহার দিলেন ২৬.৩ ওভারে ১৩৬ রানের জুটি। সেঞ্চুরি কার হবে?
এই যখন ভাবনা তখন নিজেদের ভুলে ১ উইকেটে ১৪৩ থেকে ১৬০ রানে ৪ উইকেট হারানো দল বাংলাদেশ! তামিম তুলে মেরে আউট ৬৫ রানে। ৫ রান পর সাব্বির রহমান অলস এক রান আউটের শিকার ব্যক্তিগত ৬৫ রানেই। মোসাদ্দেক হোসেন (১০) রান করে সহজে এলবিডাব্লিউর শিকার হন।
‘অনেক অর্জনের’ এক ঐতিহাসিক জয় টাইগারদের!
দেখতে না দেখতে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। পাল্টা আঘাতের প্রেরণায় জেগে ওঠে নিউজিল্যান্ড। ক্রিজে তখন একেবারে নতুন কিন্তু অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসান।
সাকিব ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের দুই অভিজ্ঞ সেনানি মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক জুটি বাঁধেন। এই দুজনের দিকেই তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। টাইগার সমর্থকদের হতাশ করেননি দুই ভায়রা ভাই।
‘অনেক অর্জনের’ এক ঐতিহাসিক জয় টাইগারদের!
দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে স্মরণীয় জয় এনে দেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। ৬০ বলে ৭২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন দুজন। যে জয় মনে রাখার অনেক দিন। আর বিপদে দারুণ খেলে জয় আনা মুশফিকই তো ম্যাচের সেরা!
তামিম ৮০ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৬৫ রান করে আউট হন। সাব্বির ৮৩ বলে ৯টি চারের সাহায্যে সমান ৬৫ রান করে রানআউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। মুশফিক ৪৫ বলে ৪৫ ও মাহমুদউল্লাহ ৩৬ বলে করেন ৪৬ রান। মোসাদ্দেক ১৩ বলে ১০ রান করে আউট হন। সাকিব আউট হওয়ার আগে করেন ১৯ রান
নিউজিল্যান্ডের হয়ে জিতান প্যাটেল সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন হামিশ বেনেট ও মিচেল স্যান্টনার।
এর আগে ডাবলিনের ক্লনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ড মাঠে টস জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান মাশরাফি। শুরুটা নিউজিল্যান্ড দুর্দান্ত করলেও শেষ দিকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ফলে নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৭০ রানেই আটকে যায় কিউইরা। নিউজিল্যান্ডের হয়ে টম ল্যাথাম সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেন। এছাড়া নেইল ব্রম ৬৩ এবং রস টেলর করেন ৬০ রান।
‘অনেক অর্জনের’ এক ঐতিহাসিক জয় টাইগারদের!
এছাড়া কোরি অ্যান্ডারসন ২৪ রানের ইনিংস খেললেও লুক রনকি (২), মিচেল স্যান্টনার (০) ও জেমস নিশাম (৬) ব্যর্থ হয়েই ফেরেন।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন নাসির হোসেন, সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি। একটি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড : ২৭০/৮ (ল্যাথাম ৮৪, ব্রুম ৬৩, টেলর ৬০*, অ্যান্ডারসন ২৪, প্যাটেল ৭*, নিশাম ৬, হেনরি ৫, রনকি ২, মুনরো ১, সান্টনার ০; সাকিব ২/৪১, নাসির ২/৪৭, মাশরাফি ২/৫২, মোস্তাফিজ ১/৪৬, রুবেল ১/৫৬, মোসাদ্দেক ০/১৪)।
বাংলাদেশ : ৪৮.২ ওভারে ২৭১/৫ (তামিম ৬৫, সৌম্য ০, সাব্বির ৬৫, মোসাদ্দেক ১০, মুশফিক অপরাজিত ৪৫, সাকিব ১৯, মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ৪৬। প্যাটেল ৫৫/২, স্যান্টনার ৫৩/১।
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।