1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪২ অপরাহ্ন

নিজেদের শততম টেস্টে ঐতিহাসিক জয় পেলো বাংলাদেশ

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭
  • ৫৭ Time View

কলম্বোর পি. সারা ওভালে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে শততম টেস্টে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ। ক্রিকেট ইতিহাসে চতুর্থ দেশ হিসেবে শততম ম্যাচে জয় তুলে নিলো টাইগাররা। জয় বাংলা সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিক শ্রীলংকাকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ১-১ সমতায় শ্রীলংকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ করলো মুশফিক বাহিনী। ম্যাচের সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল ও সিরিজ সেরা হন সাকিব আল হাসান।
ম্যাচের চতুর্থ দিন শেষেই শততম টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখছিলো বাংলাদেশ। কারণ দিন শেষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৬৮ রান করে শ্রীলংকা। ২ উইকেট হাতে নিয়ে ১৩৯ রানে এগিয়ে ছিলো লংকানরা। তাই ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনে শ্রীলংকার বাকী ২ উইকেট দ্রুত তুলে নিয়ে টার্গেটা হাতে নাগালে রেখে ম্যাচ জয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিলো মুশফিক-সাকিবরা।
কিন্তু টেলএন্ডার হলেও দিনের শুরুতে পুরোপুরি ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন আগের দিন অপরাজিত থাকা দিলরুয়ান পেরেরা ও সুরাঙ্গা লাকমল। যথাক্রমে ২৬ ও ১৬ রান নিয়ে পেরেরা ও লাকমাল বাংলাদেশ বোলারদেও কোন পাত্তাই দিচ্ছিলেন না। শ্রীলংকার স্কোরবোর্ডে মহামূল্যবান রান যোগ হচ্ছিল।
এর মাঝে আম্পায়ারদের ভুলে আরও বেশি সাহস পেয়ে যান পেরেরা ও লাকমল। ফলে দলীয় স্কোর ৩শ’ পেরিয়ে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন শ্রীলংকার দুই টেল-এন্ডার ব্যাটসম্যান। অবশেষে দলীয় ৩১৮ রানে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান পেরেরা ও লাকমল। বাংলাদেশ ফিল্ডারদের দক্ষতা ও নিজেদের ভুলে বিচ্ছিন্ন হতে হয় এ দু’জনকে। বাংলাদেশের শুভাশিষ ও মিরাজের দক্ষতায় রান আউটের ফাঁদে পড়েন পেরেরা। ১৭৪ বল মোকাবেলায় ৬টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৫০ রান করে আউট হন তিনি।
পেরেরা বিদায়ের ৪ বল পরই থামতে হয় লাকমলকেও। মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাকিবের চতুর্থ শিকার হন তিনি। ৪৮ বলে চার বাউন্ডারির সাহায্যে ৪২ রান করা লাকমল আউট হলে শ্রীলংকা ৩১৯ রানে গুটিয়ে গেলে ম্যাচ জয়ের জন্য ১৯১ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সাকিব ৪টি ও মুস্তাফিজুর ৩টি উইকেট নেন।
শততম টেস্ট ও দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ের জন্য ১৯১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা দেখে শুনেই করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ও সৌম্য সরকার। ৭ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ২১ রান যোগ করেন তারা।
তবে পরের ওভারেই বিদায় নিতে হয় সৌম্যকে। শ্রীলংকার অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথের শিকার হবার আগে মাত্র ১০ রান করেন সৌম্য। অষ্টম ওভারের পঞ্চম বলে সৌম্যকে শিকার করে জ্বলে উঠেন হেরাথ। পরের বলেই তিন নম্বরে নামা ইমরুল কায়েসকেও কোন রান করার আগেই শিকার করেন হেরাথ। দলীয় ২২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়লে টাইগারদের জয়ের স্বপ্ন ছোট একটা ধাক্কা খায়।
সেই ধাক্কা বুঝতে দেননি দেননি তামিম ও চার নম্বরে নামা সাব্বির রহমান। শ্রীলংকার বোলারদের পরিকল্পনাকে কব্জা করে নেন তারা। জুটির শুরুতে সতর্ক থেকে উইকেটে সেট হন তামিম-সাব্বির। সেট হয়ে যাবার পর উইকেটে মতি-গতি বুঝে শ্রীলংকার বোলারদের উপর চড়াও হন তামিম-সাব্বির।
এতে তড় তড় করে বাড়তে থাকে বাংলাদেশের স্কোর। সেই সাথে জয়ের স্বপ্ন আরও সহজ হতে থাকে। কারণ তামিম-সাব্বিরের ব্যাটিং দৃঢ়তায় দলের স্কোর ছাড়িয়ে যায় ১শ’। এর মাঝে হাফ-সেঞ্চুরি স্পর্শ করে ফেলেন তামিম। সেঞ্চুরির প্রত্যাশায় ছিলেন তামিম। কিন্তু সেটি হতে দেননি দিলুরুয়ান পেরেরা। বাংলাদেশের শততম টেস্টে নিজের ক্যারিয়ারের ২৩তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৮২ রানে থামেন তামিম। ১২৫ বল মোকাবেলা করে দুর্দান্ত ইনিংসটি সাজান তামিম। তার ইনিংসে ৭টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। দলীয় ১৩১ রানে তামিম বিদায় নিলে, সাব্বিরের সাথে ১০৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি ভাঙ্গে।
তামিমের ফিরে যাবার ১২ রান পর থামেন সাব্বিরও। পেরেরার কাছেই হার মানতে হয় ৫টি চারে ৭৬ বলে ৪১ রান করেন সাব্বিরকে।
এরপর দলের জয় নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান সাকিব ও অধিনায়ক মুশফিক। দু’জনের পথচলা ছিলো খুব ধীরগতির। উইকেট বাঁচিয়ে আস্তে আস্তে এগোচ্ছিলো তারা। তবে জুটিতে ১৯ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি সাকিব ও মুশফিকুর।
১৫ রানে থাকা সাকিবকে তুলে নিয়ে পেরেরা আবারো ম্যাচের লাগাম নিজেদের দিকে টেনে ধরেন। দলীয় ১৬২ রানে পঞ্চম উইকেট হারানো পর, বেশ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু সেই চাপে ভড়কে যাননি মুশফিকুর ও ক্রিজে আসা নতুন ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন।
জয়ের টার্গেটকে আসল লক্ষ্য করেই উইকেটে টিকে থাকার মিশন শুরু করেন মুশফিক-মোসাদ্দেক। আর বাজে বলে রান তোলার কাজটা সেড়েছেন ভালোভাবে। এতে বাংলাদেশের জয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে থেমে যেতে হয় মোসাদ্দেককে। ষষ্ঠ উইকেটে ২৭ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হয় মোসাদ্দেক। ২টি বাউন্ডারিতে ২৮ বলে ১৩ রান করেন মোসাদ্দেক।
মোসাদ্দেকের বিদায়ে উইকেটে গিয়ে প্রথম দু’বলে কোন রান নিতে পারেননি আট নম্বরে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে ৫৮তম ওভারের পঞ্চম বলে সুইপ করে ফাইন-লেগে বল পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ২ রান নিশ্চিত করে শততম টেস্টে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মিরাজ। অন্যপ্রান্তে মুশফিকুর ৪৫ বলে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন।
অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর বিশ্বের চতুর্থ দল হিসেবে শততম টেস্ট জিতলো বাংলাদেশ। আর বিদেশের মাটিতে চতুর্থ টেস্ট ম্যাচ জয়ের পেলো নিলো টাইগাররা। লংকানদের হারানোর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দু’টি ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১টি ম্যাচে জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ। ২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকের পর এই জয়সহ এখন পর্যন্ত নবম টেস্ট ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ।
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শেষে এবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা।
স্কোর কার্ড :
শ্রীলংকা প্রথম ইনিংস : ৩৩৮/১০, ১১৩.৩ ওভার (চান্ডিমাল ১৩৮, লাকমল ৩৫, মিরাজ ৩/৯০)।
শ্রীলংকা দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ২৬৮/৮, ১০০ ওভার, পেরেরা ২৬*, লাকমল ১৬*)
দিলরুয়ান পেরেরা রান আউট (শুভাশিষ/মিরাজ) ৫০
রঙ্গনা হেরাথ এলবিডব্লু ব তাইজুল ৯
সুরাঙ্গা লাকমল ক মোসাদ্দেক ব সাকিব ৪২
লক্ষণ সান্দাকান অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা-৮, ও-১) ১৩
মোট (অলআউট, ১১৩.২ ওভার) ৩১৯
উইকেট পতন : ২৩৮/৮ (হেরাথ), ৩১৮/৯ (পেরেরা), ৩১৯/১০ (লাকমল)।
বাংলাদেশ বোলিং :
শুভাশিষ : ১৬-৪-৩৬-০ (ও-১)।
মেহেদি : ২৪-০-৭১-১।
মুস্তাফিজুর : ২৩-৩-৭৮-৩।
সাকিব : ৩৬.২-৯-৭৪-৪।
মোসাদ্দেক : ৩-০-১০-০।
তাইজুল : ১১-১-৩৮-১।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৪৬৭/১০, ১৩৪.১ ওভার (সাকিব ১১৬, মোসাদ্দেক ৭৫, সৌম্য ৬১, হেরাথ ৪/৮২)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক চান্ডিমাল ব পেরেরা ৮২
সৌম্য সরকার ক থারাঙ্গা ব হেরাথ ১০
ইমরুল কায়েস ক গুনারতেœ ব হেরাথ ০
সাব্বির রহমান এলবিডব্লু ব পেরেরা ৪১
সাকিব আল হাসান বোল্ড ব পেরেরা ১৫
মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ২২
মোসাদ্দেক হোসেন ক ডিকবেলা ব হেরাথ ১৩
মেহেদি হাসান মিরাজ অপরাজিত ২
অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা-১, ও-১) ৬
মোট (৬ উইকেট, ৫৭.৫ ওভার) ১৯১
উইকেট পতন : ১/২২ (সৌম্য), ২/২২ (ইমরুল), ৩/১৩১ (তামিম), ৪/১৪৩ (সাব্বির), ৫/১৬২ (সাকিব), ৬/১৮৯ (মোসাদ্দেক)।
শ্রীলংকা বোলিং :
পেরেরা : ২২-১-৫৯-৩।
হেরাথ : ২৪.৫-২-৭৫-৩।
ডি সিলভা : ২-০-৭-০।
সান্দাকান : ৬-১-৩৪-০।
লাকমল : ২-০-৭-০।
গুনারতেœ : ১-০-৪-০।
ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতায় শেষ হলো।
ম্যাচ সেরা : তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)।
সিরিজ সেরা : সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ