1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৪ অপরাহ্ন

আশিয়ান সিটির প্রকল্প বন্ধ, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১১
  • ১৭৬ Time View

রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন আশকোনা এলাকায় জলাশয় ভরাট ও জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগে আশিয়ান সিটির আবাসন প্রকল্প তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। পাশাপাশি পরিবেশবিরোধী এই প্রকল্পটিকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার সকালে অভিযান চালিয়ে প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহৃত ৮ টি বড় আকারের বুলডোজার ও ৬ টি ডাম্পিং ট্রাক জব্দ করা হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মুনির চৌধুরীর নেতৃত্বে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রকল্পের কাজ বন্ধের এ নির্দেশ দেন।

পরে বিকেলে পরিবেশ আদালত বাড়িঘর কবরস্থান ভেঙ্গে জমি দখলের অভিযোগে প্রকল্পটিকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অভিযানকালে স্থানীয় লোকজন র‌্যাব ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।

তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জব্দ করে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে সূত্র জানায়।

সূত্রমতে, কাজ বন্ধের নির্দেশ সম্বলিত একটি নোটিশ আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

আশিয়ান সিটির বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালতের রায়ের পর অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মুনির চৌধুরী জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর দক্ষিণখান থানার আশকোনা ও কাওলা এলাকায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের জমি ও বাড়ি দখলের এক নজিরবিহীন ঘটনা উদঘাটন করেছে। আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ওই এলাকায় নজিরবিহীন ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি, কবর ও গাছপালা ধ্বংস করে একটি বেআইনি আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হয়।

তিনি জানান, র‌্যাব-১ ও ২ এর সহায়তায় ৩ ঘন্টাব্যাপী এক অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভূমি ভরাট ও জমি দখল কাজে ব্যবহৃত ৮টি বুলডোজার ও ৬টি ডাম্প ট্রাক জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে প্রকল্পের অবৈধ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং আশিয়ান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম ভূইয়াকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, এনফোর্সমেন্ট টিমের পরিচালক ২৩০ একর আয়তন জুড়ে গড়ে তোলা পুরো প্রকল্প এলাকাটি সরেজমিনে ঘুরে দেখে ভূমিদস্যুতা ও জবর দখলের এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা উদঘাটন করেন। ঘটনাস্থলে স্থানীয় গ্রামবাসী, ভূমি মালিক ও সাধারণ জনগণ পরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর কাছে আশিয়ান সিটির বিরুদ্ধে ভয়াবহ অত্যাচার নিপীড়ন ও নির্যাতনের কাহিনী ব্যক্ত করে।

এনফোর্সমেন্ট টিম দক্ষিণখানের হলান নামাপাড়া এলাকায় উপস্থিত হলে আমেনা বেগমের ৫.৫ কাঠা, শহর বানুর ৩ বিঘা, মাজেদা বেগমের ৮ কাঠা, মোমেনা বেগমের ১০ কাঠা জমি জবর দখল করার ঘটনা উদঘাটন করা হয়। এছাড়া মৃত রমজান বেপারীর কবর বুলডোজার দিয়ে আংশিক ধবংস করার ঘটনাও উদঘাটন করে।

অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, স্থানীয় মাহবুবা সুলতানার ২ কাঠা জমির সীমানাপ্রাচীর ধবংস করা হয়েছে। মুজিবর রহমান সিদ্দিকীর জমির সীমানাপ্রাচীর ধবংস করে ভরাট করা হয়েছে। বশির আহম্মেদের ৪ শতাংশ জমি দখল করে সীমানাপ্রাচীর ধ্বংস করা হয়েছে। হাজী লেহাজ উদ্দিনের ১.১৬ একরের বাড়ি ও পুকুর ভরাট করা হয়েছে। শাহনাজ বানুর আড়াই কাঠা জমি দখল করে ২৬টি সীমানা পিলার ধবংস করা হয়েছে।

অভিযানকালে স্থানীয় অশীতিপর এক বৃদ্ধ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জানান, তাদের ২ শ’ বছরের পারিবারিক করবস্থান আশিয়ান সিটি আংশিক ধবংস করেছে। তিনি এ কবরস্থান হেফাজতের দাবি জানান। উক্ত কবরস্থানটি রক্ষার স্বার্থে পরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে খুঁটি বসানো হয় এবং আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে কবরটি হেফাজত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই এলাকার অদূরে প্রায় শতাধিক কবর আছে, এমন একটি কবরস্থানে চারপাশে মাটি ফেলে কবরস্থানটি দখল করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কবর দখল না করার নির্দেশনা দিয়ে চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে কবরস্থান হেফাজতের নির্দেশ দেয়া হয়। অভিযান চলাকালে উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত শত শত নারীপুরুষ বৃদ্ধ জানান, তারা তাদের বাপদাদার ভিটে মাটি ছাড়তে চান না। কিন্তু আশিয়ান সিটি তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও দালাল লেলিয়ে দিয়ে জমি ও বাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য করছে।

ভূমি সন্ত্রাসের এ করুণ কাহিনি ব্যক্ত করতে গিয়ে তারা কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, ভূমি সন্ত্রাসের কারণে তাদের আহার ও নিদ্রা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

অভিযানকালে আরো দেখা যায়, এ আবাসন প্রকল্পের আওতাধীন বিস্তীর্ণ এলাকায় ৮-১০ ফুট জলাভূমি, নীচু এলাকা ও পুকুর ভরাট করা হয়েছে, যা পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অভিযানকালে আশিয়ান সিটির পক্ষ থেকে কর্মকর্তারা উপস্থিত হলেও তারা প্রকল্পের কোনও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

তবে বিক্ষুব্ধ মানুষজনের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে আশিয়ান সিটির কর্মকর্তারা ঘোষণা করেন, তারা জবরদখলকৃত জমির মূল্য দেবেন এবং সরকারের অনুমতি ছাড়া প্রকল্পের আর কোনও কাজ করবেন না। তবে ভূমিদস্যুতার প্রতিটি ঘটনার অভিযোগের বিপরীতে তারা সম্পূর্ণ নিরুত্তর থাকেন।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, প্রকল্পের মাটি ভরাট কাজে ব্যবহ্ত বুলডোজারগুলি অব্যাহতভাবে জনবসতির উপর দিয়ে মাটি ফেলে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রকল্প এলাকার জমির আয়তন নির্ধারণ করে কোনও সীমানা পিলার কিংবা সীমানা নির্দেশক কিছুই স্থাপন করা হয়নি।

পরিবেশ অধিদপ্তর মনে করে, দেশের প্রচলিত আইন কানুন এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার লংঘন করে প্রকাশ্যে মানুষের শান্তিপূর্ণ বসবাসের অধিকার এভাবে কেড়ে নেওয়া বাস্তবিক পক্ষে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট টিমের বিবেচনায় আবাসন প্রকল্পের নামে নিরাপরাধ সাধারণ মানুষের জমি কেড়ে নেওয়া মারাত্মক অপরাধ। এতে নিরীহ জনসাধারণ ও মালিকরা শরণার্থীর মতো পূর্ব পুরুষের ভিটে মাটি ছেড়ে অসহায় অবস্থায় এলাকা ত্যাগ করছে। অভিযানকালে উপস্থিত জনসাধারণ সরকারের কাছে এর বিচার ও প্রতিকার দাবি করে এবং ভূমিদস্যুতার শিকার অধিকাংশ মানুষজন তাদের জমি ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।

অভিযান শেষে অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মুনীর চৌধুরী ভুক্তভোগী মানুষকে এই বলে আশ্বাস দেন যে, এ অবৈধ দখল ও ভূমিদস্যুতা এবং পরিবেশগত ক্ষতিসাধনের জন্য দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে আইনসঙ্গত শাস্তি দেওয়া হবে। যারা জমির মূল্য পেতে চান, তাদের জন্য উপযুক্ত ও ন্যায়সঙ্গত মূল্য আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং যারা জমি দিতে অনিচ্ছুক তাদের জমি পুনরুদ্ধার করা হবে। এলাকার ভূমিমালিক ও সর্বস্তরের মানুষ পরিবেশ অধিদপ্তরের এ অভিযানকে স্বাগত জানান।

এদিকে, বুধবার বেলা ১২ টার দিকে আশিয়ান সিটির সাইট অফিস সংলগ্ন ওই প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিশালাকার জলাশয় ভরাট করে এরই মধ্যেই প্রকল্পের বিশাল এলাকায় মাটি ভরাট করা হয়েছে।

এসময় প্রকল্প এলাকায় র‌্যাব ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আসার বিষয়টি জানতে চাইলে সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তারা পুরো বিষয়টি গোপন করেন।

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের সহকারি ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সাইয়েদা জুলফা হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রকল্পটির জন্য অনাপত্তিপত্রের আবেদন করেছিলাম। সে বিষয়টি সার্ভে করার জন্য তারা এসেছিলেন।’

এসময় আশিয়ান সিটির ক্যাডার বাহিনীকে প্রকল্প এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ