1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন

মা-র সঙ্গে বাড়ি ফিরল দুর্জয়

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৫
  • ১৭২ Time View

যশোর রোড ধরে গাড়িটা ছুটছে পেট্রাপোল সীমান্তের দিকে। পিছনের আসনে মা ও মামার মাঝে বসে বছর পনেরোর দুর্জয়। একের পর এক প্রশ্নে জেরবার করে চলেছে সে। কী প্রশ্ন?image_135509_0

যশোরে তার পাড়ার বন্ধুরা কেমন আছে? স্কুলের বন্ধুরাই বা কেমন আছে? কেমন আছে পরিচিত আত্মীয়েরা?

চার বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভিনদেশে কাটিয়ে শনিবার স্বাধীনতা দিবসেই নিজের বাড়ি ফিরে গিয়েছে বাংলাদেশি কিশোর দুর্জয় ভক্ত। ফিরে পেয়েছে মা,বাবা, ভাই-সহ গোটা পরিবারকে। বন্ধু-পরিচিতদেরও। তাই সকালে পার্ক স্ট্রিটের হোটেল থেকে সীমান্তের দিকে যাওয়ার পথে পুরনো পাড়া-বন্ধু-পরিজনদের খোঁজ নিয়ে সে হয়তো বোঝার চেষ্টা করছিল, এত দিন পর ফিরে গিয়ে কেমন দেখবে নিজের ভিটেভূমিকে। ছেলের যাবতীয় উত্তর হাসিমুখে দিয়ে যাচ্ছিলেন মা নমিতা ভক্ত। ছেলেকে নিয়ে দেশে ফেরার আনন্দ চোখেমুখে ঠিকরে বেরোচ্ছিল তার।

শুক্রবার রাতটা পার্ক স্ট্রিটের একটি হোটেলে কাটিয়ে এদিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ একটি ভাড়া গাড়িতে চেপে রওনা দেন সীমান্তের দিকে। পথে যেতে যেতেই এত দিনের নানা কষ্টের কথা আনন্দবাজারের প্রতিবেদককে শোনাচ্ছিলেন নমিতাদেবী ও সু্ব্রত। প্রশ্নের মাঝে চুপ করে সে সব কথাও শুনছিল কিশোরটি। এরই মাঝে ফোন এল কামালগাজির স্কুলের এক বন্ধুর। ‘ইচ্ছে’ আশ্রম থেকে দুর্জয়ের মামার এ দেশের নম্বর নিয়ে ফোন করেছে সে। নানা কথার শেষে দুর্জয় বলল, ‘‘তোর নম্বর সেভ করে নিলাম। ফোন করব।’’

বাংলাদেশি কিশোর দুর্জয় ভক্ত ২০১১ সালে ঈদের আগের দিন উৎসব দেখতে সীমান্তের কাছে এসেছিল। তার পরেই এক হুড়োহুড়িতে পড়ে সে চলে আসে এ-পার বাংলায়। দুর্জয় জানিয়েছে, এ দেশে এসে প্রথমে মাদক পাচারকারী এবং তার পর মালিপুকুর হোমের অত্যাচার সইতে হয়েছিল তাকে। পরে শিশুকল্যাণ সমিতির মাধ্যমে ঠাঁই পায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার কামালগাজির ‘ইচ্ছে’ অনাথ আশ্রমে। সেখানে নিজের নাম বলেছিল, ইন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী। কামালগাজির একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিও হয়েছিল সে।

মালিপুকুর হোমে থাকতেই দুর্জয়ের খবর বিদেশ মন্ত্রক মারফত গিয়েছিল বাংলাদেশে। কিন্তু সেই খবর পেয়ে তার মা নমিতা ভক্ত এ রাজ্যে এলেও মালিপুকুর হোম ওই নামে কোনো আবাসিকের কথা স্বীকার করেনি। দুর্জয়ের এই নিখোঁজ রহস্য বুধবারের আনন্দবাজারে প্রকাশিত হয়েছিল। ‘ইচ্ছে’ আশ্রমে বসে সে দিন সকালে নিজের ছোটবেলার ছবি ও খবর পড়েছিল দুর্জয়। তার পর বুধবার বিকেলে নিজেই শিয়ালদহ স্টেশনে এসে পরিচিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের নিজের কথা খুলে বলে। সেখান থেকে খবর আসে আনন্দবাজারে। আনন্দবাজারের কাছে দুর্জয়ের মামা সুব্রত মণ্ডলের ফোন নম্বর ছিল। আনন্দবাজারের প্রতিনিধির মাধ্যমেই দুর্জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয় বাংলাদেশে থাকা মামার। বৃহস্পতিবার সুব্রতবাবুর সঙ্গে দুর্জয়ের মা নমিতা ভক্ত এ দেশে এসে দুর্জয়ের সঙ্গে দেখা করেন। শুক্রবার কলকাতা শিশুকল্যাণ সমিতির কাছ থেকে দুর্জয়কে ফিরে পাওয়ার অনুমতিও পান নমিতাদেবী।

বেলা সাড়ে বারোটা। গাড়ি পৌঁছে গেল পেট্রাপোল। অভিবাসন দফতরে দুর্জয় ও তার মায়ের নাম বলতেই নড়েচড়ে বসলেন অফিসারেরা। তাদের এক জন বললেন, ‘‘তোমার খবরই তো আনন্দবাজারে বেরিয়েছিল।’’ তার পরই দুর্জয়ের সীমান্ত পেরনোর কাগজপত্র তৈরি করে দিলেন অভিবাসন-অফিসারেরা। বিকেল সাড়ে চারটে। ভারতের সব কাগজপত্র তৈরি শেষে সীমান্তের গেটের দিকে মায়ের হাত ধরে এগিয়ে চলেছে দুর্জয়। ঠিক গেট পেরনোর আগে তার হাতে চকোলেট এগিয়ে দিলেন আনন্দবাজারের প্রতিনিধি। তা নিয়ে হাসিমুখে কিশোরটি বলে উঠল, ‘‘থ্যাঙ্ক ইউ। তোমরাই তো আমায় বাড়িতে ফিরিয়ে দিলে।’’- আনন্দবাজার পত্রিকা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ