1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন

চেন্নাইয়ের চিলতে ফ্ল্যাট থেকে সিলিকন ভ্যালিতে স্বপ্নউড়ান

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০১৫
  • ২০৪ Time View

বাবা, মা আর দুই ভাই- এক স্কুটারে চার জন। জায়গার হয়তো টানাটানি ছিল, কিন্তু ইচ্ছে আর সঙ্কল্পের জ্বালানি একটু বেশিই ছিল দু’চাকার ওই বাহনে। তাই ভারতের চেন্নাইয়ের অতি সাধারণ দু’কামরার ফ্ল্যাট থেকে যাত্রা শুরু করলেও, সিলিকন ভ্যালির আগে তা থামেনি। আর গুগ্লের মতো এক ডাকে চেনা সংস্থার সিইও হয়েও তাকে রূপকথা মনে হতে দেননি বাড়ির বড় ছেলে পিচাই সুন্দররাজন। তথ্যপ্রযুক্তির তামাম দুনিয়া যাকে সুন্দর পিচাই নামে চেনে। মঙ্গলবারই আইআইটি খড়্গপুরের এই প্রাক্তনীর হাতে গুগ্লের রাজ্যপাট তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ।image_135103_0

অনেকে বলছেন, রূপকথা না হোক, এক হিসেবে ইতিহাসই তো তৈরি হলো এ দিন। মাইক্রোসফট আর গুগ্লের মতো দুই চির যুযুধান দৈত্যের মাথাতেই বসে পড়লেন দুই ভারতীয়। হয়তো সিলমোহরও পড়ল তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় ভারতীয়দের ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণের উপরে।

সকলকে চমকে দিয়ে এ দিন পেজ জানান, চোখ ধাঁধানো সাফল্য সত্ত্বেও গুগ্লের ব্যবসা ঢেলে সাজছেন তারা। এবার থেকে মূল সংস্থার নাম হবে অ্যালফাবেট। তার নেতৃত্ব দেবেন তিনি এবং অন্য প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন। আর সেই অ্যালফাবেটের প্রধান শাখা হবে গুগ্ল। যার আওতায় থাকবে অ্যান্ড্রয়েড, সার্চ, অ্যাড (বিজ্ঞাপন), ইউটিউব, ম্যাপের মতো ব্যবসা। এই ছিপছিপে, মেদহীন গুগ্ল সামলানোর দায়িত্ব বর্তাবে সুন্দরের উপর। যাকে ওই কাজে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন তিনি! পেজের কথায়, ‘‘আমি ভাগ্যবান যে, সুন্দরের মতো মেধাবী, পরিশ্রমী আর গুগ্লের প্রতি দায়বদ্ধ লোক সংস্থা চালাবেন।’’

মেদহীন, কারণ এই নতুন গুগ্লই আসলে অ্যালফাবেটের রাজকোষ। বছরে প্রায় ৬,৬০০ কোটি ডলারের ব্যবসা করে মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি বহুজাতিকটি। মুনাফা ১,৬০০ কোটি। আর এর প্রায় পুরোটাই আসে সেই সমস্ত ব্যবসা থেকে, যার দায়িত্ব যাচ্ছে সুন্দরের হাতে। যেমন, অ্যান্ড্রয়েড। পৃথিবীর ৭৮% স্মার্টফোনের পেটেই সেঁধিয়ে রয়েছে এই প্রযুক্তি (সফটওয়্যার)। গুগ্লের ‘সার্চ’ (নেটে তথ্য খোঁজা) আর তার সঙ্গে মিলিয়ে বিজ্ঞাপনই পেজের সংসারের মূল রোজগার। একই রকম জনপ্রিয় ইউটিউব, গুগ্ল ম্যাপ, আর অ্যাপ (মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন)। পেজের দাবি, গত কয়েক মাসে সুন্দর যে ভাবে সব সামলাচ্ছিলেন, তাতে এই ঘোষণা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা ছিল। কোনো রূপকথা নয়।

মাত্র ৪৩ বছরে গুগ্লের রাশ হাতে এলো। অথচ ১২ বছর বয়স হওয়ার আগে টেলিফোনেও হাত দেননি সুন্দর। বাড়িতে ছিলই না। ছিল না টিভি। চেন্নাইয়ে চরকি পাক খেতেন বাদুড়ঝোলা বাস বা স্কুটারে।

সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবা কারখানার ইঞ্জিনিয়ার। সুন্দর হওয়ার আগে মা কাজ করেছেন স্টেনোগ্রাফারের। সুন্দরকে বিদেশে পড়তে পাঠানোর জন্য ঋণ জোগাড় করতে পারেননি বাবা। তবু হাল ছাড়েননি। নিজের অ্যাকাউন্ট প্রায় খালি করে তুলে দিয়েছেন থোক টাকা। যা তখন তার এক বছরের বেতনের থেকেও বেশি। এত ভালো লগ্নি গুগ্লও করেছে কি?

স্কুলে বরাবর ভালো রেজাল্ট করা সুন্দর ছিলেন ক্রিকেট ক্যাপ্টেন। ফুটবলের আদ্যন্ত ভক্ত। এর পর আইআইটি খড়গপুর। যেখানে প্রায়ই তাকে দেখা গিয়েছে ক্ষয়ে আসা হাওয়াই চপ্পল পায়ে। স্নাতকোত্তর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা গুগ্লের আঁতুড়ও। প্রথমে পরিকল্পনা ছিল, সেখান থেকেই পিএইচডি শেষ করে অধ্যাপক হবেন। তার বদলে এমবিএ করলেন হোয়ার্টন বিজনেস স্কুল থেকে। ২০০৪ সালে গুগ্লের সদর দফতরে প্রথম পা। চাকরির ইন্টারভিউ চলাকালীন তাকে বলা হয়েছিল সে দিনই নাকি জি-মেল বাজারে আনছে সংস্থা। সুন্দর ভেবেছিলেন, নেহাতই এপ্রিল ফুলের মস্করা। বাকিটা ইতিহাস।

গত এক দশকে দুনিয়ায় সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় সুন্দর এসেছিলেন নিছক প্রোজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে। গোড়ার দিকে তাকে শীর্ষ পদের দাবিদারও সে ভাবে মনে করেননি কেউ। শান্ত, মৃদুভাষী, সহকর্মীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহারে অভ্যস্ত- এমন লোক যে আস্ত জাহাজের ক্যাপ্টেন হতে পারেন, এমনটা অনেকেই ভাবেননি।

সেই ভাবনায় বদলের শুরু বছর দুই আগে। ওয়েব দুনিয়ায় ঢুকতে মাইক্রোসফটের ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের জমি অনেকটাই সরিয়ে নিয়ে গেল গুগ্লের ক্রোম। তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়া চোখ কচলে দেখল, সেই সাফল্যের অন্যতম কারিগর মৃদুভাষী সুন্দরই। সাফল্য আরও বড় মাপে এল অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে স্মার্টফোনের বাজার ধরার মাধ্যমে। তাই অক্টোবরে পেজ যখন সুন্দরকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে নিয়ে এলেন, তখনই কাউন্ট-ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছিল চূড়ান্ত ঘোষণার।

গুগ্লে সহকর্মীরা বলেন, ক্রেতার চাহিদা অনুসারে প্রযুক্তিকে ব্যবহারে সুন্দর ওস্তাদ। পেজ বলেন, ‘‘সুন্দরের আসল গুণ হলো খুব কঠিন প্রযুক্তির খুব সহজ প্রয়োগ।’’ সুন্দর নিজে বলেন, ‘‘আমি চাই প্রযুক্তি হবে ক্রেতার চাহিদার চাকর। যেমন, যদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুলতে বসি, তখনই যেন চিৎকার করে আমার ফোন। যাতে তা মিস না হয়।’’ প্রযুক্তির প্রতি এই সমর্পণের পাশাপাশি সুন্দরকে এই উচ্চতায় তুলে এনেছে তার প্রখর স্মৃতিশক্তি, বরফ শীতল স্নায়ু এবং সম্পর্কের উষ্ণতা বজায় রেখেও চূড়ান্ত দর কষাকষির ক্ষমতা। এতটাই যে, স্যামসাংয়ের মতো সংস্থাকে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করার ‘হুমকি’ দিতে পিছপা হননি তিনি। সহকর্মীদের মতে, এই সব গুণ ছিল বলেই কিছু দিন আগেও তাকে সিইও হিসেবে পেতে কাড়াকাড়ি করেছে টুইটার, মাইক্রোসফট। ওই সব বিরল ক্ষমতা আছে বলেই মাইক্রোসফটের সত্য নাদেল্লা কিংবা পেপসির ইন্দ্রা নুয়ির মতো বিদেশে ভারতীয় সাফল্যের লোকগাথা হয়ে গেলেন সুন্দর। তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, নাদেল্লা, অ্যাপলের কর্ণধার টিম কুক। মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সুন্দর টুইট করেছেন, ‘‘আশা করি শীঘ্রই আপনার সঙ্গে দেখা হবে।’’

বেশ কয়েক দশক ধরে সব চেয়ে বড় তথ্যপ্রযুক্তি বহুজাতিকগুলির শীর্ষে যারা থাকতেন, অনেক ক্ষেত্রেই তারা হতেন নাটুকে, ‘লার্জার দ্যান লাইফ’। যেমন, অ্যাপলের স্টিভ জোবস। মাইক্রোসফটের স্টিভ বামার। গুগ্লেরই পেজ-ব্রিন জুটি। সেখানে এখন আই-ফোন তৈরির সংস্থার দায়িত্বে মিতভাষী কুক। বিল গেটসের সংস্থায় ভদ্র নাদেল্লা। আর গুগ্লে সুন্দর। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, সিলিকন ভ্যালি কি তবে বদলাচ্ছে?

চমকে দেওয়া বদল অবশ্য এ দিন করেছে গুগ্ল। সংস্থার মূল ব্যবসা থেকে উদ্ভাবনী কিন্তু এখনও তেমন রিটার্ন না-দেওয়া ব্যবসাগুলিকে আলাদা করেছে। যেমন, চালকবিহীন গাড়ি কিংবা বেলুনে নেট সংযোগ দেওয়ার প্রকল্প। বেশ অদ্ভুত নতুন মূল সংস্থার নাম- অ্যালফাবেট। অনেকে বলছেন, শূন্য থেকে শুরু করে এই উচ্চতায় পৌঁছনো এবং সেখান থেকে ফের নতুন দৌড় শুরু করা। এটাই তো চিরকালের মার্কিন স্বপ্ন, ‘আমেরিকান ড্রিম’। আর সুন্দর সেই মার্কিন উড়ানের সঙ্গে ভারতীয় স্বপ্নের মোহনা। যে স্বপ্নে তিনি একা নন, পরিবারও একই রকম মশগুল।

আমেরিকায় এসে ৬০ ডলার দিয়ে ব্যাগ কিনতে পারেননি। আজ ৬,৬০০ কোটি ডলারের সংস্থা তার কাঁধে। এই জয় শুধু সুন্দরের নয়। স্কুটারের চার সওয়ারিরই। ওয়েবসাইট।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ