1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন

পাগল হয়ে গেছে ভারতীয় মিডিয়া

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০১৫
  • ১৪০ Time View

mustafiz cutterভয়াবহ ক্ষেপে গেছে ভারতীয় মিডিয়া।বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ওয়ান-ডে সিরিজে ভারতের পরাজয়কে নিয়ে ব্যঙ্গ করে তৈরি একটি গ্রাফিক্স ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও ক্রিকেট-মহলে হুলুস্থূল ফেলে দিয়েছে।

ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশ নিয়ে যা-তা লেখালেখি শুরু করেছে। কলকাতার এই সময় দৈনিকটি গতকাল ও আজ দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অন্যভাবে আক্রমণ করছে পত্রিকাটি।

‘দুনিয়া বলছে, ‘ঢাকা’তে জাস্ট থাকা যায় না’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই সময় রীতিমতো বিষোদগার করেছে। পত্রিকাটি লিখেছে,

“বলতে পারেন, বিশ্ব-দুনিয়ার সবচেয়ে ‘খাজা’ শহর কোনটি? খাজা, মানে আমরা বলতে চাইছি, ‘বাসযোগ্য’ নয়, এমন শহরের শীর্ষে কে রয়েছে? বলতে বা শুনতে খারাপ লাগলেও, সেই শহরের অবস্থান আমাদের প্রতিবেশী দেশেই।

হ্যাঁ, সেই দেশ, যার নাগরিকরা প্রতিবেশীকে অসম্মানে সুখ পান। শিষ্ঠাচারের সঙ্গে রসবোধের ফারাকটুকু বোঝেন না। খেলার হারজিৎ নিয়ে রসিকতা করতে গিয়ে, খেলোয়াড়দের মাথা মুড়িয়ে অসম্মানে, তৃপ্ত হন।

দেশটি যে বাংলাদেশ, না বললেও চলে। এই দেশের রাজধানী শহর ঢাকাই বিশ্ব-দুনিয়ার সবচেয়ে অবাসযোগ্য শহর। যারা ঢাকা শহরকে এই তকমা দিয়েছে, তারা কেউ কিন্তু ভারতের নয়। ফলে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে পালটা অভিযোগ তোলা যাবে না। সম্প্রতি ‘ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট গ্লোবাল’ ‘বাসযোগ্যতা’র ওপর একটি গবেষণা চালায়। অপরাধ, হুমকি, হাসপাতাল, স্কুল, যানবাহন এসব কিছুই বিবেচনায় রাখা হয়। মোট নম্বর ১০০ ধরে, তার ওপর এই মূল্যায়ন করা হয়েছে। তাতেই দেখা গিয়েছে, সবচেয়ে কম নম্বর পেয়ে, অবাসযোগ্য শহরের শীর্ষে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। পেয়েছে ৩৮.৭ শতাংশ নম্বর।

দুইয়ে রয়েছে পোর্ট মোরসবি, পাপুয়া নিউ গিনির শহর, প্রাপ্ত নম্বর ৩৮.৯ শতাংশ। তিনে রয়েছে নাইজেরিয়ার শহর লাগোস, পেয়েছে ৩৯ শতাংশ নম্বর। অবাসযোগ্য হিসেবে মোট ১০টি শহরের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। আর এক প্রতিবেশী পাকিস্তানের করাচি রয়েছে তালিকায় ৬ নম্বরে। প্রাপ্তমান ৪০ শতাংশ। ৩৯.৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে চারে রয়েছে জিম্বাবুয়ের হারারে। পাঁচে আলজেরিয়ার শহর আলজিয়ার্স(৪০.৯), সাতে লিবিয়ার শহর ত্রিপোলি (৪২.৮), আটে ক্যামেরুনের দৌয়ালা (৪৩.৩), নয়ে ইরানের শহর তেহরান আর দশে রয়েছে আবিদজান, আইভরি ডি ইভয়ার এক শহর, পেয়েছে ৪৫.৯ শতাংশ নম্বর।”

নয়া দিল্লি থেকে বিবিসির সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষ লিখেছেন, “বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ওয়ান-ডে সিরিজে ভারতের পরাজয়কে নিয়ে ব্যঙ্গ করে তৈরি একটি গ্রাফিক্স ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও ক্রিকেট-মহলে হুলুস্থূল ফেলে দিয়েছে।

ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোর একটি সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গ্রাফিক্সের নিন্দায় সরব হয়েছে ভারতের প্রায় সব প্রথম সারির চ্যানেল ও খবরের কাগজ।

কেউ বলছেন ব্যঙ্গচিত্রটি শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং এটি ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান।

দুই দেশের ক্রিকেট রেষারেষিকে ঘিরে বিজ্ঞাপনী যুদ্ধ অবশ্য চলছে সেই বিশ্বকাপের সময় থেকেই, কিন্তু তা এত তাড়াতাড়ি এতটা তলানিতে এসে ঠেকবে তা প্রায় অভাবনীয় ছিল।

গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিশ্বকাপের সময় মওকা মওকা সিরিজের বিজ্ঞাপনগুলোকে ঘিরেই ভারত ও বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছিল। স্টার স্পোর্টসের বানানো মওকা মওকা-র জবাবে বাংলাদেশেও তৈরি হয়েছিলো অনেক পাল্টা ভিডিও।

এরপর জুনে ভারতের বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশকে ক্রিকেটের বাচ্চা বলে কটাক্ষ কিংবা তার পাল্টা হিসাবে মোটা বাঁশের ডান্ডা দিয়ে ‘ব্যাম্বু ইজ অন’ সিরিজের বিজ্ঞাপন নিয়েও পানিঘোলা কম হয়নি।

কিন্তু সম্প্রতি প্রথম আলো-র সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপন রুচি ও শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলেই ভারতীয় অনেক সংবাদমাধ্যমের রায়।

যে গ্রাফিক্স নিয়ে এই তোলপাড়, সেটিতে দেখা যাচ্ছে বোলার মুস্তাফিজ কাটারে ঘায়েল ভারতীয় ক্রিকেটাররা আর্ধেক মাথা কামিয়ে বিষণ্ণ মুখে দাঁড়িয়ে আছেন আর তাদের হাতে পোস্টার ‘আমরা ব্যবহার করেছি, আপনারাও করুন’। মুস্তাফিজের যে স্লোয়ার ডেলিভারি বা কাটারে ধয়াশায়ী হয়েছিলেন ভিরাট কোহলি বা এম এস ধোনি-রা সেটাকেই দ্বৈত অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে।

কিন্তু ভারতের নানা চ্যানেলে ক্রিকেট পন্ডিতরা মন্তব্য করেছেন, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হারার রাগ থেকেই বাংলাদেশ এমন অবমাননাকর গ্রাফিক্স তৈরি করেছে।

তবে ক্রিকেট-ভাষ্যকার গৌতম ভট্টাচার্যর মতে, এখানে যদি রুচিহীনতা থেকেও থাকে তাহলে তার শেকড় আসলে অনেক গভীরে।

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, ‘শুধু ক্রিকেটকে এখানে দায়ী করা ঠিক হবে না। ফরাক্কা বা তিস্তার পানি থেকে শুরু করে কূটনীতির অনেক বিষয়েই বাংলাদেশে একটা ধারণা আছে যে ভারত তাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো আচরণ করে থাকে। এখন ক্রিকেটটাই সে দেশের সবচেয়ে বড় ইউনিফায়িং স্পোর্ট, তাই ক্রিকেটকে কেন্দ্র করেই সেই মনোভাবের প্রতিফলন বেরিয়ে এসেছে।’

যে দৈনিকে এই বিতর্কিত গ্রাফিক্সটি প্রকাশিত হয়, সেই প্রথম আলো অবশ্য মনে করছে তাদের ব্যঙ্গ সাময়িকী বস-আলোতে প্রকাশিত এই গ্রাফিক্সের রসিকতার দিকটি বা হালকা দিকটি দেখতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র বলছেন, ‘আমার মনে হয় ভারতে অনেকেই এটার ভুল ব্যাখ্যা করছেন। এই ব্যঙ্গ-সাময়িকীতে আমরা দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশের ক্রিকেটার – প্রায় সবাইকে নিয়েই হাসিঠাট্টা করে থাকি, এখানেও স্রেফ রসিকতাও করাই হয়েছে।’

তার এই বক্তব্যের সঙ্গে আবার অনেকটাই একমত ভারতের অ্যাডভার্টাইজিং জগতের দিকপাল প্রহ্লাদ কক্কর। অ্যাড-গুরু কক্করের স্বীকার করতে দ্বিধা নেই এই গ্রাফিক্সটা বেশ মজার এবং তাতে সৃষ্টিশীলতারও ছাপ আছে।

তার যুক্তি, ‘এটা যদি ভারতীয় ক্রিকেটারদের বদলে অন্য কাউকে নিয়ে, ধরা যাক অস্ট্রেলিয়ানদের নিয়ে বানানো হত তাহলে কিন্তু ভারতের এটা উপভোগ করায় কোনো অসুবিধা থাকত না। কিংবা পাকিস্তানিদের নিয়ে বানানো হলে ভারতীয়রা তো বোধহয় আরও বেশি খুশি হতো!’

তবে ভারতে জাতীয় ক্রিকেটাররা যে প্রায় ডেমি-গড বা দেবতার মতো সম্মান পান, সেখানে তাদের নিয়ে হাসাহাসি করাটাও বোধহয় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে – এবং প্রথম আলোর গ্রাফিক্সটিকে ভারত এখন সেই অপরাধেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ