1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন

গায়ে উঠেছে ফুস্কুরি, তার মানে কি এলার্জি

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৫ মে, ২০১৫
  • ১৫৪২ Time View

babarডাঃ মোঃ বজলুল করিম চৌধুরী



আপাতত শেষ রোগীটি বিদায় করার পর চেম্বারে ঢুকলো মেজবা। ও আমার কলেজ বন্ধু। এখন ভালোই একটি ব্যবসা করে। গাছের ব্যবসা অর্থাৎ নার্সারী। খুবই ভদ্র গোছের ব্যবসা এটি। ব্যবসার পাশাপাশি শরীর-মন দুটোই ভালো থাকে। বাকির তেমন একটা ঝামেলা নেই। নগদ ব্যবসা, তাই টেনশন কম। সন্ধ্যার পর তাই প্রায়ই আসে। ফ্রী টাইমে গল্প গুজব করি। সময় কাটে। ইদানিং বেশ ক’দিন দেখা হয়নি, মেলা-টেলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। চেম্বারে ঢুকেই বললো, বাব্বাহ্ আজতো মেলা রোগী দেখে ফেললে!
: তাই?
: হ্যাঁ, আমি গুনেছি। এসেছিতো অনেক আগে। বাইরে বসে ছিলাম। ভাবলাম রোগী শেষ হোক তারপরই না হয় আসি। তবে আজ তুমি তিনটা এলার্জির রোগী দেখেছো।
: বুঝলে কি করে? আমি কিছুটা বিষ্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
: না, বাইরে বসে অবজারভ করলাম। তা, ভিতর থেকে কিছু কিছু শব্দ কানে আসছিল । অন্য রোগীদের কথা খুব একটা বুঝিনি তবে এলার্জির রোগীদের ব্যাপারটি বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছিল। তুমি যথেষ্ট উচ্চস্বরে ’বয়ান’ দিচ্ছিলে তাদের। তার কিছুটা কানে এসেছে বই কি? আমি ঠিক বললাম কি না?
: বলেছো ঠিকই তবে সেলফ ডায়াগনোজড (স্ব- নির্ধারিত) এলার্জির রোগী ৩টি ছিল বটে, তবে তার একটাও এলার্জি জনিত সমস্যা নয়। সে জন্যই সময় নিয়ে বয়ান দিতে হয়েছে, তাদের ভুল ধারণগুলোকে শুধরে দেয়ার জন্য। আর সে ক্ষেত্রে স্বরতো একটু চড়া হবেই, তাই তুমি বাইরে থেকে শুনে ফেলেছো আর কি।
: আচ্ছা, এ ব্যাপারে আমারও তো জানার আছে। বাইরে মানুষ-জন তো গায়ে কিছু একটা ফুস্কুরি উঠলেই এলার্জি বলে। তারপর কত কি-ই না সেজন্য করা হয়। আজ তুমি বিষয়টি আমাকে বুঝিয়ে বলতো। এলার্জি আসলে জিনিষটা কি?
: এলার্জি আসলে এক ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া। দেহ যদি বাহ্যিক কোনো কিছুর প্রতি সংবেদনশীল হয়, অর্থাৎ পছন্দ না করে সেই বস্তু দেহের সংস্পর্শে এলে, হতে পারে সেটা খাদ্য, স্পর্শ কিংবা এমনকি সন্মুখে উপস্থিতিও, দেহে কোনো না কোনোভাবে একটি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এটাকেই সংক্ষেপে এলার্জি বলা যেতে পারে। একটি উদাহরণ দেয়া যাক, ধরো তুমিতো একজন ভদ্র ছেলে, অনেকেই তোমাকে পছন্দ করে, সুনামও আছে অনেক। তাই বলে কি তাবৎ জনগণ তোমাকে পছন্দ করতে হবে? না, সেটা অসম্ভব? অবশ্যই সেটা নয়। কেউ না কেউ হয়তো তোমাকে অপছন্দও করে থাকে। এখন তুমি যদি সেই লোকের সামনে যে তোমাকে অপছন্দ করে, সর্বদা তার সামনে ঘুর ঘুর করতে থাকো তাহলে কি হবে? সেই লোকটি বিরক্ত হবে এবং কোনো না কোনো অভিব্যক্তির মাধ্যমে তার এই বিরক্তি প্রকাশ পাবে, হতে পারে সেটা মুখ ঘুরিয়ে নেয়া, ভেংচি কাটা, সামনে থেকে সরে যাওয়া, এমনকি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গালিগালাজও করে বসতে পারে। এই যে বিষয়টি, তুমি তার জন্য এলার্জির কারণ বিধায় সে এসব যে কোনো অভিব্যক্তির মাধ্যমে তার অপছন্দের ব্যাপারটি প্রকাশ করেছে। দেহও ঠিক তেমনটি করে থাকে যদি তার অপছন্দের কোনো কিছু তার আওতায় এসে পড়ে। দেহতো অঙ্গ-ভঙ্গির মাধ্যমে তা প্রকাশ করতে পারে না, সে সেটা প্রকাশ করে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিবর্তনের মাধ্যমে। এটাই হলো এলার্জি। আমি কি বুঝাতে পারলাম?
: তাহলে তো দেখা যাচ্ছে, এলার্জি কোনো রোগ নয়।
: ঠিক তাই, এলার্জি সত্যিকর অর্থে রোগের পর্যায়ে পড়ে না। এটি দেহের একটি বিশেষ অবস্থা, যা কোনো ধরনের অপ্রিয় বস্তুর উপস্থিতিজনিত কারণে হয়ে থাকে।
: কিন্তু লোকজনতো গায়ে ফুস্কুরি হলেই এলার্জি বলে থাকে। বিষয়টি কি তাহলে সত্যি নয়?
: সর্বাংশে সত্যি নয়। গায়ে ফুস্কুরি হলেই সেটা এলার্জি জনিত কারণে হবে, তা নয়। তবে এলার্জি জনিত কারণেও গায়ে এক ধরনের ফুস্কুরি হতে পারে যাকে urticaria বলে। এছাড়াও আরো অনেক থরনের প্রতিক্রিয়া এলার্জির কারণে হতে পারে।
: তাহলে আজ যে তিনটি ”এলার্জির” রোগী দেখলে তাদের বিষয়গুলো কি?
: এদের একটিও এলার্জির রোগী ছিল না।
: তাহলে এরা কিসের রোগী ছিল একটু বুঝিয়ে দাওনা ভাই!
: প্রায়শই দেখতে পাবে চর্মরোগ হলেই লোকে ধরে নেয় এলার্জি। যেমন আজকের প্রথম এলার্জির রোগীটির ছিল আসলে খুস-পাচড়া বা Tineasis, দ্বিতীয়টি ছিল এক ধরনের ছত্রাক জনিত রোগ বা ঞরহবধংরং, আর তৃতীয় জন? তার কোনো সমস্যাই ছিল না। হতে পারে হয়তো তাকে মশা কামড় দিয়েছে এবং সেই ক্ষতকে এলার্জি বানিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছে।
: তাহলে তোমার তাতে সমস্যা কি, রোগ যা-ই হোক চিকিৎসা দিয়ে দাও, ল্যাঠা চুকে গেল, এত কথার দরকার কি?
: নারে ভাই, শুধু ঔষধ দেয়াটাই চিকিৎসা নয়। এই যে আমি তাদের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলেছি, বুঝানোর চেষ্টা করেছি, সেটাও এক ধরনের বড় চিাকৎসা। এই যে দেখ তিনজন রোগীই তাদের রোগগুলোকে এলার্জি মনে করে কত কি-ই না করেছে, বাদ দিয়েছে নানা ধরনের খাবার দাবারও। তার মাঝেতো কমন কতগুলো আছেই, চিংড়ি মাছ, বোয়াল মাছ, পুঁটি মাছ, বেগুন, পুঁই শাক আরো কত কি! সব বাদ। তাহলে খাবারের আর বাকি রইলো কি? অথচ এটা শ্রেফ ভুল ধারণার কারণে। তাই তাদেরকে যদি বিষয়টি বুঝিয়ে না বলে কয়টি ঔষধ ধরিয়ে দিই চিকিৎসা হয়ে যাবে কি?
: তাহলে বলতো কি কি খাবারের জন্য এলার্জি হতে পারে?
: আবারওতো সেই একই পথে হাঁটলে বন্ধু! তোমাকে যে লোক পছন্দ করে না সে লোক যে আমাকেও অপছন্দ করবে তা কি হয়? তাহলে তোমার দেহের জন্য যা এলার্জিক সেই একই জিনিষ অন্যের দেহের জন্যও যে এলার্জিক হবে তা নয়। সুতরাং আপাতত প্রচলিত যে সব ’এলার্জিক’ বস্তুকে দোষি সাব্যস্ত করা হয় তারা কারো কারো জন্য হয়তো এলার্জির কারণ হতে পারে, কিন্তু ঢালাওভাবে সবার জন্য সেসব বস্তু এলার্জির কারণ হবে না সেটাই স্বাভাবিক। আবার অনেক ’ভদ্র’ জিনিষ-পত্রও যে সবার জন্য ভদ্র হবে তা নয়। সেগুলোও কারো জন্য এলার্জির কারণ হতে পারে। তাই আগে থেকে বলা যাবে না কোন্ খাবার কার জন্য এলার্জিক। শুধু খাবার কেন, এলার্জির কারণ হতে পারে কোনো পরিধেয় পোশাক-আশাক, গয়ানা-গাটি কিংবা কসমেটিক ইত্যাদি যে কোনো স্পর্শ সংক্রান্ত জিনিষও। এমন কি সূর্যের আলোও কারো কারো জন্য এলার্জির কারণ হতে দেখা গেছে। আবার এমনও দেখা গেছে কোনো অপছন্দনীয় ব্যক্তি কাছে এলেও দেহে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। সুতরাং কার জন্য কি জিনিষ এলার্জির কারণ তা আগেভাগে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
: তুমি বলেছিলে ফুসকুরি ছাড়াও দেহ বিভিন্নভাবে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকে। আমরাতো জানি যে গায়ে ফুস্কুুরি হলেই এলার্জি হয়, তাহলে আরো কি কি ভাবে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, বুঝিয়ে বল না।
: এলার্জির কারণে চুলকানি, গায়ে ফুসকুরি উঠা একটা কমন বিষয় হতেই পারে। তা ছাড়াও দেহে আরো অনেক লক্ষণ ফুটে উঠতে পারে। যেমন ধরো মাথা ঘুরানো, বমি ভাব, ক্ষুধা মন্দা, শ্বাসকষ্ট এমনকি এলার্জি জনিত কারণে কারো কারো ডায়রিয়াও হতে পারে। কখনোবা মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্তচাপ কমে গিয়ে হঠাৎ মৃত্যুর কারণও হতে পারে (Anaphylaxis) । এছাড়াও কোনো কিছুর স্পর্শে এলে যেমন কোনো ধরনের গয়না-গাটি যদি এলার্জি জনিত ধাতু হয় (তার জন্য) তাহলে যে স্থানের স্পর্শে এসেছে সেখানে চুলকিয়ে চুলকিয়ে ফুলে উঠতে পারে। এমনকি ক্ষত সৃষ্টি হয়ে জীবাণু সংক্রমণও হতে পারে। কোনো ধরনের synthetic জামা কাপড় যদি এলার্জির কারণ হয় তবে সে সব জামা কাপড় পরিধানের কারণে গায়ে চুলকানি, ফুলেউঠা এসব অনেক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এছাড়াও আরো বিাভন্ন ধরনের এলার্জির বিাভন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। যেমন ধর, হাঁপানি বা অ্যাজমা, এটিও এক ধরনের এলার্জি জনিত রোগ।
: তোমার lecture খুব মজা পাচ্ছি। একটু খুলে বলো না আরো কি কারণে এলার্জি হয় অথবা তাদের ধরনগুলোইবা কি?
: আসলে এগুলো অনেক জটিল ব্যাপার। তবে এসব এলার্জি জনিত সমস্যাগুলেকে মূলতঃ চার ভাগে ভাগ করা যায়, যা এই সল্প পরিসরে বর্ণনা করা কঠিন। এবিষয়টি না হয় আরেক দিনের আলোচনার জন্য থাক।
: বাব্বাহ্! এলার্জির ডাক্তারতো প্রায় হয়েই গেলাম। তাহলে এখন প্রতিকারের বিষয়ে শুনি। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
: এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে, যদি কারো সত্যিকার অর্থেই এলার্জির সমস্যা থাকে তবে তাকে এলার্জির কারণটি খুঁজে বের করতে হবে। খাবার-দাবার কিংবা পরিধেয় বস্তু এলার্জির কারণ হলে হয়তো খুব সহজেই খুঁজে বের করা সম্ভব। কিন্তু অনেক সময় ধুলা-বালিতে অবস্থানরত বিভিন্ন উপাদান, কিছু অণুজীব, মাইট, ঘাসের বীজ, ফুলের রেণু ইত্যাদি যদি এলার্জির কারণ হয় তবে তা খুঁজে বের করা মুশকিল। যা-ই হোক, যদি সেই নির্দিষ্ট বস্তুটিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় তবে করণীয় অতি সহজ, সেই নির্দিষ্ট বস্তুটি থেকে দূরে থাকা। তাহলেই এলার্জি সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।
: তাহলে এই যে এলার্জিক খাবার-দাবারগুলো, চিংড়ি মাছ, পুঁটি মাছ, বোয়াল মাছ, পুাঁই শাক…..।
: আবারও সেই একই ভাঙ্গা ঢোল! বললাম না, এসব উপাদানগুলো অযথাই মানুষ না বুঝে এড়িয়ে চলে। কবেযে কে এই দাওয়াই দিয়ে গেছে, আর জনগণ এখনও তা আঁকড়ে ধরে আছে!
: তাহলে এলার্জিতে ওগুলো খেতে নিষেধ নেই?
: অবশ্যই না, যদি না চিহ্নিত এই বিশেষ বস্তুগুলোই এলার্জির কারণ হয়।
: ধরো, কারো এলার্জির সমস্যা হয়েই গেছে, চুলকানি হচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে তখন কি করবে?
: অর্থাৎ চিকিৎসা?
: হ্যাঁ, এটুকুই বা বাদ থাকবে কেন?
: ঠিক আছে শোন তাহলে। এই যে এলার্জির কারণে চুলকানি হয় ফুসকুড়ি উঠে….আরো কত কিছু। এগুলো কিন্তু এমনি এমনি হয় না। দেহাভ্যন্তরে তখন বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হতে থাকে, ফলশ্রুতিতে কিছু কিছু কোষ-কলা থেকে নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদান (Chemical mediator) নিঃসৃত হয়ে রক্তে আসে। তার মাঝে অন্যতম হলো হিসটামিন (Histamin) , সেরোটনিন (Cerotonin ) ইত্যাদি। এসব রাসায়নিক মেডিয়েটরগুলোই কিন্তু সমস্যা সৃষ্টির কারণ। তাহলে প্রথমেই যেটা করতে হবে তা হলো এসব নিঃসৃত উপাদানগুলোকে দমন বা নিউট্রাল করা। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক নিঃসৃত উপাদানগুলোর ধরন ও মাত্রা অনুধাবন করে সে অনুযায়ী তার বিরুদ্ধবাদী ঔষধ প্রয়োগ করে থাকেন। তাহলে কি হবে? রক্তে এলার্জি সৃষ্টিকারী সেই উপাদানসমূহ নিউট্রাল হয়ে গেলে রোগীর উপসর্গ হয়তো তাৎক্ষণিক প্রশমিত হবে। কিন্তু যে সমস্ত রাসায়নিক পরিবর্তন কিংবা প্রতিক্রিয়ার কারণে এসব মেডিয়েটরগুলো রক্তে নিঃসৃত হয়, তা থেকেই যায়। তাই এবার প্রয়োজন এলার্জিক মেডিয়েটরগুলোর নিঃসরণকারী কার্যক্রমগুলো থেকে দেহকে নিবৃত করা যেন সেসব মেডিয়েটরগুলো আর রক্তে নিঃসৃত হতে না পারে। আবার কখনো কখনো দেহের এসব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলোকে থামিয়ে দেয়ার জন্যও কিছু কিছু ঔষধ বিশেষ করে immunomodulatory ও immunosuppressive ঔষধ প্রয়োগের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
: এখন পর্যন্ত যে চিকিৎসার কথা বললে তাতে তো মনে হচ্ছে রোগী কোনো স্থায়ী সমাধান পেল না!
: এইতো বুঝতে পেরেছো। মাথা খুলেছে মনে হচ্ছে। অবশ্যই তাই। এগুলো স্থায়ী সমাধান নয়। আপাতত সমস্যা থেকে উৎরানোর পথ মাত্র।
: তাহলে স্থায়ী সমাধানটা কি?
: এটা আসলে জটিল। কখনোবা সম্ভব না-ও হতে পারে। তবে ইদানিং চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে কিছু কিছু চিকিৎসা কোন কোন ধরণের এলার্জির স্থায়ী সমাধান দিতে সক্ষম। যেমন ধর, যদি এলার্জির কারণ নির্ধারণ করা যায় অর্থাৎ এলার্জেনটি সনাক্ত করা যায় অথবা ধারণা করা যায়, তবে দেহকে ধীরে ধীরে সেই বিশেষ বস্তুটির প্রতি সংবেদনশীলতা কাটিয়ে উঠার জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, যাকে বলা হয় ডিসেনসেটাইজেশন (desensitization)। এক্ষেত্রে সেই এলার্জিক বস্তুটি অনেক ধৈর্য এবং সময় নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে খুব অল্প মাত্রায় দেহে প্রয়োগ করে দেহকে তার প্রতি সহনশীল করে তোলা হয়। এভাবে ক্রমান্বয়ে ঐ বস্তুটির মাত্রা বাড়াতে থাকলে দীর্ঘ ব্যবধানে দেহ ঐ বস্তুটির প্রতি এক পর্যায়ে সহনশীল হয়ে গেলে আর সেই বস্তুর সংস্পর্শে এলেও তা আর দেহের কোন বিরূপ প্রতিক্রীয়ার কারণ হয় না। অর্থাৎ অনেকটা স্থায়ি সমাধান। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, ধর তোমাকে আমি পছন্দ করি না । এখন যদি প্রতিদিন খুব অল্প সময়ের জন্য তোমাকে আমার সামনে এনে ধীরে ধীরে সহনশীল করে তোলা যায়, তখন এক পর্যায়ে হয়তো তোমার প্রতি আমার মান অভিমান কমে আসবে। তারপর হয়তো এক সময় তুমি আমার বন্ধুই হয়ে গেলে, এই আর কি!
: তাহলেতো এলার্জি জনিত সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান পাওয়া সম্ভব, তাই না কি?
: তা সম্ভব। কিন্তু ব্যাপারটি যত সহজে বললাম কার্যক্ষেত্রে বিষয়টি মোটেও ততটা সহজ নয়। প্রথমতঃ এলার্জিক বস্তুটি নির্নয় করা কিংবা নিদেন পক্ষে একটি গ্রুপের বস্তু নির্ধরণ করা, যার মধ্যে কাংক্ষিত এলার্জেনটি থাকা সম্ভব, বিষয়টি এত সহজ নয়। তারপর প্রাপ্যতা সাপেক্ষে পিউরিফাইড ফরমে সেই এলার্জেনের সূক্ষ্ম মাত্রা নির্ধারণ করে দেহে প্রয়োগ এবং ধৈর্যের সাথে তার প্রতিক্রিয়া অবলোকন করা যথেষ্ট জটিল বিষয়। সর্বোপরি আরেকটি ব্যাপার যেটা থেকে যায় তা হলো ঝুঁকি। দেখা গেল সূক্ষ্ম মাত্রায় এলার্জেনটি প্রথম প্রয়োগ করা হলো, কিন্তু তাতেই দেহ বিরাট প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ফেললো তখনই। কখনো এধরণের প্রতিক্রীয়া এতটাই তীব্র হতে পারে যে, জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। অবশ্য তেমনটি সচরাচর খুব কমই হয়ে থাকে। সর্বোপরি আর্থিক দিকটাতো আছেই।
: সে যাই হোক, চিকিৎসাতো সম্ভব?
: তা ঠিক। ভবিষ্যতে হয়তো আরো সহজ হয়ে আসবে।
: যাক, এলার্জি নিয়ে আনেক ভুল ধারণা আমারও ছিল। আজ অনেকটাই ক্লিয়ার হলাম।
: রাত অনেক হয়েছে, চল উঠি।
: হ্যাঁ, চল যাই।

লেখক: ডাঃ মোঃ বজলুল করিম চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক,মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ