1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৮ অপরাহ্ন

রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিশ্বকাপ যাওয়া অনিশ্চিত

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪
  • ১০০ Time View

tiger bdছোটখাট গড়নের একজন যুবক। পেশায় তিনি একজন মোটর মেকানিক। স্ক্রু ড্রাইভার আর হাতুড়ি নিয়ে গ্যারেজেই তার সংসার হওয়ার কথা। কিন্তু ২৬ বছর বয়সী এই যুবক মজেছেন অন্য এক প্রেমে! তিনি যে মোটর মেকানিকের কলাকৌশল রপ্ত করেও নিজেকে সঁপে দিয়েছেন ক্রিকেটের প্রেমে! শুধু ক্রিকেট খেলার প্রেমে মজেছেন বললে ভুল হবে তিনি শুধুই মাতাল হয়েছেন সাকিব-তামিম-মুশফিকদের ক্রিকেটিয় প্রেমে!

তার প্রেমের উন্মাদনায় রীতিমত বিস্মিত হয় পুরো জাতি, আন্দোলিত করে তুলে বাংলাদেশি ক্রিকেট ভক্তদের। উৎসাহিত হয় পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত সব খেলায় তাকে দেখা গেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার রূপে। নিজের পুরো শরীরকে রং তুলিতে ডোরাকাটা দাগ এঁকে বাঘের অবয়বে হাজির হন প্রতিটি ম্যাচে।

বাঁশের কঞ্চিতে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা উঁচিয়ে ক্যারিকেচার করে থাকেন ম্যাচের প্রথম বল থেকে শেষ বল পর্যন্ত। এভাবেই মাঠে বসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে যিনি নিরলসভাবে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন তিনি হচ্ছেন ইতোমধ্যে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে টাইগারদের ‘সুপার ফ্যান বাঘ’ হিসেবে পরিচিত পাওয়া সোয়েব আলী বুখারী।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার দ্বিতীয় ম্যাচ চলাকালীন কথা হয় বাঘ হিসেবে পরিচিত পাওয়া সুপার ফ্যান টাইগার সোয়েব আলীর সঙ্গে।

বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা সদরে জন্মগ্রহণকারী বর্তমানে ঢাকার বাড্ডার বাসিন্দা সোয়েব জানালেন তার ‘বাঘ’ হয়ে উঠার পেছনের গল্প। তিনি জানান, ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করলেও স্কুলের পাঠ চুকিয়ে কিশোর বয়সেই তিনি ঢাকায় চলে আসেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট সোয়েব। বাবা রফিকুল ইসলাম এলাকায় কৃষি কাজের পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করেন আর মা শামসুন নাহার গৃহিনী হিসেবে ঘর সংসার দেখভাল করেন।

তার অন্য ভাই-বোনরা পড়ালেখা করে এখন চাকরি করলেও শৈশব থেকে দূরন্তপনা কিংবা দুষ্টুমির কারণে তার স্কুলের পাঠ শেষ করতে হয় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতেই। এরপর বড় ভাইয়ের সঙ্গে চলে আসেন ঢাকায়। লেখাপড়ায় মন না বসায় তাকে ঢাকায় এনে দিয়ে আসা হয় একটি মোটর মেকানিকের গ্যারেজে। পড়ালেখায় মন বসাতে না পারলেও সোয়েব আলী ঠিকই বছর কয়েকের মধ্যে পাক্কা মেকানিক হয়ে সংসারে আর্থিকভাবে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

ছোটকালেই কেন পড়ালেখার পাঠ শেষ করে গ্যারেজের মেকানিক হতে হলো সোয়েব আলীকে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আসলে পড়ালেখা আমার ভালো লাগতো না। আমি সব সময় খেলাধুলার মধ্যে ঢুবে থাকতাম। তবে তেমন কোনো খেলোয়াড় হতে পারিনি।’

‘যখন পড়ালেখা বাদ দিয়ে কিছুই হতে না পারলেও খেলার প্রতি টানটা কখনো কমেনি। সে কারণে ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করলো সেই ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার ঝোঁক বাড়তে থাকে। এই খেলাটি টিভিতে বা মাঠে গিয়ে দেখা আমার নেশায় পরিণত হয়।’ বললেন সোয়েব আলী।

 

কখন থেকে নিজে বাঘ সেজে মাঠে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে উৎসাহিত করা হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টিভিতে যখন খেলা দেখতাম, তখন পাকিস্তানের জলিল চাচা, শ্রীলংকার গায়ান কিংবা ভারতের সুবীর কুমার চৌধুরীদের এই ক্রিকেট পাগলামি আমাকে কাছে টানতো। তখন থেকে চিন্তা করলাম ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশে এতো জনপ্রিয় হলেও আমাদের দেশেতো এরকম কেউ নেই, যে টাইগারদের সুপারফ্যান হয়ে উঠবে, নিজ দলকে প্রতিটি খেলায় মাঠে গিয়ে অকুণ্ঠ সমর্থন দেবে।’

‘এরপর থেকে ধীরে ধীরে আমার মাথায় এই চিন্তাটি ঘুরপাক খাচ্ছিলো। ২০১২ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ থেকে নিজে বাঘ সেজে মাঠে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি খেলায় সমর্থন ও উৎসাহ জুগিয়েছি ক্রিকেট দলকে।’

এরপরের যাত্রাটি সহজ ছিল না টাইগার ফ্যান সোয়েব আলীর। মোটর মেকানিকের কলাকৌশল রপ্ত করলেও তার প্রতিটি শিরায় বইছে ক্রিকেট খেলার প্রতি টান। নিজের খরচে দেশের মাঠিতে সবকটি খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে হাজির হওয়ার সামর্থ থাকলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিদেশ সফরগুলোয় কি করতেন তিনি? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল তার মুখেই। বললেন, ‘২০১৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের শ্রীলংকা ট্যুরে গিয়ে মাঠে বসেই সমর্থন জুগিয়েছিলাম নিজ খরচে। এরপরের বার নিউজিল্যান্ড সফরেও গিয়েছিলাম। তবে ওই সময় বিসিবির পক্ষ থেকে ভিসা ও হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। আর বিমান ভাড়ার টাকা দিয়েছিল ঢাকা ব্যাংক।’

ক্রিকেটের প্রতি নিজের ভালোবাসার বর্ণনা দিতে গিয়ে সোয়েব আলী বলেন, ‘চলতি বছর শ্রীলংকার বাংলাদেশ ট্যুরের সময় আমি ঢাকার মিরপুরে ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে মাঠে হাজির হয়েছি। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন ভাই আমার গায়ে হাত দিয়ে দ্রুত মাঠ থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। উনার নির্দেশে মাঠ ছাড়লেও আমার মনটা পড়েছিল সারাক্ষণই মাঠে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে যখন নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও কোনো স্পন্সর পাওয়া যাচ্ছে না, তখন আমার গ্রামের বাড়ির একটি জমি বিক্রি করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। যদিও পরে ঢাকা ব্যাংক ও বিসিবি আমাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সুপার ফ্যান টাইগার সোয়েব আলীর দেখাদেখিতে এখন বাংলাদেশে অনেকে বাঘ সেজে মাঠে উপস্থিত হয়ে খেলোয়াড়দের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এরকম সমর্থকদের নিয়ে গত বছরের শেষ দিকে গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। আর এই সংগঠনটির আজীবন সদস্য হলেন সোয়েব আলী। বর্তমানে দেশের মধ্যে যতোগুলো ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেসব ম্যাচে মাঠে গিয়ে সাকিব-মুশফিকদের সমর্থন দিতে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছে সমর্থকদের নিয়ে গড়ে উঠা বিসিএসএ।

এ প্রসঙ্গে সোয়েব আলী বলেন, ‘গত বছর থেকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সব ম্যাচে আমার অংশগ্রহণের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছে বিসিএসএ। তবে তারা দেশের ম্যাচগুলোতে সহযোগিতা করলেও সামনে অনুষ্ঠেয় নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপে আমার যাওয়ার ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করতে পারবে কি-না তা আমি জানি না। কারণ সেখানে অনেক টাকার প্রয়োজন।’

বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড থেকে কোনো ধরনের সমর্থন পান কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ওই যে বললাম, নিউজিল্যান্ড সফরে ভিসা আর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। আর দেশের সব ম্যাচে আমাকে অ্যাক্রিডিশন কার্ড দেয়া হয়। তবে অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করা হয় না। আমি আশা করবো বিশ্বকাপে যাতে আমি দলকে মাঠে বসে সহযোগিতা করতে পারি সে জন্য দেশের বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানসহ বিসিবি যেন তাদের সহযোগিতার হাতটা বাড়িয়ে দেয়।

 

খেলা চলাকালীন টেলিভিশন ক্যামেরার ফোকাস তার উপরই থাকে বেশি। ওই সময়ে তার গর্জনে সত্যিকারের বাঘই যেন হার মানে! এমনকি গ্যালারিতে তাকে কেন্দ্র করেই দর্শকরা মেতে উঠেন। তার সঙ্গে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে রীতিমত। দর্শকদের মাঝে সোয়েব আলী পেয়েছেন রীতিমত তারকাখ্যাতি। তবে শেষ বাক্যে তার কণ্ঠে ছিল হতাশার সুর। বললেন, ‘ক্রিকেটকে ভালোবাসি বলে নিজের টাকা খরচ করে কিংবা কোনো সংগঠনের টাকায় মাঠে বসে খেলা দেখি। সারাক্ষণ ক্যরিকেচার করে স্টেডিয়ামকে মাতিয়ে রাখি। কিন্তু যখন খেলা শেষ হয় তখন আমাকে আবার ফেলে আসা কাজগুলো পুষিয়ে নিতে স্ক্রু ড্রাইভার আর হাঁতুড়ি নিয়ে গ্যারেজে দিনরাত পরিশ্রম করতে হয়। খেলা চলাকালীন আর্থিক ক্ষতিগুলো পুষিয়ে নিতে হয়।’

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ