1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন

পেয়ারার বাম্পার ফলন, ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না চাষীরা

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৪
  • ৯৬ Time View

অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আর সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে ঝালকাঠি তথা দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার পেয়ারা চাষী পেয়ারার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। প্রতি বছরই তাদের উৎপাদিত ফসল নামমাত্র মূল্যে কিনে নিচ্ছেন পাইকার নামক মধ্যসত্ত্বভোগীরা, বিনা শ্রমে তারা অর্জন করছে বিপুল মুনাফা। অথচ সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করেও কৃষকদের ভাগ্য বদলায় না।image_94331_0

মনে করা হয়, এ অঞ্চলের পেয়ারা চাষের বিপ্লব ঘটে প্রায় ২০০ বছর আগে। প্রায় ১০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে পেয়ারা চাষ করে আসছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

জাতীয়ভাবে এ ফলটা পেয়ারা নামে পরিচিত হলেও স্থানীয়ভাবে একে গৈয়া কিংবা সবরি বলা হয়ে থাকে। সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন বাংলার আপেল খ্যাত এ অঞ্চলের পেয়ারা সারাদেশে পরিচিত। বাংলার আপেল বলতে মূলত বৃহত্তর বরিশালের পেয়ারাকেই বুঝায়।

পেয়ারার আকার ছোট হলেও খুবই রসালো ও মিষ্টি। বিচি নরম। জুলাই-অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই চার মাস পেয়ারার ব্যবসা চলে। এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা পেয়ারা ও সবজি নির্ভর।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ঝালকাঠি সদর, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি এবং বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলার প্রায় ৩১ হাজার একর এলাকা জুড়ে রয়েছে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম পেয়ারা বাগান। এর মধ্যে ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্তিপাশা,নবগ্রাম ও বিনয়কাঠি ইউনিয়নে ১২টি গ্রামের ৮০০ একর জমিতে বাগান রয়েছে।

এছাড়া পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি উপজেলার ১৮টি গ্রামে এক হাজার ৬০০ একর ও বরিশালের বানরিপাড়া উপজেলার ৬০০ একর জমিতে বাগান রয়েছে।এ তিন জেলায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ সরাসরি পেয়ারা চাষের সঙ্গে জড়িত। পেয়ারার উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে আরো অন্তত ১০ হাজার পরিবার।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চল পেয়ারা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। অনুকুল আবহাওয়ায় এবারো পেয়ারার ফলন ভালো। এফলের মূল উৎপাদন মৌসুম চার মাস জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্ব ও অক্টোবর।

এ অঞ্চলে পেয়ারার অন্যতম মোকাম ঝালকাঠির বাউকাঠি ও ভীমরুলির ভাসমান বাজার। এ ছাড়া পিরোজপুরের আটগড়, কুড়িয়ানা, বরিশালের বানরীপাড়াসহ ছোট-বড় প্রায় ২০টি বাজারে পেয়ারা বেচাকেনা হয়। এসব বাজার থেকে নৌ-পথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেয়ারার চালান করা হয়।

এসব বাগানে প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদিত হয়। স্বাদেগন্ধে অতুলনীয় এ পেয়ারা পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বলেই একে বলা হয় বাংলার আপেল। এখন পেয়ারার মৌসুম, কৃষকরা ব্যস্ত পাকা পেয়ারার তুলে বাজারজাত করার কাজে। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং হিমাগার না থাকার কারণে তাদের পক্ষে দ্রুত পচনশীল এফল ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় বড় শহরে নিয়ে বিক্রি কিংবা সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়, তাই স্থানীয় বাজারে পাইকারদের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। ঢাকার মতো বড় শহরে এ অঞ্চলের পেয়ারার কেজি ১৫/২০ টাকা হলে স্থানীয় আড়ৎদ্দারদের কারসাজিতে ও এখানে তা বিক্রি হচ্ছে ২/৩ টাকায়।

স্থানীয় পেয়ারা চাষীরা জানান, মৌসুমের শুরুতে বাজারে প্রতি মন পেয়ারার দাম ছিল ৩০০ টাকা।তবে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি মন ১০০-২০০ টাকায় নেমে গেছে।

ভীমরুলি গ্রামের শমির হাওলাদার বলেন, “এবার পেয়ারার ফলন ভালো। মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো থাকায় লাভের আশায় ছিলাম। তবে হঠাৎ বাজার পড়ে গেছে। আড়তদারদের নির্ধারিত দামেই পেয়ারা বিক্রি করতে হয়।তাদের সঙ্গে দরকষাকষির কোনো সুযোগ নেই।”

পাশের শাহগাছি গ্রামের চাষী বিপুল হালদার পেয়ারা চাষের পাশাপাশি এবার বাগানও কিনেছেন। তিনি বলেন, “১৫ হাজার টাকায় বাগান কিনে এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচ হাজার টকার পেয়ারা বিক্রি করেছি। বর্তমানে প্রতি মন পেয়ারা বিক্রি করে সর্বোচ্চ ১০০-১৫০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। একজন শ্রমিকের মজুরি দিনে ৩০০ টাকা। বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করেও মজুরি খরচ উঠছে না।”

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুল আজিজ ফরাজি বলেন, “এ অঞ্চল পেয়ারা চাষের জন্য উপযোগী। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং এ অঞ্চলে পেয়ারাভিত্তিক জ্যাম-জেলি কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।”

কৃষি বিভাগের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে দেশী পেয়ারার সংগে হাইব্রিড জাত চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।অচিরেই কৃষি প্রধান এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং পেয়ারা ভিত্তিক শিল্প কারখানা স্থাপিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা এখানকার কৃষকদের।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ