১৯৮১ সালে দেশে ফেরার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাঁদলেন। এসময় অনেককেই চোখ মুছতে দেখা গেছে।
শনিবার সকালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় এ দৃশ্যের অবতারণা হয়।
পঁচাত্তরে পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে যখন হারান। বিদেশে অবস্থান করায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানা। পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে ছয় বছর পর দেশে ফেরেন তিনি।
সেদিনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দুটো স্যুটকেস হাতে নিয়ে ফিরে এলাম। আমি চিন্তাও করিনি কোথায় থাকব, কোথায় উঠব। সেসময়ের কঠিন দিনগুলোর কথা দলীয় নেতাকর্মীদের সামনে তুলে ধরতে গিয়ে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী।
অশ্রুশিক্ত কণ্ঠে কথা বলার একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। মাঝে মাঝে মুচছিলেন চোখের পানি।
শেখ হাসিনা বলেন, একদিন আব্বাকে স্বপ্নে দেখলাম। আমি আব্বাকে বলছি, আপনি কোথায়? আওয়ামী লীগ যদি ভেঙে যায়, আমরা দেশে ফিরতে পারব না। আব্বা বললেন, চিন্তা করিস না। পার্টি ইউনাইটেড থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটাই চিন্তা, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।
দেশে ফেরার দিনটির কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল। এর মাঝেও লাখো মানুষের ঢল। বাংলাদেশ থেকে যখন বাইরে যাই, তখন মা-বাবা, ভাই সব ছিল। রাসেল বিদায় দিতে এয়ারপোর্টে গিয়েছিল। লাখো মানুষের ভালোবাসা পেলাম। কিন্তু আমার ভালোবাসার মানুষগুলোকে আর পেলাম না। পেলাম বনানী কবরস্থানে সারিবদ্ধ কবর। পরিস্থিতিটা ছিল আমার জন্য কঠিন।
আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে ভারতের নয়াদিল্লি থেকে তেজগাঁও বিমানবন্দরে নামেন শেখ হাসিনা। সেদিন সারা দেশের আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতাকর্মী তাকে অভ্যর্থনা জানাতে সমবেত হয়েছিলেন ঢাকায়। তেজগাঁও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত রূপ নিয়েছিল জনসমুদ্রে।
শনিবার দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে ৩২ নম্বরে ঢুকতে দেয়নি। রাস্তায় বসে মিলাদ পড়ি। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নির্দেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি। দরজার সামনে বসে থাকতাম।
শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র ১৫ দিন আগে দেশ ছেড়ে গিয়েছিলাম। ভাগ্যের এই বিপর্যয় ঘটবে ভাবতে পরিনি। সবাইকে ছেড়ে গেলাম। এসে দেখি নিঃস্ব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখনো ভাবিনি সব হারিয়েছি। কেউ বলছে, মা বেঁচে আছে, রাসেল বেঁচে আছে। ভারতে এসে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে সব জানতে পারলাম।
অনুষ্ঠান শুরুতেই আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।