1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন

হত্যা চেষ্টার কথা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে আগেই জানানো হয়েছিল

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১০ মে, ২০১৪
  • ৬৯ Time View

nazrul_lashপ্রায় দুইমাস আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে লিখিত আবেদনে জানিয়েছিলেন, তাকে নূর হোসেন ওরফে হোসেন চেয়ারম্যান কিলার গ্রুপ ভাড়া করে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে। রাষ্ট্রের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়েও নজরুল বাঁচতে পারলেন না।

আবেদনে যে নূর হোসেনের কথা উল্লেখ করেছিলেন নজরুল, সেই নূর হোসেনই তাকে হত্যা করেছে বলে নজরুলের স্ত্রী সাতটি হত্যা মামলার বাদি সেলিনা ইসলাম বিউটি এবং তার শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান জানান।

এদিকে তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে নজরুল ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অপহরণের দিন রাতেই সাত জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর সংযোগস্থলে ফেলে দেয়া হয়।

একদিন পর নজরুলের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝখানে ভাসতে দেখেছেন স্থানীয় দিনমজুর, জেলে ও ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাঝিরা। তারা বুঝতে পারেননি ভাসমান বস্তার ভিতরে কাউন্সিলর নজরুলের লাশ রয়েছে।

দুইদিন পর অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল দুপুরে দিনমজুর জেসমিন নদীতে পানি আনতে গেলে সেই বস্তাটি দেখেন। সেইদিন তিনি ভাসমান বস্তায় কি আছে তা দেখার জন্য একটু গভীরভাবে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় থাকেন। এসময় জেসমিন দেখেন বস্তা একবার ভাসে আবার ডুবে। এক পর্যায়ে দেখেন মানুষের মুখমন্ডল এবং মাথা, চুল ও দাড়ি। সেইদিন কাউকে না বলে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে বাড়িতে চলে যান।

শুক্রবার গণমাধ্যম কর্মীরা বন্দর উপজেলার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চর ধোলেশ্বর গ্রামে যান। সেখানেই শীতলক্ষ্যা নদী থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বন্দরের শান্তিনগর এলাকায় গুচ্ছ গ্রামের পাঁচকন্যা নামক ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে সেখানে যাওয়া হয়। উল্টা দিকে শাহ সিমেন্টের কারখানা। বিপরীতে অর্থাৎ শীতলক্ষ্যা নদীর উত্তর পাশের তীর ঘেষে দিনমজুর জেসমিনের ছোট্ট বাড়ি। স্বামী আওলাদ হোসেন টিয়া এবং দুই সন্তান নিয়ে তরিতরকারি ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। জেসমিনের বাড়িতে বসে দেখা যায় শীতলক্ষ্যা নদী ও ধলেশ্বর নদীর সংযোগস্থল। নজরুলের লাশ ভর্তি বস্তাটি ২৯ এপ্রিল দুপুর থেকে তার বাড়ি থেকেই শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝখানে ভাসতে দেখেন।

জেসমিন জানান ৩০ এপ্রিল দুপুর ১২টায় কলসী কাধে পানি আনতে নদীতে গিয়ে বস্তাটি ভাসতে দেখেন। কিছুক্ষণ পরে বস্তাটির এক অংশ ভেসে উঠলে দেখেন মানুষের মাথা এবং চুল ও দাড়ি রয়েছে। স্থানীয় এক সাংবাদিককে জেসমিন বিষয়টি জানান।

ঐ সাংবাদিক পুলিশকে জানালে মুহুর্তে পুলিশ দল এসে বস্তাটি উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসে। নজরুলের স্ত্রী ও শ্বশুরসহ অন্যান্য স্বজনরা সেখানে গিয়ে নজরুলের লাশ সনাক্ত করেন। এরপর একের পর এক বাকি ছয়টি লাশ ঐ এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। বস্তার মধ্যে ৫০টির মত ইট বাধা থাকায় নজরুলের লাশ একবার ডুবছিল আবার ভাসছিল বলে পুলিশ জানায়।

জেসমিন বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে ঐ ছোট্ট বাড়িতে বসবাস করে আসছেন ঝুঁকি নিয়ে। প্রায়ই লাশ তার বাড়ি কাছে নদীর তীরে কুচুরিপানার মধ্যে ভাসতে দেখেন। নজরুলের লাশ ভাসার দৃশ্য ছিল ব্যতিক্রম। নদীর মাঝখান থেকে ভাসতে ভাসতে তীরে আসে। দুইজন জেলে জানান, ২৭ এপ্রিল রাতে মাঝ ধরার কাজ করছিলেন। সেখানে ইঞ্জিন চালিত নৌকা কিংবা বালু বহনকারি ট্রলারে করে কিছু সংখ্যক লোককে গভীর রাতে শীতলক্ষ্যা নদী ও ধলেশ্বরী নদীর সংযোগস্থলে ঘুরতে দেখেছেন। তারা কিছু একটা নদীতে ফেলছে, তা বুঝতে পারেন। ইঞ্জিনের শব্দে দূর থেকে কিছু বুঝা যায়নি। দিনমজুর দুই যুবক বাপ্পি ও মোহাম্মদ হোসেন নিয়মিত যান শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর সংযোগস্থল লাশ ফেলার ডাম্বিং পয়েন্টে। তারা গত ৫ বছরে প্রায় কয়েকশ লাশ ভাসতে দেখেছেন। ঐসব লাশ নারী ও পুরুষের। তবে পুরুষের লাশ সর্বাধিক। বেশীর ভাগ লাশ গলিত, টুকরা টুকরা। ঐসব লাশ পুলিশ নদীর তীরে পুঁতে ফেলে। এনিয়ে পুলিশ মামলা করে ঝামেলায় যেতে চায় না। ঐসব লাশের পরিচয় কোনদিন মিলবে না- একারণে অনেক লাশ এ অবস্থায় পুতে ফেলা হয় বলে দুই যুবক জানান। শুক্রবার তারা সেখানে মাছ মারার পর ঘাস কাটছিল।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নজরুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব র‌্যাবকে দিয়েছিলেন:

কাউন্সিলর নজরুল ৯ মার্চ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী র‌্যাবের মাহপরিচালককে আবেদনটি বিশেষ বিবেচনার জন্য ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা লিখে পাঠিয়ে দেন। শুক্রবার র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, তিনি এ আবেদনটি পেয়ে র‌্যাব-১১ কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে পাঠিয়ে দেন।

নজরুল আবেদন উল্লেখ করেন ২০০৫ সালে সিদ্ধিরগঞ্জের নিরীহ জহিরকে নূর হোসেন সন্ত্রাসী বহিনী দিয়ে হত্যা করে। এর কিছুদিন পর তাকে হত্যা করার জন্য নূর হোসেন গুলি করে। নজরুলের পক্ষে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা ন্যায়সঙ্গত কথা বলায় তাদেরকে নূর হোসেন হত্যা করার হুমকি দেয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের সড়ক নির্মাণ কাজের তদারকি করার সময় নূর হোসেনের ১৫/২০ জন ক্যাডার নজরুলকে হত্যা করার জন্য হামলা চালায়। এভাবে সন্ত্রাসী বাহিনী সিদ্ধিরগঞ্জ মিজমিজি এলাকায় সারাক্ষণ প্রহরা দিচ্ছিল। নজরুলকে দেখামাত্র গুলি করে হত্যা করার জন্য নির্দেশ দেয় নূর হোসেন।

সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাবাসি জানান, নূর হোসেন তার আবেদনে হত্যা করার জন্য ঢাকা থেকে কিলার গ্রুপ ভাড়া করে আনা হযেছে বলে আবেদনে উল্লেখ করেন। সেই র‌্যাব-১১ নজরুলের নিরাপত্তা প্রদানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তবে র‌্যাব-১১ নূর হোসেনকে নিরাপদে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসাসহ অপকর্ম করার সুযোগ করে দিয়েছে বলে স্বজনহারা পরিবার অভিযোগ করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ