1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন

উত্তরপ্রদেশে ফ্যাক্টর মুসলিম ভোটার

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০১৪
  • ৮৬ Time View

muslim_indiaভারতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলিম বাস করেন যে রাজ্যে, সেটি উত্তরপ্রদেশ। কেন্দ্রে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এই রাজ্যের ভূমিকা চিরকালই বিরাট, আর সেখানে মুসলিম ভোটের প্রতি নজর প্রায় সব দলেরই।

এককালে কংগ্রেসের সমর্থক মুসলিমদের ভোট আনুগত্য যদিও এখন নানা দলে বিভক্ত। তার পরও নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতায় তারা কিন্তু এবার অনেকটাই এককাট্টা, আবার মুজফফরনগরে দাঙ্গার জন্য অনেকে ক্ষুব্ধ শাসক দল সমাজবাদী পার্টির ওপরও।

রাজ্যের মুসলিম জনসংখ্যার একটা বড় অংশ শিয়া। তারা কিন্তু আবার বিজেপির প্রতি বেশ নরম মনোভাবই দেখাচ্ছেন।

ভোটের বাজারে উত্তরপ্রদেশের মুসলিম মনের ভাবনা কোন খাতে বইছে, সরেজমিনে তারই হদিশ করতে গিয়েছিলাম রাজধানী লৌখনো-তে।

মোদিকে ঘৃণা, মুলায়মে ক্ষোভ!
”গুজরাটের হত্যাকারী, শুনে রাখো – এমন শিক্ষা পাবে যে বাড়ি ফেরার রাস্তা অবধি ভুলে যাবে” …এই শায়েরির লক্ষ্য যে নরেন্দ্র মোদি, তা আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না!

কানপুরের জনপ্রিয় কাওয়ালি শিল্পী শাবিনা আদিব গত দেড় মাস ধরে উত্তরপ্রদেশের গ্রামেগঞ্জে ভোটের মেহফিল বসিয়ে এই গান গেয়ে চলেছেন মূলত মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোয়। হাততালিও পড়ছে মুহুর্মুহু।

কিন্তু কেন? উত্তরপ্রদেশের মুসলিমরা কি নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন? সপ্রতিভ শাবিনা আদিব অবশ্য জবাব দেন, ভয় পাওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই।

তার কথা হলো, ওপরওলা জীবন দিয়েছেন, নিলে তিনিই নেবেন। মোদির দল বা অন্য দল আমাদের কী করবে?

তিনি যে দলের হয়ে প্রচার করছেন, সেই কংগ্রেস অবশ্য মুসলিম ভোট নিয়ে এতটা দার্শনিক হতে পারছে না। বরং পুরনো এই ভোটব্যাঙ্ক ফিরে পেতে তারা উত্তরপ্রদেশে মরিয়া।

রাজ্যে দলের প্রধান মুখপাত্র দ্বিজেন্দ্র ত্রিপাঠী বলছিলেন, মুসলিমদের বারবার ঠকানো হয়েছে। যে সমাজবাদী পার্টি এখন ক্ষমতায় তার নেতা মুলায়ম সিং যাদব নিজেকে মৌলানা মুলায়ম বলেও পরিচয় দিতে ভালোবাসেন, অথচ তাদের আমলে গত দুবছরে শতাধিক দাঙ্গা হয়েছে। মুজফফরনগরে হাজার হাজার মুসলিম ঘরছাড়া হয়েছেন।

ট্যাকটিকাল ভোটিং
এই সব দাঙ্গার কারণেই কংগ্রেস আশা করছে। রাজ্যে তাদের পুরনো বন্ধু মুসলিমরা আবার তাদের পাশে দাঁড়াবেন। একই অঙ্ক কষছে মায়াবতীর দল বহুজন সমাজ পার্টিও।

ফলে সমাজবাদী পার্টি যে গত কয়েক বছরে রাজ্যের মুসলিম ভোটের সিংহভাগ পেয়ে এসেছে, তা সম্ভবত তারা এবার আর পাচ্ছে না।

উত্তরপ্রদেশের অ্যাডভোকেট জেনারেল ও অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য জাফরইয়াব জিলানি বলছিলেন, যে দলই তাদের ভোট পাক, রাজ্যে মুসলিমদের প্রধান লক্ষ্য কিন্তু একটাই।

তার কথায়, ”এই মুহুর্তে উত্তরপ্রদেশের মুসলিমরা অন্তত মনে করে, বিজেপি-কে কিছুতেই ক্ষমতায় আসতে দেওয়া চলবে না, কারণ নরেন্দ্র মোদির গায়ে ২০০২-র দাঙ্গার ছাপ লেগে আছে।”

ফলে মুসলিমরা প্রতিটি কেন্দ্রে ট্যাকটিক্যাল ভোটিংয়ের দিকে যাচ্ছে। অর্থাৎ যেখানে যে প্রার্থী বিজেপিকে হারানোর জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী, তারা তার দিকেই ঝুঁকছেন। সে তিনি সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী হতে পারেন, না-হলে কংগ্রেস বা বসপারও।

ভিন্ন সুর শিয়াদের কন্ঠে?
মুসলিম মন জেতার এই ত্রিকোণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহে কিছুটা ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে শিয়া সমাজের কাছ থেকে।

লৌখনো ভারতে শিয়া মুসলিমদের পীঠস্থান, আর তাদের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় নেতা কালভে জাওয়াদ সম্প্রতি বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংয়ের প্রশংসা করে অনেককেই চমকে দিয়েছেন। তাহলে যে শোনা যাচ্ছে শিয়ারা এবার নরেন্দ্র মোদিকেও পরখ করতে রাজি, কথাটা কি সত্যি?

লৌখনোতে শাহনাজাফ ইমামবড়ার মৌলানা মুসলিম রিজভি সরাসরি হ্যাঁ বা না-তে উত্তর না-দিয়ে বলেন, ”মোদিই হোন বা অন্য কেউ, যিনি পুরো হিন্দুস্তানের কথা ভাববেন তিনিই আমাদের ভোট পাবেন।”

”হতে পারেন তিনি হিন্দু, হতে পারেন মুসলিম বা খ্রীষ্টান। মনে রাখবেন, ইরাক বা ইরান যেখানেই যাই, আমরা কিন্তু প্রথমে হিন্দুস্তানি”, বলেন তিনি।

শিয়ারা যে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকতে পারে, এমন একটা কানাঘুষো শুনেছেন সুন্নি সম্প্রদায়ের নেতা জাফরইয়াব জিলানিও।

তার ধারণা, কালভে জাওয়াদের বিবৃতি থেকেই এই জল্পনার সূত্রপাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারপরও কোনো শিয়া ধর্মীয় নেতা প্রকাশ্যে বিজেপি-কে সমর্থন করবেন না বলেই তার বিশ্বাস, কারণ সুন্নি সমাজকে চটানোর ঝুঁকি ভারতে কোনো শিয়া নেতার পক্ষেই নেয়া সম্ভব নয়।

তাহলে কি শিয়া-সুন্নি সংস্কৃতির মিলনস্থল লৌখনোর মুসলিমরা চট করে হাতের তাস দেখাতে রাজি নন ?

এটুকু অবশ্য তারা স্পষ্ট করেই বলেন, যেহেতু আমাদের থাকতে হবে ভারতেই, তাই এদেশের ভাল চাইবে যারা আছি তাদের সঙ্গেই। কেউ কেউ আবার মনে করেন অনেককেই তো দেখা হল, নরেন্দ্র মোদিকে দেখলেই বা ক্ষতি কী?

ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি
দাঙ্গার আতঙ্ক, ভোট ভাগাভাগির হিসেব, শিয়া-সুন্নির ভাবনা – এই সব অঙ্ককে ছাপিয়েও যেটা সবচেয়ে বেশি সত্যি, তা হলো রাজ্যে মুসলিম সমাজকে আজও দেখা হয় একটা ভোটব্যাঙ্ক হিসেবেই।

চিরকালই তাই হয়ে এসেছে। আর তা ভাবলেই ভীষণ বিরক্ত লাগে প্রবীণ আইনজীবী ইজহার আহমেদের।

তিনি চোখ খোলা ইস্তক দেখে আসছেন, সব দলই মুসলিমদের প্রতি ঝুঁকেছে, কারণ একসঙ্গে একটা গোটা সম্প্রদায়ের ভোট পকেটে পুরে তারা ভোটে ফায়দা লুটতে চেয়েছে। কিন্তু এই ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি কি মুসলিমদের কোনো উপকারে এসেছে?

জনাব আহমেদ মনে করেন, আদৌ আসেনি। কারণ রাজনীতি এক জিনিস, আর গণতন্ত্র অন্য জিনিস।

গণতন্ত্রে প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীন ভাবনা অনুযায়ী ভোট দেয়ার অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু রাজনীতির কারণে মুসলিমরা তা কখনও পাননি।

সমস্যা হলো, এই ২০১৪ সালে এসেও উত্তরপ্রদেশে মুসলিমদের জন্য সে ছবিটা পাল্টাচ্ছে না, দলবদ্ধভাবেই ভোট দিচ্ছেন তারা যার প্রধান কারণ অবশ্যই নরেন্দ্র মোদি।

আর কানপুরের কাওয়ালি তাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে হিন্দু বা মুসলিম নন, সবার আগে তারা ভারতীয়।সূত্র: বিবিসি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ