1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫০ অপরাহ্ন

বন্ধ হচ্ছে না প্রশ্ন ফাঁস

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৪
  • ১১৯ Time View
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী থেকে শুরু করে এসএসসি, এইচএসসি এবং ডিগ্রি পর্যায়ের পরীক্ষার পিছু ছাড়ছে না প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত চক্রগুলো। ফলে পরীক্ষার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে ‘প্রশ্নফাঁস’। গত দুই বছরে হওয়া পরীক্ষাগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কমবেশি প্রশ্নফাঁস হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার ছাড়াও সরকারি চাকরির পরীক্ষা, বিসিএস বাছাই পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হচ্ছে।

কোন কোন অভিভাবক, শিক্ষার্থী নিজ হাতে প্রশ্ন পেয়েছেন, যদিও কৌশলগত কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিষয়টি স্বীকার করেনি। আবার গত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সময় প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় স্বীকার করলেও পরীক্ষা বাতিল করেনি। প্রাথমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হুবহু ফাঁস হওয়ায় কয়েকটি জেলার পরীক্ষা বাতিল করা হয়। আবার ফাঁসের প্রাথমিক প্রমাণের পর গতকালের এইচএসসি পরীক্ষাও বাতিল করে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড।

অভিভাবকরা বলছেন, সব পরীক্ষায়ই প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। কিন্তু যারা ফাঁসের সাথে জড়িত তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এক ধরনের লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটি তদন্তে কি প্রমাণ পেল, কারা দায়ী—তা প্রকাশ করছে না। একের পর এক প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, মন্ত্রণালয় তদন্তে কী পেল তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। ফাঁসের সাথে জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, গত এক দেড় বছরে যে পরীক্ষা হয়েছে তার সবগুলোতেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা প্রতিরোধ না করে বরং অস্বীকার করেছে, যা শিক্ষার মানকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা: গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার দুটি বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিললেও ওইসব পরীক্ষা বাতিল হয়নি। ওই পরীক্ষার বাংলার বিষয়ের ৫৩ শতাংশ এবং ইংরেজির ৮০ শতাংশ প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণ মেলে। পরীক্ষা বাতিল না করার কারণ হিসাবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, শিশুদের শাস্তি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তদন্তে গত ২৩ নভেম্বর ওই সময়ের অতিরিক্ত সচিব আশরাফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কিছু লোক জড়িত রয়েছে। আমরা তাদের শনাক্তের চেষ্টা করেছি। অবশ্যই অ্যাকশন নেব।’ ফাঁস হওয়া ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্ন প্রণেতা এবং প্রুফ রিডার একই ব্যক্তি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই লোক ময়মনসিংহ এলাকার একটি কোচিং সেন্টারের সঙ্গেও জড়িত।’

গত ২৫ নভেম্বর ওই সময়কার প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তা অস্বীকার করছি না। হয়তো বা সীমিত জায়গায় প্রকাশ হয়েছে। সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খবর নেয়া হয়েছে। ওই সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলা পরীক্ষার আগের রাতে কথিত যে প্রশ্নপত্র তিনি পেয়েছেন, তার সঙ্গে মূল প্রশ্নপত্র প্রায় সবই মিলে গেছে। এখন এই অবস্থায় কি করণীয় তার নির্দেশনা চেয়েছেন তিনি মন্ত্রণালয়ে।

জেএসসি পরীক্ষা: গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েছিলেন অনেক অভিভাবক। গণিত ও ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্রের সঙ্গে অভিভাবকদের হাতে থাকা প্রশ্নের মিল পান তারা। এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অভিযোগটি আমাদের কাছেও এসেছে। কিন্তু কথিত প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মূল প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখা গেছে, তাতে ৬০ শতাংশ মিল আছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নকে ‘শর্ট সাজেশন’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতির পরীক্ষায় অভিজ্ঞ শিক্ষকরা শর্ট সাজেশন তৈরি করলে তাতে ৬০ শতাংশ প্রশ্ন মিলে যেতেই পারে’।

জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের আগে মন্ত্রণালয়ের ওই সময়ের যুগ্ম সচিব (মাধ্যমিক) এ এস মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, এমনিতেই হরতালের কারণে সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এর ওপর এ রকম কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকলে তা হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান। পরে বিষয়টি নিয়ে আর এগোয়নি।

এসএসসি পরীক্ষা: গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার গণিতের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ করেছিলেন অভিভাবকরা। বিভিন্ন দামে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়েছিল প্রশ্ন। কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রশ্নের হুবহু কপিও প্রকাশ করা হয়। পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়েছিল ওই প্রশ্ন। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে ওই সময় ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলেছিল প্রশ্নফাঁসের কোন অভিযোগ তারা পায়নি। তবে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র তৈরির অভিযোগে ইসলাম হোসেন নামের এক সহকারী শিক্ষককে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এইচএসসি পরীক্ষা: এবারের এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগের দিন গত ২ এপ্রিল রাতে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনজন, শেরপুরে চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তথ্য অনুযায়ী, ওই জেলাগুলোতে ফটোকপির দোকান থেকে এইচএসসি পরীক্ষার বাংলা ১ম পত্রের ‘ক’ সেট নামে আট কপি প্রশ্নপত্র ও হাতে লেখা উত্তরপত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এরা চড়া মূল্যে এসব প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করছিল। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে ওই দিন সাংবাদিকদের বলেন, এটি গুজব।

সর্বশেষ প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ গতকাল বৃহস্পতিবারের এইচএসসির ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করে।

গত বুধবার রাতে হঠাত্ করেই পরীক্ষা স্থগিত করার এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বুধবার সারাদিন বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় বলে অভিযোগ ওঠে। মোবাইল ফোনের এসএমএস ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরে ঢাকা বোর্ড বিষয়টি জানতে পেরে মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে এর সত্যতা খুঁজে পায়। এ কারণে শুধু ঢাকা বোর্ডে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়।

এ ঘটনা সার্বিক তদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসেইনের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটির সদস্যরা হলেন জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন করে দু’জন যুগ্ম সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কলেজ), শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাধ্যমিক), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ) ও ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক (বিদ্যালয়)। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে গতকাল সকালে ঢাকা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। বোর্ডের সচিব আবদুস সালাম হাওলাদারকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ১৭ জেলার পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। সে পরীক্ষা এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে। 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ