1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৯ অপরাহ্ন

নড়াইলে পল্লীর জেলেরা এখনো ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরে

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৪
  • ১০৫ Time View

নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম গোয়ালবাড়ি। এ গ্রামে জেলেরা খেয়ে না খেয়ে সংরক্ষণ করে চলেছে বিলুপ্তপ্রায় ভোঁদড়। স্থানীয় ভাষায় এদের ধেঁড়ে নামে ডাকা 0266হয়। জেলেদের জীবিকার অন্যতম হাতিয়ার এই ভোঁদড় কেননা এই ভোঁদড় দিয়ে তারা মাছ ধরে। তাই ভোঁদড় তাদের সন্তানের মতো। নিজের সন্তানকে খেতে দিতে না পারলেও ভোঁদড়ের বাচ্চাকে গরুর দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে এই গ্রামের লোকেরা। ওই ভোঁদড়রাই জেলেদের জালে তুলে দিচ্ছে ট্যাংরা, পুটিসহ নানা রকম মাছ। এ কারণে জেলেদের প্রিয় ভোঁদড়।
তবে নদীর মাছ কমে যাওয়া, সুন্দরবনে বনদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন গোয়ালবাড়ির জেলেরা ভোঁদড় নিয়ে শঙ্কিত। তারা কি বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী ভোঁদড়কে শেষ পর্যন্তু বাঁচিয়ে রাখতে পারবে? এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে।
জানা গেছে, নড়াইল শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নড়াইল-নওয়াপাড়া সড়কের পার্শ্বে কলোড়া ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি নামক একটি গ্রাম। এ গ্রামে জেলে পাড়ায় প্রায় শতাধিক পরিবার বসবাস করে। এদের অধিকাংশই খাল-বিল, নদী-নালা থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। পরিবারের মহিলারা বাড়িতে বসে জাল তৈরী, কোথাও জাল কেটে গেলে ঠিক করাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকে। কত বছর ধরে তারা ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ ধরছে তার সঠিক তথ্য কেউ জানাতে না পারলেও তাদের বাবা, ঠাকুর দাদারা এর সাহায্যে মাছ শিকার করত বলে জানান। কবে কখন কোথা থেকে ভোঁদড় আনা হয়েছিল তার হিসেব তাদের কাছে নেই। আগে এ গ্রামে কয়েকশ’ ভোঁদড় থাকলেও এখন এর সংখ্যা মাত্র ৩০টির মতো হবে। অভাব অনটনের কারণে অনেকে ভোঁদড় বিক্রি করে দিয়েছে। ভোঁদড় দেখতে অনেকটা বেজির মত। এ প্রাণী দুই থেকে তিন ফুট লম্বা হয়।
ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা সম্পর্কে সচিন বিশ্বাস জানান, জাল দিয়ে তারা গোবরা, চিত্রা, ভৈরব নদীতে মাছ ধরে। দু’জন নৌকা চালায়। দু’জন জাল ধরে রাখে। আর ভোঁদড় জালের সঙ্গে পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদের গলায় রশি দিয়ে বাধা থাকে। এরা মাছ তাড়িয়ে এনে জালে প্রবেশ করায়। কখনো কখনো ডুব দিয়ে বড় মাছ ধরে এনে তুলে দেয় জেলের হাতে।
গুরুপদ বিশ্বাস জানান, কয়েক বছর আগেও আমরা ভোঁদড় নিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরতে যেতাম। কিন্তু ডাকাতের অত্যাচারে এখন আর তারা সুন্দরবনে যান না। আশপাশের খালে-নদীতে ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ ধরি।
হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ৭টি, ভুবেন বিশ্বাসের ৪টি, রবিন বিশ্বাসের ৫টি, সচীন বিশ্বাসের ৭টিসহ এখানে প্রায় ৩০টির মত ভোঁদড় রয়েছে। জেলেরা ভোঁদড়গুলোকে সন্তানের মত লালন পালন করে। এদের প্রধান খাবার মাছ এবং ব্যাঙ।
অধির বিশ্বাস জানান, একটি মা ভোঁদড় প্রতিবছর ৪/৫ টি বাচ্চা দেয়। বাঁচ্চা ভোঁদড় মায়ের দুধ, গরুর দুধ পান করে। ৬ মাস পার হলে এরাই মাছ ধরার জন্য পানিতে নামে।
তুষার বিশ্বাস বলেন, নদী-খালে মাছ নেই বলে অনেকে ভোঁদড় বিক্রি করে দিয়েছে। একটি ভোঁদড় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
গৃহবধু মীরা জানান, তার স্বামী রবিন অভাবের জন্য ভোঁদড় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে।
ভোঁদড় কিনতে আসা মাগুরার বামনখালী গ্রামের অশোক বিশ্বাস জানান, আমি ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরি। আমার একটি আছে আর একটি কিনতে এসেছি। ১টি পছন্দ হয়েছে, দাম ১০ হাজার টাকা।
জেলে পল্লীর প্রবীণ ব্যক্তি রবিন বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা বাবা, ঠাকুরদার আমলের থেইকেই ভোঁদড় দিইয়ে মাছ ধরতেছি। ভোঁদড়গুলো আমাগের সন্তানের মত। কিন্তু অভাবের জন্যিই আমিও ভোঁদড় বেইচে দিতে বাধ্য হইছি।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ