1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

ম্যান্ডেলা স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বের বহু দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা।

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩
  • ১০৪ Time View

এ সময়ে এ রকম অঝোরে বৃষ্টি হওয়ার কথা নয় জোহানেসবার্গে। কিন্তু সকাল থেকেই নগরের আকাশ ভেঙে বারিধারা। অবিরল বৃষ্টিতে ভিজেছেন মাদিবার স্মরণসভায় যোগ দিতে বাস-ট্রেন-কার ধরে নগরে আসা অগণিত শোকসন্তপ্ত মানুষ। দক্ষিণ আফ্রিকার মহানায়ককে স্মরণ করতে গিয়ে বেদনাবিধুর দেশবাসীর সঙ্গে প্রকৃতিও যেন শোকাতুর হয়েছে গতকাল।

জোহানেসবার্গের সোয়েটোর বিশাল এফএনবি স্টেডিয়াম ছিল প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ। গ্যালারিজুড়ে সমুদ্রের গর্জনের মতো ‘ম্যান্ডেলা’ ‘ম্যান্ডেলা’ ধ্বনি। কেউ নাচছে, কেউ গাইছে। আফ্রিকার প্রথাগত কায়দায় প্রয়াতকে স্মরণ। বিশ্বের প্রায় ১০০ দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের পাশাপাশি প্রিয় নেতার স্মরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ৮০ হাজার সাধারণ মানুষ।

নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় আয়োজন ছিল গতকালের এই স্মরণ অনুষ্ঠান। জোহানেসবার্গের এই স্টেডিয়ামেই ২০১০ সালে শেষবারের মতো জনজীবনের অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তিকে। বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা ছিল সেদিন। এর পর থেকেই নিজেকে সামাজিকতা থেকে গুটিয়ে নেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ ম্যান্ডেলা।

স্মরণ অনুষ্ঠানে ছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। এসেছিলেন বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চারজন প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ প্রেসিডেন্টের বিশেষ উড়োজাহাজ এয়ার ফোর্স ওয়ানে একসঙ্গেই যান। বিল ক্লিনটন ও জিমি কার্টার গিয়েছেন আলাদাভাবে।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকেই ছিল স্টেডিয়ামমুখী জনস্রোত। মুসা এমবেলে নামের একজন বলছিলেন, ‘তিনি (ম্যান্ডেলা) যদি আমাদের জন্য ২৭টি বছর কারাগারে কাটাতে পারেন, আমরা কেন একটি দিন বৃষ্টিতে ভিজতে পারব না?’

শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য জোহানেসবার্গের কেন্দ্রস্থল থেকে সোয়েটো পর্যন্ত বিনা ভাড়ায় ট্রেন ছিল। সব বর্ণের সব বয়সের বিশ্বের নানা অঞ্চলের মানুষের উপস্থিতিতে স্টেডিয়ামটিই যেন রূপ নিয়েছিল ম্যান্ডেলার স্বপ্নের খুদে ‘রংধনু দেশে’। নাইজেরিয়া থেকে যাওয়া ২৭ বছরের যুবক ফোলা ফোলোসেল বললেন, ‘আফ্রিকার সম্ভবত সেরা সন্তান তিনি। জীবনে এ রকম অভিজ্ঞতার সুযোগ একবারই আসে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যেন ম্যান্ডেলার প্রশংসা করতে গিয়ে বিশেষণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতাকে ‘ইতিহাসের মহামানব’ বলে আখ্যা দেন তিনি। ওবামা বলেন, ‘যে কারও প্রশংসা করাই কঠিন…আর ইতিহাসের মহামানবের প্রশংসা করা তো আরও কঠিন, যিনি একটি দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন।’

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বললেন, মৃত্যুর পরও নেলসন ম্যান্ডেলা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে এক করেছেন। তিনি ক্ষমা করা এবং একে অপরকে এক সূত্রে গাঁথার অসাধারণ ক্ষমতা দেখিয়েছেন।… দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের নায়ককে হারিয়েছে। তারা তাদের পিতাকে হারিয়েছে। বিশ্ব হারিয়েছে একজন প্রিয় বন্ধু ও নেতাকে।
স্টেডিয়ামজুড়ে দেশি-বিদেশি সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সমবেত হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘তিনি আবার সেটা করেছেন।’

ক্ষমা আর সমঝোতার মূর্ত প্রতীকে পরিণত নেলসন ম্যান্ডেলার স্মরণ অনুষ্ঠান বলেই হয়তো মুখোমুখি হয়ে যাবতীয় তিক্ততা ভুলে গেলেন যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার নেতারা। গতকাল ‘শত্রু’ কিউবার নেতা রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে করমর্দন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা। বক্তব্য দেওয়ার উদ্দেশ্যে মঞ্চে ওঠার আগে ওবামাই কিউবার নেতার প্রতি হাত বাড়িয়ে দেন।

ম্যান্ডেলাকে ‘ভয়ডরহীন মুক্তিযোদ্ধা’ অভিহিত করে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা বলেন, প্রত্যেকেই মাদিবাকে দেখেছেন। তিনি সবার জীবনকে ছুঁয়ে গেছেন। জুমা আরও বলেন, ‘তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা আমাদের দেশকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবিক মর্যাদা ও গণতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলব।’

স্থানীয় সময় গতকাল দুপুর ১২টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মূল স্মরণ অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপর চলে স্মৃতিচারণ আর শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা। একে একে বক্তৃতা করেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দল এএনসি, বিশ্বনেতা ও ম্যান্ডেলার স্বজনেরা।

ম্যান্ডেলার স্ত্রী গ্রাসা ম্যাশেল, সাবেক স্ত্রী উইনি মাদিকিজেলা-ম্যান্ডেলাসহ পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বনেতাদের মধ্যে আরও ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ, চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লি ইওয়ানচাও, স্পেনের প্রিন্স ফিলিপ, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের প্রধান সোনিয়া গান্ধী, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথন, জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রমুখ। স্বাগতিকদের মধ্যে ছিলেন সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ক ও থাবো এমবেকি আর মানবতাবাদী ধর্মীয় নেতা আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অঙ্গনের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও গতকালের স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেলিব্রিটি তারকাদের মধ্যে ছিলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বোনো ও দক্ষিণ আফ্রিকার অভিনেত্রী চার্লিজ থেরন। বলা হয়েছে, নিকট ইতিহাসে এটিই ছিল ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক শেষকৃত্যানুষ্ঠান। এফএনবি স্টেডিয়াম থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে ওয়াটার্কলুফ বিমান ঘাঁটিটি গতকাল দিনভর ব্যস্ত ছিল।

স্মরণ অনুষ্ঠান শেষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ম্যান্ডেলার মরদেহ প্রিটোরিয়ার ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ে রাখা হবে। প্রেসিডেন্ট থাকার সময় এটাই ছিল ম্যান্ডেলার কর্মস্থল। প্রতিদিন সকালে সাধারণ জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মর্গ থেকে মরদেহ নেওয়া হবে ওই ভবনে। ১৪ ডিসেম্বর বিশেষ সামরিক বিমানে করে প্রিটোরিয়া থেকে ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের প্রধান শহর এমথাথাতে নেওয়া হবে মরদেহ। এমথাথা বিমানবন্দর থেকে সেনাবাহিনীর পরিবহনে করেই ম্যান্ডেলার নিজের গ্রাম কুনুতে নেওয়া হবে লাশ। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হবে পরিবারের কাছে।

প্রথাগত বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা থেকে পরদিন ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করা হবে। ম্যান্ডেলা চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন শৈশবের স্মৃতিমাখা কুনুর মাটিতে। দীর্ঘ অসুস্থতার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজের বাড়িতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নেলসন ম্যান্ডেলা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। এএফপি, বিবিসি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ