এ নির্বাচনকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। গত কয়েক সপ্তাহ মাঠে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের সক্রিয়তা তারই প্রমাণ দিয়েছে। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে চায়ের আড্ডা সর্বত্রেই ছিল সিটি নির্বাচনের আলোচনা। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সিটি নির্বাচনের ভোটকে জাতীয় নির্বাচনের ভোটের মহড়া হিসেবে দেখছেন।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে প্রচার-প্রচারণা শেষ করার পর শুক্রবারের বেশির ভাগ সময় বাসায় কাটিয়েছেন প্রার্থীরা। বিধি লঙ্ঘনের ভয়ে প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামেননি তারা। তবে ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক প্রার্থীরা পক্ষে চলেছে প্রচারণা। মুঠোফোনেও খুদে বার্তা পাঠিয়ে পছন্দের প্রার্থীর জন্য ভোট চেয়েছেন অনেকে। তবে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় এসব বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন । ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য রাজধানীর শেরেবাংলা নগর ইসি সচিবালয়ে বসানো হয়েছে মনিটরিং সেল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রস্তুত আইনশৃংখলা বাহিনীও। যান চলাচলে আরোপ করা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ। নির্বাচনী নগরীতে বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। ভোটারদের মধ্যে উৎসব আমেজ কাজ করছে। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। সবশেষ শুক্রবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি ফের সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে।
যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ: নির্বাচনে বেবি টেক্সি, অটোরিক্সা, টেক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপভ্যান, বাস, ট্রাক ও টেম্পু চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে গত ১২ তারিখ থেকে মোটর সাইকেল চলা নিষেধ রয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রার্থী ও তাদের এজেন্ট, দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।
নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকেরা পরিচয়পত্র নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারি, আইনশৃংখলা বাহিনী, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগের প্রয়োজনে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা নেই।
এসএমএসে ভোটকেন্দ্রের তথ্য: ভোটারদের সুবিধার্থে কমিশন এসএমএসের মাধ্যমে কেন্দ্রের তথ্য জানার সুব্যবস্থা করেছেন। ভোটাররা কোন কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবেন তা এসএমএসের মাধ্যম্যে জানতে পারবেন।
প্রার্থী যারা: ১৪ দলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, খুলনার সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, বরিশালের সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন ও সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপরদিকে ১৮ দলীয় জোটের সমর্থনে রাজশাহীতে মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বরিশালে সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল, খুলনায় মনিরুজ্জামান মনি ও সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও খুলনায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধু, বরিশালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক খান মামুন, রাজশাহীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান ও সিলেটে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চার সিটি কর্পোরেশনে মেয়রসহ ১১৮টি সাধারণ কাউন্সিলর ও ৩৯টি সংরক্ষিত (নারী) কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণ করা হবে। এসব পদের বিপরীতে চার সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে ৩ জন করে ১২ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৪৭ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৯০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভোটার ও ভোট কেন্দ্র: রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ভোটার ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯২৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৯৫ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২২ জন। এ সিটিতে ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩০টি, ভোটকেন্দ্র ১৩৭টি, ভোটকক্ষ ৮৭১টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ আছে ১০৭টি।
খুলনা সিটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৪ হাজার ৫০৪ জন ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ১৬ হাজার ৬২ জন। আর ওয়ার্ড সংখ্যা ৩১টি। এখানে ভোট কেন্দ্র্র ২৮৮টি। ভোটকক্ষ ১ হাজার ৪২৮টি। অস্থায়ী ভোটকক্ষ ৩৩টি। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভোটার ২ লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭ হাজার ৬২৫ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩ হাজার ৬৩২ জন। এ সিটি কর্পোরেশনে ওয়ার্ড সংখ্যা ৩০টি। ভোট কেন্দ্র্রের সংখ্যা ১০০টি ও ভোটকক্ষ ৬১৪টি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভোটার ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন। পুরুœষ ভোটার ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৮১ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৫ জন। এ সিটিতে ওয়ার্ড ২৭টি, ভোট কেন্দ্র ১২৭টি ও ভোটকক্ষ ৮৯৬টি।