1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন

সিলেট চেম্বার সভাপতি জমি-পানি-যোগাযোগ-টাকা সব আছে, বিনিয়োগ নেই

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৩
  • ১৩০ Time View


মাইলের পর মাইল অব্যবহৃত জমি, পানি, নদীপথ, রেল যোগাযোগ, সড়ক নেটওয়ার্ক, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, উচ্চ চাপের প্রাকৃতিক গ্যাসের লাইন, উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা অলস পড়ে থাকা, কাঁচামাল, বাজার সবই আছে সিলেটে। কিন্তু এতো কিছুর পরও এগোয়নি সিলেটের শিল্প কারখানা। ব্যবসার অবস্থাও সুবিধার নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের অসহযোগিতাকেই বড় করে দেখছেন সিলেট চেম্বার সভাপতি ফারুক আহমদ মিসবাহ।

সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের বাসভবনে তিনি বলেছেন, সিলেটের বর্তমান ব্যবসা বাণিজ্যের নানা আশা-হতাশার কথা। সিলেটের শিল্প উন্নয়নে করণীয় নিয়েও জানিয়েছেন তার মতামত।

তিনি বলেন, “সিলেটে রয়েছে প্রচুর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। দেশের কোথাও এমন অব্যবহৃত জমি পড়ে নেই। শিল্প স্থাপনের এমন কোনো উপাদান নেই, যা এখানে নেই। সরকার সদয় হলেই এখানে গড়ে উঠতে পারে বড় বড় শিল্প কারখানা।”

তিনি বলেন, “কিন্তু এ ক্ষেত্রে নেই সরকারের কোনো উদ্যোগ। ব্যাংকে প্রবাসীদের শত শত কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। সরকার বিনিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে না। পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনার পরও ঘোষণা আসেনি পর্যটন নগরীর। সিলেটের বালু দিয়ে এখানে গড়ে উঠতে পারত কাচ ও সিরামিকশিল্প। অথচ তা এখান থেকে ট্রাকে করে নেওয়া হচ্ছে ধামরাই, সাভার বা গাজীপুরে। দেশের ৬২টি সিমেন্ট কারখানার প্রায় সবই আমদানি করা ক্লিংকারের ওপর নির্ভরশীল। সিলেটের চুনাপাথর ও ভারতীয় চুনাপাথরে সিলেটে গড়ে উঠতে পারে লাফার্জের মতো ক্লিংকার ও সিমেন্ট কারখানা। সুনামগঞ্জের ধান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাল হয়ে আবার ফিরে আসে সুনামগঞ্জে। এখানকার চা- শত শত মাইল রাস্তা পার হয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে নিলাম করা হয়, যা অনায়াসেই সিলেট বা শ্রীমঙ্গলে করা যায়।”

বহুল প্রতীক্ষিত স্পেশাল ইকনোমিক জোন বা বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল নিয়ে কথা বলেন তিনি।

মিসবাহ বলেন, “২০০৪ সালে চেম্বারের বোর্ড মিটিংয়ের ভিত্তিতে বৃহত্তর সিলেটের চার জেলায় চেম্বারের নিজস্ব অর্থায়নে আন্তর্জাতিক কনসালট্যান্সি ফার্মের মাধ্যমে ইকনোমিক জোন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি জার্মানভিত্তিক জিটিজেড-এর মাধ্যমে পৃথক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এই দুই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতামতের ভিত্তিতে সিলেটে একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”

তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে ইংল্যান্ড, ইউরোপ ও আমেরিকায় সিলেট চেম্বারের প্রতিনিধিদল সফর করে মতবিনিময় করেন। ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজ’র (বিবিসিসিআই) সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়।”

চেম্বার সভাপতি বলেন, “এর আগে তত্ত্ববাধায়ক সরকারের সময় সিলেট সার্কিট হাউজে উপদেষ্টা ইফতেখার আহমেদের আগ্রহে প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ ইকোনমিক জোন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে একটি স্থানও নির্ধারণ করা হয়।”

তিনি বলেন, “ঢাকা-তামাবিল মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার পারাইচক মোড় এলাকায় স্থান নির্ধারণ করা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষায়িত অর্থনেতিক অঞ্চল গঠনের জন্য তার দফতরে একটি বিশেষ সেল গঠন করেন। সিলেট চেম্বার এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাও করে। এ আলোচনার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী সাতটি বিভাগে সাতটি ইকনোমিক জোন করার ঘোষণা দেন। এরপর সিলেটসহ পাঁচটির অনুমোদন হয়। বৃহত্তর সিলেটের কেন্দ্রবিন্দু শেরপুরে কিছু খাসজমিসহ ব্যক্তি জমিতে এ জোন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।”

সিলেটে শ্ল্পিখাত সবচেয়ে পিছিয়ে অথচ সম্ভাবনা বিপুল, এমন কথা জনিয়ে তিনি বলেন, “সিলেটের গোটাটিকর ও খাদিম নগরে দুটি বিসিক শিল্পনগরী রয়েছে। গত ২০ বছর ধরে সেগুলোয় কোনো প্লট খালি নেই। ফলে শত শত কোটি টাকা সিলেটের ব্যাংকে অলস পড়ে আছে। বিনিয়োগের জায়গা না থাকায় প্রবাসীদের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অযথা অলস পড়ে আছে।”

ভৌগোলিক কারণে সিলেটে স্পেশাল ইকোনমিক জোন খুবই সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের “সেভেন সিস্টারস’’ নামে খ্যাত সাতটি প্রদেশের বাজারে এখানে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের সুযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে সিলেটে শিল্পকারখানা করার মতো উদ্বৃত্ত গ্যাস-বিদুৎও সুবিধা রয়েছে। কেবল সরকারি উদ্যোগ না থাকায় শিল্প কারখান গড়ে উঠছে না।”

তিনি বলেন, “সরকার না চাইলে কেউই শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে পারবে না। দেশের সব সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দূরত্বটা এখানেই । তাই এখানে কারখানা হয় না কর্মসংস্থানও হয় না। সিলেটের চুনাপাথর ও বালি নিয়ে যাওয়া হয় অন্য জায়গায়।”

মিসবাহ বলেন, “সিলেটের পর্যটনশিল্প বিকাশে সিলেট চেম্বার উদ্যোগ নিলেও সরকার আগ্রহী হচ্ছে না। লাফার্জের মতো ১০টি কোম্পানি করার চেষ্টা করলে ৬২টি সিমেন্ট কারখানাকে বিদেশ থেকে ক্লিংকার আনতে হবে না।”

সিলেটে প্রচুর পরিমাণে কৃষি খামার, হ্যাচারি-পোল্ট্রি-ফিশারি ফিড শিল্প, এগ্রো কারখানা করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “এখান থেকে উৎপাদিত চায়ের নিলাম হয় চট্টগ্রামে। আমরা চাই এটা শ্রীমঙ্গলে হোক। সুনামগঞ্চের ধান ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে গিয়ে চাল হয় আবার সুনামগঞ্জে এনে বিক্রি করা হয়। আমরা চাই সুনামগঞ্জেই চাল করার ব্যবস্থা হোক।”

“সিলেটের সীমান্তবর্তী পিয়াইন ও ধলাই নদীর বালু দিয়ে গড়ে উঠতে পারে কাচ ও সিরামিকশিল্প। এ দুই নদীর বালুতে সিলিকার পরিমাণ বেশি থাকায় এগুলো দিয়ে কাচ ও সিরামিকশিল্প গড়ে ওঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেটে বালুনির্ভর কোনো শিল্প-কারখানা না থাকায় কাজে লাগানো যাচ্ছে না এ দুই নদীর বালু,” যোগ করেন চেম্বার সভাপতি।

তিনি বলেন, “সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে সিলেটকে পর্যটন নগরী ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।”

মিসবাহ বলেন, “বর্তমানে ব্যবসা করার সুযোগ থাকছে না। পৃথিবীর কোনো দেশেই ডাবল ডিজিটে ব্যাংক সুদ নেই। কেবল পরিকল্পিতভাবে শিল্প স্থাপনে বাধা সৃষ্টির জন্যই বাংকের সুদ ১৮ থেকে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এটা এক ডিজিটে নামিয়ে না আনলে কোনো দিনই এ দেশে শিল্পবিপ্লব সম্ভব হবে না। পরিকল্পিতভাবে তিন দশক ধরে রাজনীতিবিদদের ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ায় এবং সব ব্যাংক মালিকরা রাজনীতিবিদ হওয়ায় সুদের হার এত বেশি।”
সৌজন্যে: বাংলানউজ২৪.কম

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ