1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

কংগ্রেশনাল মেডেল অসামান্য উচ্চতায় আবারও বাংলাদেশ

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩
  • ১৪০ Time View


যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল গ্রহণ করলেন ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মার্কিন সময় সকাল এগারোটায় কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনের দোতলা রোটান্ডায় প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেট নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অপরিসীম সম্মান আর শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনে ড. ইউনূসের অনন্যসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল’ আনুষ্ঠানিকভাবে ডক্টর ইউনূসের হাতে তুলে দেয়া হয়। মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষের পক্ষে স্পিকার জন বোয়েহনার এই পুরস্কার তুলে দেন। এ এক অনন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত, পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ভাষাভাষী বাঙালির জীবনে এমন গৌরবের মুহূর্ত এর আগে খুব কমই এসেছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ড. ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তির পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গতকালের মতো এত বড় অর্জন আর কখনও আসেনি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশী আমেরিকানদের জীবনে এমন গৌরবের মুহূর্ত এই প্রথম। শান্তিতে ২০০৬ সালের নোবেল প্রাপ্তির পর ডক্টর ইউনূসের ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এওয়ার্ড লাভ এবং গতকাল বিশ্বের একক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল’- এ ভূষিত হওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আবারও অসামান্য এক উচ্চতায় স্থান করে নিলো। ১৭৭৬ সালের ২৫শে মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনকে দিয়ে শুরু হওয়া এই কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল প্রাপ্তদের মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. মুহম্মদ ইউনূস হলেন বিশ্বের সেই বিরলপ্রজ সাত জন ব্যক্তির একজন যারা একই সঙ্গে নোবেল পুরস্কার, প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল- এই তিনটি অত্যন্ত সম্মানজনক পুরস্কারই লাভ করেছেন। এছাড়া ড. ইউনূস হচ্ছেন প্রথম কোন মুসলিম যিনি এ পুরস্কার লাভ করলেন। এই তথ্যটি গতকালের অনুষ্ঠানে ঘোষণা হলে উপস্থিত কংগ্রেসম্যানরা অনেক সময় দাঁড়িয়ে ড. ইউনূসের উদ্দেশে হাততালি দেন।
ক্যাপিটল ভবনের গম্বুজের নিচে অবস্থিত দোতলা রোটান্ডা নামে পরিচিত। রোটান্ডা হলো ভবনটির অন্য তলাগুলোর চেয়ে সর্বোচ্চ। কংগ্রেসের উভয় পরিষদের যৌথ অনুষ্ঠানাদি উদযাপনের জন্য ব্যবহৃত ৯৬ ফুট ব্যাসার্ধের ১৮০ ফুট উচ্চতার বৃত্তাকার এই সম্মেলন কক্ষটিকে ক্যাপিটলের ‘সিম্বলিক অ্যান্ড ফিজিক্যাল হার্ট’ বলা হয়ে থাকে। গতকাল সকাল ১১টা বাজতেই কংগ্রেস সদস্যগণ একে একে জড়ো হতে শুরু করেন ক্যাপিটলের রোটান্ডায়। প্রথমে আমেরিকার জাতীয় সংগীত বাজিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্বজুড়ে ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য বিষয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও চাক্ষুস পরিলক্ষিত বিভিন্ন ঘটনা এবং নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় এ বিষয়ে কাজের সাফল্য বর্ণনা করে ড. ইউনূসের অবদানকে অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকৃতি জানান কংগ্রেসম্যান ও সিনেটরগণ। কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তৃতা করেন, হাউস স্পিকার জন বোয়েহনার, সিনেট মেজরিটি লিডার হ্যারি রিড, সিনেট রিপাবলিকান লিডার মিচ ম্যাককনেল, হাউস ডেমোক্রেটিক লিডার ন্যান্সি পেলোসি, সিনেট এসিস্ট্যান্ট মেজরিটি লিডার ডিক ডার্বিন, ইলিনয়েস সিনেটর রিচার্ড ডার্বিন, নিউজার্সি ১২তম ডিস্ট্রিক্ট -এর কংগ্রেসম্যান রাশ হোল্ড, ফ্লোরিডার ২৭তম ডিস্ট্রিক্ট কংগ্রেসম্যান ইলেনে লেথিনেন, প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ব্যাংকার, রেভ্যুলুশনারি এবং ভিশনারি এই তিনটি শব্দ একসঙ্গে শুধু ড. ইউনূসের জন্যই মানায়।
ইলিনয়েস সিনেটর রিচার্ড ডার্বিন এর বক্তৃতার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অপেরা শিল্পী ড. ইউনূসের কন্যা মনিকা ইউনূস অনুষ্ঠানে পিতা ইউনূসের জন্য উৎসর্গ করে সংগীত পরিবেশন করেন।
স্পিকার জন বোয়েনার বলেন, যুগ যুগ ধরে সৃষ্টিশীল আইডিয়ার উপর আমেরিকা গড়ে উঠেছে। ড. ইউনূস তার ক্ষুদ্র ঋণ আইডিয়ার মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনে পৃথিবীতে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন, তার ধরন অতিমাত্রায় আমেরিকান। আমি তাই ড. ইউনূসকে কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কংগ্রেসে আমার সহকর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। ড. ইউনূসের এই আইডিয়া আগামীতে বিশ্বজুড়ে আরও বেশি সমপ্রসারিত হবে বলে বিশ্বাস করি।
পুরস্কার গ্রহণ করে প্রদত্ত বক্তৃতায় ড. ইউনূস বলেন, আমেরিকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পদে নির্বাচিত আমার বন্ধু কংগ্রেস সদস্যরা আমার সম্পর্কে এতক্ষণ ধরে যা বলেছেন, তা শুনে আমি চোখে পানি ধরে রাখতে পারছি না। আমার কান্না পাচ্ছে। তবে আমাদের সকলেরই একটি মহান উদ্দেশ্য হলো মানবতার মুক্তি। এ রিপোর্ট লেখার সময় ড. ইউনূস কংগ্রেস সদস্যবৃন্দের উদ্দেশে বক্তৃতা করছিলেন। এর আগে ২০০৯ সালে ড. ইউনূস প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডমে ভূষিত হন। কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল এবং প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম- এর সম্মান ও মর্যাদা প্রায় একই মাত্রার হলেও প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড বাছাইয়ের কাজটি করেন প্রেসিডেন্ট নিজে ব্যক্তিগতভাবে কিন্তু কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেলের বিষয়টি কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে আইন পাসের মধ্য দিয়ে অনুমোদিত হয়, যাতে আমেরিকার জাতীয় সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটে থাকে। কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল বিল কংগ্রেসে উত্থাপনের জন্য ২৯০ জন কংগ্রেসম্যান এবং ৬৭ জন সিনেটর বিলটি কো-স্পন্সর করতে হয়। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা, জাতীয় স্বার্থ, বিশ্বশান্তি ও সংস্কৃতি কিংবা অন্য কোন সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনন্যসাধারণ মেধার পরিচয় রাখলে তার স্বীকৃতি স্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক এই পুরস্কার ‘কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়। এর আগে নেলসন ম্যান্ডেলা, মাদার তেরেসাঁ, টনি ব্লেয়ার, জ্যাকি রবিনসন, অং সান সুচি’র মতো বিশ্বনেতৃবৃন্দ এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১২ সালে ‘হলোকাস্টের সময় ইহুদিদের প্রাণ বাঁচানোর বীরোচিত ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ সুইডিশ নাগরিক রাউল উয়ালেনবার্গকে মরণোত্তর কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল প্রদানে মার্কিন কংগ্রেস আইন পাস করেছে।
বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যবিমোচনে ড. ইউনূসের অবদানের প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ তাকে কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল প্রদানের বিলটি ২১শে এপ্রিল ২০০৯ তারিখে কংগ্রেসে উত্থাপিত হয়। ওই বছর ১৩ই অক্টোবর সিনেট তা পাস করে এবং পরদিন বিলটি হাউসের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করে। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০১০ বিলটি পাস করে এবং এরপর ২০১০ সালের ৫ই অক্টোবর ১১১তম কংগ্রেসের পাবলিক ল-২৫৩ হিসেবে বিলটি কংগ্রেসের অনুমোদন লাভ করে। এ বছর ৫ই মার্চ হাউস স্পিকার ওহাইও রিপাবলিকান জন বোয়েনার, সিনেট মেজরিটি লিডার নেভাদা ডেমোক্রেট হ্যারি রিড, সিনেট রিপাবলিকান লিডার কেন্টাকি রিপাবলিকান মিচ ম্যাককনেল, হাউস ডেমোক্রেটিক লিডার ক্যালিফোর্নিয়া ডেমোক্রেট ন্যান্সি পেলোসি’র মতো সিনিয়র কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেন যে ১৭ই এপ্রিল পুরস্কারটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ