1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০০ অপরাহ্ন

মধ্যরাতে মুক্তবাকে কাজী জাফর যা বললেন

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৩
  • ১১৭ Time View

ইসলাম ও মহানবীকে (সা.) নিয়ে ব্লগে কটূক্তিকারীদের শাস্তির দাবিতে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সঙ্গে একমত জাতীয় পার্টি (জাপা) । তবে হেফাজতের বাকি ১২ দফা দাবির সঙ্গে পুরোপুরি একমত নয় দলটি। এ নিয়ে হেফাজতের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি জাপার। এমনটাই জানালেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর। বললেন, ‘দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে জাতীয় পার্টি। আন্দোলনের মূল স্পিরিটের পক্ষে আমাদের অবস্থান। হেফাজতে ইসলামের বাকি ১২ দফা দাবির নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো কথা হয়নি। হয়তো ভবিষ্যতে হবে। তখন এ সম্পর্কে বলা যাবে।’

রবিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মধ্যরাতের মুক্তবাক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন আওয়ামী লীগের একসময়কার তুখর নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না।

হেফাজতে ইসলামের শনিবারের লংমার্চ পরবর্তী মহাসমাবেশ সম্পর্কে কাজী জাফর বলেন, ‘সরকার এটি সভ্যদেশে পূর্বঘোষিত লংমার্চ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি করেছে তা মোটেও ঠিক হয়নি। একটি নতুন অরাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর তারা যে মহাসমাবেশ ঘটিয়েছে তা ছিল দেখার মতো। আমিও নিজেও অবিভূত।’ দেশে ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় সমাবেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ডাকে রেসকোর্স ময়দানে যে সমাবেশ হয়েছিল তা ইতিহাসে সব চেয়ে বড় সমাবেশ। তখন কার তুলনায় এখন ঢাকা জনসংখ্যার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সেই হিসেবে বিচার করলে এটি অন্যতম ও বৃহত্তম সমাবেশ। যা আমি মঞ্চে না উঠলে বুঝতাম না।’

কাজী জাফর বলেন, ‘সরকার এ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে যে নির্বুদ্ধিতা ও হটকারিতার পরিচয় দিয়েছে তার কারণে রাজনৈতিক ইতিহাসে তাদের বিরাট বিপর্যয় ঘটেছে।’ তিনি দাবি করেন, হেফাজতে ইসলাম সারা বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একক প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

`আপনি একসময় বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে সমাবেশ মঞ্চে উঠে আপনার অনুভূতি কী’?-সঞ্চালক মাহমুদুর রহমান মান্নার ছুঁড়ে দেয়া এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী জাফর বলেন, ‘আমি এখন জাতীয় পার্টির রাজনীতি করি। জাতীয় পার্টির পতাকাকে সমুন্নত রাখতে কাজ করছি, করব। তখনকার অনুভূতি আর এখনকার অনুভূতি এক নয়।’

হেফাজতের দাবিগুলো মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণা নির্ভর-ফোনে এক দর্শকের প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন,ইসলাম নিয়ে নাস্তিক-মুরতাদদের কটূক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলামের যাত্রা শুরু। তারা সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থার বিষয়টি যুক্ত করার জন্য যে দাবি তুলেছে তা অযৌক্তিক নয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় এটি সংবিধানে যুক্ত হয়। সেখানে সংবিধান থেকে আল্লাহ ওপর পূর্ণআস্থার বিষয়টি তুলে দেয়ার কোনো কারণ ছিল না। বলা ছিল, কোরআন-সুন্নাহর বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবে না। আওয়ামী লীগের ইশতেহারেও এ বিষয়ে অঙ্গীকার করা হয়েছিল। এখন হেফাজতে ধর্ম নিয়ে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে যে আইন প্রণয়ন করার দাবি তুলেছে তা অযৌক্তিক নয়। আর এটি করলেই দেশ মধ্যযুগে চলে যাবে এই ধারণাও ঠিক নয়। কারণ, ইংল্যান্ডেও ব্লাশফেমি আইন রয়েছে। তাহলে কী তারা মধ্য যুগে চলে গেছে?

সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেফাজতে ইসলাম নাস্তিকদের শাস্তি দাবি করেছে। শাহবাগে যেসব স্বঘোষিত নাস্তিক রয়েছে তাদের শাস্তি দাবি করা হয়েছে। যারা আল্লাহ, মুহাম্মদকে (স.) নিয়ে কুৎসা রটনাকারীদের কথা বলা হয়েছে। এটাও কোনে মধ্যযুগীয় দাবি নয়। নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধে হেফাজতের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এখানে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ বলতে শাহবাগে যারা রাতদিন একসঙ্গে কাটাচ্ছেন তাদের কথা বলা হয়েছে। তাই বলে গার্মেন্টস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষের সহ অবস্থানের কথা বলা হয়নি। তাছাড়া নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধের দাবির মধ্যযুগীয় নয়। এটা আমেরিকাতেও আছে। মুক্তযৌনচারের বিরুদ্ধে সেখানে আন্দোলন হয়েছে। অবাধে নারী-পুরুষের বিচরণের নামে ব্যভিচারকে কেউ সমর্থন করবেন না।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ফোনে যোগ দেন বিজেপি (মঞ্জুর) চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থ। হেফাজতে ইসলামের শনিবারের সমাবেশকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন. ‘আমাদের উচিত এ আন্দোলনের মূল স্পিরিট দিকে তাকানো। হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ যে এত বড় হবে তা কারই ধারনা ছিল না। এ থেকে প্রমাণ হয়েছে ইসলাম বা আল্লাহ তায়ালাকে বিশ্বাসের অনুভূতিতে আঘাতের ব্যাপারে বাংলাদেশের আনাকানাচে এখনও বিশাল সংখ্যক মানুষ সোচ্চার।’

কৌশলী এ নেতা বলেন, ‘আমাদের উচিত হেফাজতের স্পিরিট ধরে এগোনো। ১৩ দফা দাবির মধ্যে যেগুলো বেছে বেছে মানা যায় সেগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া। হয়তো তারা আজ সম্পূর্ন দাবি নিয়ে আসছে। এর মধ্যে অনেক অপরিপক্ক দাবি রয়েছে। তারা তো রাজনীতি করে না। তাই হয়তো এমনটি হয়েছে।’

পার্থ বলেন, ‘যখন ইসলামের ওপর আঘাতের দাবি হেফাজতে ইসলাম আন্দোলন শুরু করল তখন আমরা বললাম তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না। জামায়াতের আরেক নাম হেফাজতে ইসলাম। তারা এতে আরও আঘাত পেয়েছে। যার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এই সমাবেশ।’

পরে কাজী জাফর বলেন, ‘দাউদ হায়দার একটা কবিতা লিখেছিল যেখানে কোনো একটি লাইনে ধর্মকে আঘাত করা হয়েছি। সেজন্য তাকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছি। বঙ্গবন্ধু তাকে ক্ষমতা করেননি। তসলিমা নাসরিন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করায় তাকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ সেখানেও তাকে আসতে দেয়া হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গে তো আসতেই দিচ্ছে না। বোম্বের সালমান রুশদিকে ভারত থেকে বিতারিক করা হল। তাকে আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতিতে বিশ্বাস করি তাদের মনে লক্ষ্য রাখতে হবে কোনো ভাবেই যেন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না আসে।’ কাজী জাফর বলেন, ‘এখানে যারা সমাবেশ করেছে শান্তিপূর্ণভাবে তা করেছে। তারা প্রমাণ করে দিয়েছে তারা সুশৃঙ্খল।’

পরে ফোনে থাকা আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কিন্তু সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে আসেনি। যখন নবীকে (স.) কটূক্তি করা হয়েছে তখন তারা এসেছে। বাংলাদেশ আফগানিস্তান হয়ে যাবে এগুলো বলে তাদের খাটো করা যাবে না। আমার দৃষ্টিতে ইসলামের জন্য এত বড় সমাবেশ আমি আর দেখিনি। এটাকে অবহেলা করলে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে।’

পরে জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, সরকারের উচিত জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে উদ্ভূত সমস্যাগুলো সমাধান করা। অনুষ্ঠান শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজ যে আলোচনা হল তা থেকে নতুন চিন্তা শক্তির দ্বার উম্মোচন হবে বলে আমি মনে করি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ