1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
হাদিকে গুলির ঘটনা নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের অংশ ৩৩৬ জনের গেজেট বাতিলে সুপারিশ জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা জামায়াত কখনো ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপস করেনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে: ড. সালেহউদ্দিন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত : নৌপরিবহন উপদেষ্টা হাসিনা-কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল ২০২৪-কে ১৯৭১-এর মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করি : মাহফুজ আলম ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যকে জাতীয় শক্তিতে পরিণত করতে হবে : সালাহউদ্দিন আহমদ

সংকটে সোনালী ব্যাংক

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৩
  • ১২০ Time View

দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের এখন বেহাল অবস্থা। খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। বেড়ে গেছে মূলধন ঘাটতি। লোকসানের পরিমাণও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋন এখন ১৩ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৪০ ভাগ। মূলধন ঘাটতি প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। আর ব্যাংকটির লোকসান এখন দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি।
হল-মার্কসহ কয়েকটি ঋণ কেলেঙ্কারি ব্যাংকটিকে এ অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। ঋণ জালিয়াতি ছাড়াও প্রভাব বিস্তারে ঋণ বিতরণ, অবাস্তব সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা দিয়ে পুনঃ তফসিলসুবিধা প্রদান, সব ধরনের নিয়মনীতি উপেক্ষা এবং পুনঃ তফসিলের কিস্তি সঠিকভাবে পরিশোধ না করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সোনালী ব্যাংকে এসব অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
ব্যাংক পরিচালনায় ভয়াবহ ব্যর্থতার কারণেই সোনালি ব্যাংকের এই পরিণতি। বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়ে গেছে বৃহত্তম এই ব্যাংকটি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে সরকার মূলধন না জোগালে সোনালী ব্যাংকের চলাই এখন কষ্টকর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সোনালী ব্যাংকের এই পরিস্থিতির জন্য মালিক হিসেবে সরকারকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) নিয়োগ দেয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এই নিয়োগের ক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতার প্রমাণ রাখতে পারেনি। অস্বচ্ছতাও আছে। তাই প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। সরকারের পরে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সোনালী ব্যাংকের এ অবস্থার জন্য দায়ী বলে আমি মনে করি।’
ইব্রাহিম খালেদ আরও পরিষ্কার করে বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির দায়ে বরখাস্তকৃত ডিএমডি মাইনুল হক রূপালী ব্যাংকের জিএম ছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে এনে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি করা হয়। মাইনুল হক ট্রুথ কমিশনে আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কীভাবে একজন আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজকে সোনালী ব্যাংকে ডিএমডি নিয়োগ দেয়? তাদের ব্যর্থতার কারণেই ব্যাংকটির এ অবস্থা হয়েছে।’
নতুন করে খেলাপি ঋণ: কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, গুণমান ভালো না থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে সোনালী ব্যাংকের এক হাজার ৩১৩ টাকার ঋণকে খেলাপি চিহ্নিত করেছে। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের ১২টি শাখা পরিদর্শনে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল বেশ কিছু পুনঃ তফসিল করা ঋণে অবাস্তব সময় প্রদান, কিস্তি পরিশোধ না করা বা কিস্তির আংশিক অর্থ পরিশোধ করার কারণে এসব ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে।
এ নিয়ে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ (২০১২ সালের ভিত্তিতে) বেড়ে হয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। পরিমাণের দিক থেকে তা ১৩ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১২ সালভিত্তিক ‘শ্রেণীকৃত ঋণ ও নিরাপত্তা সঞ্চিতি’ প্রতিবেদনে সোনালী ব্যাংকেরই পাঠানো তথ্য-উপাত্ত ধরে এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ৪৫ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ উল্লেখ করেছিল। নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঋণ বাদ দিয়ে গত ডিসেম্বরের ভিত্তিতে ব্যাংকটিতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৩৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা।
সামগ্রিকভাবে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাত হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। ২০১১ সাল শেষে খেলাপি ঋণ ছিল পাঁচ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা।
বিপুল অঙ্কের এই খেলাপি ঋণের বিপরীতে আগের হিসাবে ধরলে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির দরকার সাত হাজার ১৮০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যাংক সংরক্ষণ করেছিল চার হাজার ৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ঘাটতি ছিল তিন হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুনভাবে ঋণখেলাপি চিহ্নিত করায় এখন ঘাটতি বেড়ে হচ্ছে চার হাজার ২৭৮ কোটি টাকা।
সোনালী ব্যাংকের এই বেহাল অবস্থা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে ব্যাংকটির পরিস্থিতি গুরুতর বলে উল্লেখ করেন। গত বুধবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রদীপ কুমার দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ব্যাংকের হিসাব এখনই চূড়ান্ত না করতে পরামর্শ দিয়েছে। তিনি জানান, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুণমান বিবেচনায় ৮০০ থেকে হাজার কোটি টাকার ঋণকে খেলাপি চিহ্নিত করেছে বলে জানিয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে এখনো আমরা প্রতিবেদন পাইনি। পুরোপুরি তথ্য ৩০ মার্চের মধ্যে আমাদের কাছে আসবে। সে পর্যন্ত আমরা হিসাব চূড়ান্ত করতে পারছি না।’
মূলধনের ঘাটতি: সূত্র জানায়, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ এক হাজার ৯০৪ টাকা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, সরকারের দিক থেকে ব্যাংকটিতে প্রয়োজনীয় মূলধনের জোগান দেওয়া আবশ্যক।
তবে শুধু সোনালী ব্যাংক নয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও মূলধন ঘাটতির পরিমাণ প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি। বিগত জোট সরকার আমলে ২০০৪ ও ২০০৫ সালের বিভিন্ন সময়ে বিশ্বব্যাংকের শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও ব্যাংক আধুনিকীকরণ প্রকল্পের (এন্টারপ্রাইজ গ্রোথ ও ব্যাংক মর্ডানাইজেশন প্রোজেক্ট—ইজিবিএমপি) আওতায় এই ব্যাংকগুলোতে তিন বছরের জন্য ব্যবস্থাপনা ও ব্যাংকিং কার্যক্রম উন্নতিতে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের পরামর্শ ছিল, এগুলোকে কোম্পানিতে রূপান্তর করতে হবে। কোম্পানিতে রূপান্তরের পর্বে ব্যাংকগুলোর সমন্বিত লোকসানকে সম্পদে পরিণত করা হয়। সে সময় ব্যাংকগুলোর সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা শাখা ও ব্যবসাকে ‘গুড উইল’ বা সুনাম বিবেচনা করা হয়। হিসাববিজ্ঞানে সুনামকে সম্পদ খাতে দেখানো হয়। ব্যাংকগুলোতে এই সুনামকে লোকসানের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছিল।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ নিয়ে আপত্তি করেছে। সংস্থাটির কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ নিচ্ছে সরকার। এই ঋণের শর্ত মেনে এখন সমন্বিত লোকসানকে মুনাফা থেকে সমন্বয় করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু সমন্বয়ের পর এখনো প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার লোকসান রয়েছে সোনালী ব্যাংকে। এর সঙ্গে এক হাজার ৯০০ কোটি টাকার ঘাটতি যোগ করলে মূলধন ঘাটতি সাড়ে চার হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে।
মুনাফা পরিস্থিতি: ২০১১ সালে সোনালী ব্যাংক ৫৩৪ কোটি টাকার নিট মুনাফা করেছিল। আর ২০১২ সাল শেষে ব্যাংকটির নিট লোকসান এক হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটির ১২ শাখায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক খেলাপি ঋণের আবিষ্কার যোগ করলে লোকসানের পরিমাণ হবে দুই হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।
ব্যাংকটির রূপসী বাংলা শাখা থেকেই হল-মার্ক গ্রুপসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠান তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা জালিয়াতি করে বের করে নিয়েছে। আত্মসাৎ করা এই বিপুল অর্থের প্রায় পুরোটাই এখন খেলাপি হয়েছে। তাই এর বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়েছে। এ কারণে পুরো ব্যাংকটিই বড় লোকসানের মধ্যে পড়েছে। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির প্রভাবে অন্য ব্যাংকেরও ব্যবসা কমেছে।
হল-মার্ক ও রূপসী বাংলার দায়: সোনালী ব্যাংক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রূপসী বাংলা শাখায় জালিয়াতির জন্য ব্যাংকটির নিট দায়ের একটি হিসাব দিয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, হল-মার্কের নিট দায় দুই হাজার ৬৮১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর টি অ্যান্ড ব্রাদার্স গ্রুপ, প্যারাগন নিট, নকশী নিট, ডিএন স্পোর্টস ও খান জাহান আলী সুয়েটারসের কারণে নিট দায় হয়েছে ৯২১ কোটি চার লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেন, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির অর্থ কোনোভাবেই আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নামমাত্র জামানত রয়েছে এই বিপুল জালিয়াতির বিপরীতে। ফলে সরকারের উচিত হবে সোনালী ব্যাংকের পরিস্থিতি বিবেচনা করে মূলধনের জোগান দেওয়া।
সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই মুহূর্তে ব্যাংকটিতে মূলধন জোগান দিতে সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছেও বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে সরকারকে এগিয়ে আসার সুপারিশ করেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ