শেষ উইকেট পতনে উল্লাস শুরু হয় ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস শিবিরে। গ্যালারি সেই শুরু থেকেই উন্মাতাল। প্রথম থেকেই বোধহয় দর্শকদের বিশ্বাস ছিল এবারও শিরোপা জিতবে তাদের প্রাণের দল গ্ল্যাডিয়েটরস। তাদের ইচ্ছাই পূরণ করেছেন ক্রিকেট দেবতা। চিটাগং কিংসকে ৪৩ রানে হারিয়ে বিপিএলের টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতল গ্ল্যাডিয়েটরস।
ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস: ১৭২/৯ (২০ ওভার)
চিটাগং কিংস: ১২৯/১০ (১৬.৪ ওভার)
ফল: ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস ৪৩ রানে জয়ী
খেলা শেষে মাঠ প্রদক্ষিণ করলেন গ্ল্যাডিয়েটরসের কয়েকজন খেলোয়াড়। পর পর দুই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় উচ্ছ্বাসটা প্রথমবারের মতো ছিল না। পুরো টুর্নামেন্টে তারা যেভাবে খেলেছে এবং যে মানের খেলোয়াড় নিয়েছে তাতে করে শিরোপাটা তাদের প্রাপ্যই ছিল।
টসে জিতে চিটাগং ফিল্ডিং নিলে গ্ল্যাডিয়েটরস দেশেশুনে ব্যাটিংয়ের শুরুটা করে। ১৭ রানে ক্যাচ তুলেও বেঁচে যান মোহাম্মদ আশরাফুল। উঁচুতে ওঠা বল তাসকিন আহমেদ তালুবন্দি করতে পারেননি। কিন্তু ২৪ রানে পৌঁছে সেই একই ভুলে জুটি ভাঙে। আশরাফুলকে সাজঘরের পথ দেখান দিলহারা লোকুহেত্তিগে।
এনামুল হক বিজয় এবং আশরাফুলের দ্বিতীয় জুটি থেকে এসেছে ৪৪ রান। ওহ, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস প্রথম উইকেট হারায় দলের পাঁচ রানে। তিলকারত্নে দিলশান বোল্ড আউট হন ব্যক্তিগত দুই রানে। তাসকিন আহমেদের জোরে বল প্যাড হয়ে অফ স্ট্যাম্পটা ভেঙে দেয় শ্রীলঙ্কান ওপেনারের।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে জুটিতে ৪৮ এবং ব্যক্তিগত ৫৮ রানে ক্রিজ ছাড়েন বিজয়। ছয়টি চার ও দুটি ছয়ের মারে ৩৬ বলে নান্দনিক ইনিংসটি খেলেন তিনি।
রুবেল হোসেনের বলে বিজয় বোল্ড হলে সাকিবকে অল্প সময় সঙ্গ দেন কাইরান পোলার্ড। চতুর্থ উইকেটে ২৬ এবং পঞ্চম উইকেটে ২৭ রান হয়। দুবার জীবন পেয়ে সাকিব করেন ৪১ রান। একবার উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান আরেকবার রায়ান ডেসকাট ক্যাচ ফেলেন সাকিবের। তাঁর ২৯ বলের ইনিংসে দুই চার এবং দুটি ছয় ছিল।
রুবেলের জোরে বল মিডলর্ডারে খেলতে না পারায় উইকেট বৃষ্টি হতে থাকে। কিংসের পেসার রুবেল ৪৪ রানে নিলেন চার উইকেট। তাসকিন এবং দিলহারাও নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। এক উইকেট পেয়েছেন রবি বোপারা।
কিংসের বোলিং যতটা ভালো ছিল ফিল্ডিং ততটাই খারাপ। উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান বল ছাড়লেন অসংখ্যবার। তার হাতের ফাঁক গলে বাউন্ডারি হয়েছে বেশ কয়েকটি। ক্যাচ ফেলেছেন অন্তত তিনবার। বোপারা, ডেসকাটও হাতে গ্রিস মেখে নেমেছিলেন। সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে গ্ল্যাডিয়েটরস পৌঁছে যায় ১৭২ রানে।
চিটাগং কিংস শুরুর ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল বোলারদের দরমুজ পেটা করছেন। মাশরাফি বিন মুর্তজা, আলফনসো থমাস কাউকেই রেহাই দিচ্ছিলেন না জেসন রয়। কিন্তু তাদের এই চোটপাট স্থায়ী হতে পারেনি সিহান জয়াসুরিয়াকে মাশরাফি ক্যাচ আউট করায়। সাকিব এবং সাকলাইন সজিব মার খেতে থাকলে মোশাররফ হোসেন কিংসের তিন ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান, বোপারা ও জেসনকে ফিরিয়ে অধিনায়কের হাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেন। ৬৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে টালমাটাল অবস্থা কিংসের। সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহ ইনিংসের হাল ধরেন। তিনিও ৪৪ রানে আউট হয়ে যাওয়ায় কিংসের পরাজয় সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। ১৬.৪ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট তারা।
ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন অলরাউন্ডার মোশাররফ হোসেন। চার ওভারে ২৬ রান দিয়ে তিন উইকেট এবং এক রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। টানা দ্বিতীয়বারের মতো সিরিজ সেরা হয়েছেন অলরাউন্ডার সাকিব। ১২টি ম্যাচ খেলে ৩২৯ রান এবং ১৫টি উইকেট পেয়েছেন।