1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
চিকিৎসায় রেসপন্স করছেন খালেদা জিয়া : ডা. জাহিদ নির্বাচনের তফসিলে তারিখ ছাড়াও যা যা থাকে ইসলামিক কর্মকাণ্ড না চললে মসজিদ থেকে লাভ নেই : ধর্ম উপদেষ্টা ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থেকে সচিবালয় ছাড়লেন অর্থ উপদেষ্টা তফসিল ঘোষণার পর আসিফ-মাহফুজের পদত্যাগপত্র কার্যকর হবে : প্রেসসচিব আগামী নির্বাচন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ : প্রধান উপদেষ্টা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরবে : গয়েশ্বর মস্কোর কাছে বিধ্বস্ত রুশ সামরিক কার্গো বিমান, নিহত ৭ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ, অপেক্ষা তফসিলের জরুরি প্রেস ব্রিফিং ডেকেছেন উপদেষ্টা আসিফ, পদত্যাগের গুঞ্জন

শত কোটি টাকার কেরানি

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৩
  • ১২০ Time View

থাকেন অভিজাত ফ্ল্যাটে। চড়েন ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডোতে। কাজ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। নাম আবজাল হোসেন। তিনি একজন কেরানি। ফরিদপুরের নদীভাঙন এলাকার বাস্তুহারা পরিবারের ছেলে। অভাব-অনটনে জর্জরিত থাকায় পড়াশোনাও এগোয়নি, টেনেটুনে এইচএসসি পাস। তারপরই যোগ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কেরানি পদে। ওই কেরানির চাকরিই তার ভাগ্যের দরজা খুলে দিয়েছে। এখন তার বিলাসী জীবন। সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির টাকায়। পদবিতে কেরানি হলেও অফিসের হিসাব রক্ষণ থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি কাজের বিলি-বণ্টন, ফাইল গায়েব, কাজ না করে বিল নিয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে ভাগ-বাটোয়ারাসহ মহাখালীর পুরো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রক তিনি। বিত্তের জোরে এখন মাস্তানও পোষেন এমন অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাধারণ কর্মচারীদের। বেনামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ঠিকাদারি করেন। ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন তিনিই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন হিসাব রক্ষক হয়েও তিনি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বিদেশ সফর সঙ্গী হন। বিগত জোট সরকারের আমলে দাপটে ছিলেন ড্যাব মহাসচিব ডা. জাহিদ হোসেনের ছোট ভাই জাকির হোসেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে, হাল-আমলে মহাদাপটে আছেন ফরিদপুরের পরিচয়ে। মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কক্ষগুলো নন এসি হলেও হিসাব রক্ষক আবজাল হোসেনের কক্ষটি সুশোভিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
আবজাল হোসেন ১৯৯৩ সালে ১২শ’ টাকা স্কেলে চাকরি নেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের উন্নয়ন প্রকল্পে। বর্তমানে বেতন পান ৮ হাজার টাকা স্কেলে। কর্মরত আছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাব রক্ষক পদে। মাঝে সময় কুড়ি বছর। কুড়ি বছর সময়ে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট, নিজ জেলা ফরিদপুর শহরে বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পদ, নিজ ও পরিবারের লোকদের ব্যবহারের জন্য একাধিক গাড়ি। চলনে-বলনে রাজকীয় স্টাইল। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি বসবাস করেন ঢাকার উত্তরা এলাকার নিকুঞ্জে তার স্ত্রীর নামে কেনা একটি অভিজাত ফ্ল্যাটে। উত্তরার ওই নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় আরও একটি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। মিরপুর পল্লবীর কালশীর ডি-ব্লকে ৬ শতাংশ জমির একটি প্লট কিনেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের আরেক দুর্নীতিবাজ কেরানির পাশাপাশি। রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আছে জমির প্লট। মানিকদি এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন ওই বাড়িতে বর্তমানে বসবাস করছেন তার শ্যালক। ঢাকার দক্ষিণখানে আছে ১২ শতাংশ জায়গার ওপর দোতলা বাড়ি।
ঢাকাতে আবজাল হোসেন ব্যবহার করেন তিনটি গাড়ি। দু’টি মাইক্রোবাস একটি দামি গাড়ি। সূত্রমতে মাইক্রোবাস দু’টি তার শ্যালকের নামে কেনা, গাড়িটি কেনা স্ত্রীর নামে। ওই গাড়িটিই তিনি ব্যবহার করেন। গাড়িতে করে অফিসে এলেও অফিস পর্যন্ত গাড়িতে যান না, মহাখালী ফ্লাইওভারের কাছে নেমে, হেঁটে প্রবেশ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভেতর, নিজ অফিসে। তার নিজের ব্যবহৃত গাড়ির নম্বর খুলনা-গ-১১-০০০২। নিজ জেলা ফরিদপুর শহরে টেপাখোলা লেকপাড়ে ফরিদের স’মিলের পাশে নিজে কিনেছেন ১২ শতাংশ বাড়ি করার জমি। ওই জমির প্রায় পাশাপাশি টেপাখোলা স্লুইস গেটের পাশে ওই এলাকার কমিশনার জলিল শেখের আবাসন প্রকল্পে ৬ শতাংশ করে নিজে প্লট কিনেছেন দু’টি। আবজাল হোসেনের নিকটজনরা জানিয়েছেন, ফরিদপুরে ওইসব ভূ-সম্পদ ছাড়াও শহরের গোপালপুর এলাকার বনলতা সিনেমা হলের পাশে মাস্টার কলোনিতে ১৫ শতাংশ জায়গার ওপর একটি একতলা বাড়ি করেছেন তিনি। ওই পরিমাণ সম্পদ ছাড়াও আবজাল হোসেনের পরিবার ও নিকটজনদের নামে আছে ৩০টি সিএনজি। সিএনজিগুলো রাজধানীতে ভাড়ায় চলে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এডুকেশন শাখায় কাজ করার কারণে ওই শাখার সব মেডিকেল কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে বেতন পর্যন্ত নিতে হয় আবজালের নামে কমিশন দিয়ে। পুরো অধিদপ্তরের কর্মচারীদের বদলি, পদোন্নতি, পদায়ন মহাপরিচালকের সঙ্গে ওইসব বিষয়ের লেনদেন হয় আবজালের হাত দিয়ে। অধিদপ্তরের কেনাকাটার টেন্ডার ও নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন এখানে বদলি বা পদায়নের ক্ষেত্রে ঘুষের রেট নির্ধারিত। ২০ হাজার, ৩০ হাজার ও ৫০ হাজার। সূত্রমতে ঘুষের টাকা নথির সঙ্গে গেঁথে দিতে হয়। যাকেই যে পরিমাণ ঘুষ দেয়া হোক আবজাল হোসেনের নথিতে গেঁথে দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। মহাপরিচালকের নিকটজন বলেই অধিদপ্তদের পদস্থ কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে মহাপরিচালক বিদেশ ভ্রমণে সঙ্গে করে নিয়েছিলেন হিসাব রক্ষক আবজাল হোসেনকে। এছাড়াও আবজাল হোসেন চিকিৎসার নামে মাঝে-মধ্যেই সপরিবারে বিদেশ ভ্রমণে যান, আবার কখনও কখনও একাই যান বিনোদনের জন্য। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবাই জানেন অধিদপ্তরে আলোচিত ঠিকাদার মিঠুর সঙ্গে মিলে প্রকাশ্যে ঠিকাদারি ব্যবসা করেন আবজাল হোসেন। ঠিকাদারি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ন্ত্রণও করেন তিনি। এ নিয়ে একাধিকবার মিডিয়ার শিরোনামও হয়েছেন। ঠিকাদারের সহযোগী হিসেবে তার নামে মামলাও হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ একাধিক অভিযোগ জমা হয়েছে আবজাল হোসেনের নামে। দুদকের একটি অভিযোগ দুদ/সাজেকা/ঢাকা/১/১৫৩৯/তাং ২০-১২-১২ থেকে জানা যায় আবজাল হোসেনকে দুদক তার বক্তব্য প্রদানের জন্য ডাকলেও তিনি দুদকে হাজির হননি। তার পদবি ভুল থাকার অজুহাত দেখিয়ে দুদককে ম্যানেজ করে পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সমর্থ হয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন অবসারপ্রাপ্ত সাঁট মুদ্রাক্ষরিক ই আর খান গত ডিসেম্বরে আবজাল হোসেনের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ ও বেপরোয়া ঘুষ ও টেন্ডার বাণিজ্যের বিস্তারিত ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। সূত্রমতে মাঝপথে আটকে গেছে সে আবেদনও। ই আর খানের লিখিত ওই আবেদনে দেখা যায় স্বাস্থ্যখাতের এডভোকেসি শাখার বার্ষিক ৫০ লাখ টাকা খরচের বদলে আবজাল হোসেনসহ কর্মকর্তারা ভাউচার বানিয়ে লোপাট করেছে বরাদ্দের বেশির ভাগ।
ওইসব অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ বাণিজ্য ও সরকারি চাকরিতে কর্মরত থেকেও টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের বিষয় জানতে চাইলে তার দপ্তরে বসে আবজাল হোসেন বলেন, এসব মিথ্যা স্রেফ গুজব। আমার কোন সম্পদ নেই। যা কিছু আছে সব পৈতৃক, আমার নয়। আমার নামে কোথাও কিছু খুঁজে পাবেন না। তিনি বলেন, এখানে কেউ কারও ভাল দেখতে পারে না বলেই ওই সকল প্রচার ছড়ানো হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। ঘুষ বাণিজ্য সম্পর্কে বলেন, এটা একেবারেই গুজব, আমাকে কেন মানুষ ঘুষ দেবে? আমি কি কর্মকর্তা, আমি কি বদলি করতে পারি? তিনি অস্বীকার করেন বিদেশ যাওয়ার বিষয়টিও। টেন্ডার বাণিজ্য ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বলেন, এগুলো ঠিকাদারদের বানানো গল্প। তাদের রটনা। আমি চাকরি করে খাই অন্য কিছু করি না।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ