দেশের জনশক্তি রফতানিতে বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে বাংলাদেশ রিত্রুটিং এজেন্সিকে (বায়রা) দেওয়ার পরমর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
শনিবার দুপুরে সিরডাপ মিলনায়তনের ‘বিসিডিজেসি’, ‘আমাদের অর্থনীতি’ এবং ‘সাপ্তাহিক কাগজ’ আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান’ শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ সভায় বক্তরা এ পরামর্শ দেন।
তারা বলেন, “এ পর্যন্ত একশোটির বেশি দেশে বায়রা ৯০ লাখ জনশক্তি রফতানি করেছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান দেশের অর্থনীতিতে দ্বিতীয়।”
বায়রার অবদানের কথা স্বীকার করে সংস্থাটিকে আবারও সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তারা।
বক্তারা বলেন, “মালয়েশিয়া ৪০ হাজার লোক পাঠাতে সরকার সময় নিয়েছে ৩ বছর। এই কাজটি বায়রাকে দিলে সর্বোচ্চ সময় লাগতো এক বছর।”
বায়রার অবদান অনস্বীকার্য কথা উল্লেখ করে সরকারের কাছে আবারও মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি-এর (বায়রা) সভাপতি শাহজালাল মজুমদার।
তিনি বলেন, “মিডিয়ায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নামে অপপ্রচারে সরকার এখন বায়রা বিমুখ। মালয়েশিয়ায় ৪ হাজার টাকায় লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। অথচ বায়রা এ দায়িত্ব নিতে চাইলেও দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে রিক্রুটিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো কাজ করতে পারছে না।”
তিনি দাবি করেন, “বায়রার সহায়তা ছাড়া মন্ত্রণালয় একা এত কাজ কখনোই করতে পারবে না। কারণ, এত জনবল মন্ত্রণালয়ের নেই।”
এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “দেশের মানব সম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। যাদের দেশে থাকতে কোনো মূল্য দেওয়া হতো না, তাদের টাকায় এখন দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল।”
তিনি বায়রার সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “সরকার মালয়েশিয়ায় এককভাবে লোক পাঠাতে চাইছে যখন, করতে দেওয়া প্রয়োজন। সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। এখান থেকে শিক্ষা লাভ করুক। এরপরে না হয় বায়রার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবে।”
একই সঙ্গে বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করার জন্য সরকার ও বায়রার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনা অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে এই শ্রমিকরা বড় অবদান রাখলেও তাদের নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। বরং যারা হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিমানবন্দরে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়।”
তিনি বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক ভূমিকার পেছনে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান সীমাহীন। অথচ, নিজ দেশে তাদের কোনো মূল্য দেওয়া হয় না। বিদেশে তারা প্রচণ্ড দুরবস্থায় দিন কাটাযন। রাষ্টকে তাদের কাজের মর্যাদা দিতে হবে। দেশের বাইরের দূতাবাসগুলোকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে দূতাবাসে কর্মকর্তার শুধু এদেশে মন্ত্রীদের সংবর্ধনা, তেলবাজি করতেই ব্যস্ত। বাংলাদেশে অধিকাংশ দূতাবাসে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কোনো কাজ করেন না।”
ভারতীয় মিডিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো অধরাধের জন্য কোনো প্রমাণ ছাড়াই বাংলাদেশিদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায় ভারতীয় মিডিয়াগুলো। ভারতীয় কোনো শ্রমিক খুন করলে এশিয়ার লোক বলা হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এভাবে বলা হয় না। বরং কোনো প্রমাণ ছাড়াই প্রচার করা হয় বাংলাদেশি খুন করেছে।”
ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “বিদেশের শ্রম বাজারে ব্যাপ্তি বাড়াতে হলে বায়রাকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিতে হবে। বায়রার কিছু ভুলভ্রান্তি থাকতেই পারে। সেগুলো শুধরে নিয়ে সরকারকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।”
কর্মসংস্থান ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান খন্দকার বলেন, “জনশক্তির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা অতীতে শ্রমিকদের ভুয়া ভিসা দিয়ে বিদেশ পাঠিয়েছে। এর ফলে শ্রমিকরা বিদেশে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়েছে। তাই, সরকার আর বায়রাকে বিশ্বাস করতে পারছে না।”
ওয়্যারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক বলেন, “শ্রমশক্তি রফতানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা সরকারের দায়িত্ব। বায়রাকেও শুধু ব্যবসার কথা ভাবলেই হবে না, শ্রমিকদের স্বার্থের কথাও ভাবতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, “বৈদেশিক শ্রমবাজার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ১৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার আয় হলেও বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, তা ২১ থেকে ২৮ বিলিয়ন ডলার।”
তিনি বলেন, “কৃষিখাত, উৎপাদন এবং বৈদেশিক আয় একটা দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখে। তাই, শ্রমিক রফতানি খাতের ভূমিকা অপরিহার্য। শ্রমিক স্বার্থটাকে আগে দেখতে হবে। শ্রমবাজারকে উন্নয়নে সরকার এবং বায়রাকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।”
দৈনিক আমাদের অর্থনীতি-র সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন- রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির, বিজিএমইএ-র সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, এফবিসিআইএ-র সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল, গোলাম মাওলা রনি, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক উপমন্ত্রী ফখরুল ইসলাম মুনশি, গবেষক মোহাম্মদ খান, সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার, বায়রা সহসভাপতি আবুল বারাকা ভূঁইয়া এবং মনসুর আহমেদ কালাম, মেজর জেনারেল আমিন আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।