জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন ধর্ষকের ক্ষমা নেই

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন ধর্ষকের ক্ষমা নেই

‘ধর্ষণের কোনো ক্ষমা নেই’, ‘ঘরে বাইরে সর্বত্র নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’, ‘জেগে উঠুন নির্মমভাবে আঘাত করুন’, ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থেকে শুরু করে অনেকেই এসব প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে। গতকাল বৃহস্পতিবার সেখানে সকালে ও বিকেলে দুটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। সেখান থেকে মেয়েদের জন্য নিরাপদ একটি বাংলাদেশের দাবি ওঠে।
উদ্যমে উত্তরণে শতকোটি, দক্ষিণ এশিয়ার নারী আন্দোলন কর্মীদের মোর্চা সাংগাত, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অ্যাকশনএইড, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নিজেরা করি, প্রাগ্রসর, উই ক্যান, অক্সফাম, এশিয়াটিক, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারী প্রগতি সংঘসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে মানবাধিকারকর্মী আইরিন খান বলেন, ধর্ষণের প্রতিটি ঘটনার ন্যায়বিচার ও জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সবার কাছে এই বার্তা পৌঁছাতে হবে যে ধর্ষণকারীদের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয় না রাষ্ট্র।
সেন্ট্রাল উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মালেকা বেগম বলেন, ধর্ষকের বদলে এ সমাজ ধর্ষিতার শিকার ব্যক্তিকেই অনেক সময় দায়ী করে। পুলিশ তাদের মামলা নিতে চায় না, আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারেন না। এসব কারণে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, নারী নির্যাতন বন্ধ করতে সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে লিঙ্গ বিষয়টি আনতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে নয়, প্রত্যেককে এই আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সাংগাত বাংলাদেশের ফওজিয়া খন্দকার, নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের, অভিনেত্রী সারা যাকের, অ্যাকশনএইডের বাংলাদেশপ্রধান ফারাহ খান, শিপ্রা বসু প্রমুখ এই মানববন্ধনে অংশ নেন। এর আগে টাঙ্গাইলের ওই ঘটনায় ন্যায়বিচারের মঞ্চ নামের একটি ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন গতকাল সকালে সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে।
আয়োজনকারীরা বলেন, শুধু ২০১২ সালেই দেশে ৭৭১ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ১৫৭ জনই গণধর্ষণের শিকার। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১০৬ জনকে। এসব ঘটনার পরও রাষ্ট্রের আইন, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার শিথিল অবস্থান দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে হুমকির সম্মুখীন করেছে।
সাংবাদিক অঞ্জন রায়, ‘জাস্টিস ফর বাংলাদেশ’-এর আহ্বায়ক এস এম সৈকত, আইনজীবী আফসানা জেরিন খান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান, সাংবাদিক শরীফ এ. কাফী, পরিবেশকর্মী সৈয়দ সাইফুল আলম, আইনজীবী এরশাদুল বারী খন্দকারসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, শিশু-কিশোরী থেকে বৃদ্ধ নারী—কারও সম্ভ্রমই আজ নিরাপদ নয়। তাঁরা আজ ধর্ষণ কিংবা গণধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু দুর্বল আইনি কাঠামোর কারণে ধর্ষকেরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আর তাই ধর্ষণ প্রতিরোধে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ এক বিবৃতিতে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ন্যায়বিচার দাবি করেছেন। এ ছাড়া কয়েকটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ওই ঘটনার বিচার দাবি করে গতকাল নানা কর্মসূচি পালন করেছে।

 

অন্যান্য বাংলাদেশ শীর্ষ খবর