1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৮ অপরাহ্ন

জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে আজ- তিলোত্তমা হাতিরঝিলে স্বাগত

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৩
  • ১৭৪ Time View

এ এক অন্য রূপ। অন্য আলোয় উদ্ভাসিত রাজধানী ঢাকা। রাত নামতেই আলোর ছড়াছড়ি। নিচে স্বচ্ছ পানিতে আলো পড়ে এক মোহনীয় আবেশে তৈরি করেছে মনকাড়া সৌন্দর্য। বাগানে ফুটেছে নানান রকম ফুল। মৌ মৌ ঘ্রাণ। উড়ছে প্রজাপতি। দিনের বেলা ফুল আর দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ আর ওভারপাস- সেখানে অনাবিল রূপ-মাধুর্য ছড়িয়ে দিচ্ছে আশপাশে। চিরাচরিত যানজট, দুর্গন্ধ আর ইট কনক্রিটের মাঝে থেকে পাওয়া কোলাহল ছেড়ে যখন রাস্তা পেরিয়ে সামান্য ভেতরে পা পড়লো- মনে হলো এ কোন এক স্বপ্ন সৌন্দর্যের নগরী বুঝি! চারপাশে ফুলের বিছানা। লেকের মাঝে স্বচ্ছ পানির খেলা। দৃষ্টিনন্দন সেতু, ওয়াকওয়ে আর চোখধাঁধানো সবুজ বেষ্টনীর কারণে মনভরানো এক অপরূপ দৃশ্যপট। এটি প্রাণহীন নগরী হিসেবে পরিচিত রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল লেকের দৃশ্য। নিষপ্রাণ নগরবাসীর মাঝে প্রাণের সঞ্চার যোগাতে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। পরিবার-পরিজন আর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একসঙ্গে মুক্ত পরিবেশে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে আজ থেকে সবুজ নীড় হাতিরঝিলে স্বাগত। রাজধানীবাসীর চিত্তবিনোদনের হৃৎপিণ্ড হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্যে নির্মিত রূপকথার ছবির মতো একখণ্ড সৌন্দর্য কানন হাতিরঝিল আজ উন্মুক্ত হচ্ছে সর্বসাধারণের জন্য। আজ থেকেই নাগরিকদের অবকাশ যাপন কেন্দ্র হিসেবে পথচলা শুরু হলো বহুল প্রতীক্ষিত ও আলোচিত আন্তর্জাতিক মানের এ লেকটি। মামলা-মোকদ্দমার কারণে নির্ধারিত সময়ে উন্মুক্ত না হওয়া, এখনও অসমাপ্ত কাজ রয়ে যাওয়া, প্রভাবশালীদের চাপে নকশায় অসঙ্গতি রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন- এ রকম নানা অভিযোগ আর অনুযোগ পাশ কাটিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে দশটায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন লেকটি। আশা করা হচ্ছে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর শুধু দেশী পর্যটক বা ভ্রমণ পিপাসুদেরই চিত্তের খোরাক যোগাবে না। বিদেশী পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মান্নান খানের ভাষায় রাজধানীতে সুস্থ সুন্দর পরিবেশে নিঃশ্বাস নেয়ার জায়গা ছিল না। এখন হাতিরঝিলে এসে মানুষ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবেন। মুক্ত বাতাস নিতে পারবেন। মানবজমিনকে বলেন, হাতিরঝিল ছিল রাজধানীর ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। গোটা এলাকা ছিল বস্তিবাসীর দখলে। দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে পথচারীদের হাঁটাচলা ছিল দায়। জনকল্যাণ ও যানজট নিরসনে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। এখানে এসে পরিবার পরিজন নিয়ে নাগরিক জীবনের যন্ত্রণা থেকে কিছুটা সময় হলেও হারিয়ে থাকতে পারবেন রাজধানীবাসী।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, লেকের সৌন্দর্য ধরে রাখা দুষ্কর হতে পারে। এক পথচারী জানান, সাধারণ মানুষের সহায়তা না থাকলে লেকের এই সৌন্দর্য বেশি দিন স্থায়ী হবে না। ফল ও গাছ সংরক্ষণ দায় হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঠিক না রাখলে সৌন্দর্য টিকবে না। এজন্য তদারক কঠোর ও পর্যাপ্ত রাখার কথা বলেন তিনি। তার মতে, লেক রক্ষায় দর্শনার্থীদেরই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজেদের  সৌন্দর্য নিজেদেরই বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
লেকটি উদ্বোধন উপলক্ষে কর্তৃপক্ষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আলোকসজ্জা করা হয়েছে ব্রিজ, ওভারপাস, ওয়াকওয়ে জুড়ে। ফলে রাতে এক অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা হয়। এর আগে সর্বশেষ উদ্বোধনের তারিখ ছিল গত ১৬ই ডিসেম্বর। বিউটিফিকেশন ও আনুষঙ্গিক কাজ শেষ না হওয়ায় সেদিন উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১,৯৭১ কোটি টাকা। ১,০৪৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে ৩০২ একর জমি অধিগ্রহণে। প্রকল্পের অবকাঠামোগত ব্যয় ছিল ৯২৩ কোটি টাকা। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের তত্ত্বাবধানে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এদিকে এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করে নতুন আরেকটি প্রকল্প শুরু হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করে হাতিরঝিল লেকের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে গুলশান, বনানী ও বারিধারা লেকের। এর নাম দেয়া হয়েছে, ‘গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’। বরাদ্দ এসেছে ৪১০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এই অর্থ ব্যয় হবে ভূমি অধিগ্রহণ, ওয়াকওয়ে, ফুটপাত ও সৌন্দর্যবর্ধনে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দু’বছর সময় যাবে। এটি শেষ হলেই পুরোপুরি সম্পন্ন হবে হাতিরঝিল লেকের কাজ। ততদিন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের তত্ত্বাবধানেই কাজ চলবে। রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের বিরুদ্ধে ৭৮টি মামলা ছিল। ২০টি আদালত অবমাননা মামলা মাথায় নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এ কারণে প্রকল্পের কাজ দফায় দফায় বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬টি উদ্দেশ্য সাধন হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর জন্য পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ রক্ষাকারী একটি নগর-মহাসড়ক বাস্তবায়িত হয়েছে। বেগুনবাড়ি-হাতিরঝিল লেকের দু’পাশে নির্মিত সার্ভিস রোডের সঙ্গে স্থানীয় রাস্তার সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ি খালের সঙ্গে বনানী ও গুলশান লেকের সংযোগের ফলে ঢাকা শহরের খালসমূহের জন্য প্রস্তাবিত লেকটি একটি নিয়ন্ত্রিত হাইড্রলিক সিস্টেম হিসেবে কার্যকর হয়েছে। এ প্রকল্প ঢাকা মহানগরীর একটি সুবিশাল নীল জলাধার বিশিষ্ট উন্মুক্ত স্থানের অভাব পূরণ করেছে। প্রস্তাবিত লেকের কারণে সংরক্ষিত পানি দ্বারা ভূগর্ভস্থ জলাধারের রিচার্জ করা সম্ভব হবে। গতকাল নতুন বছরের প্রথম দিনে হাতিরঝিল লেকে ছিল সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড়। প্রতিদিনই এখন দর্শনার্থী সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন। বিকালের পর মানুষের হই-হুল্লোড়ে লেক মুখরিত হয়ে উঠছে। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে প্রায় কাজই শেষ করা হয়েছে। চারটি ব্রিজ এবং চারটি ওভারপাসের কাজ শেষ। ফুট ওভারব্রিজও সম্পন্ন। তবে এখনও পর্যন্ত বাগানে সব ফুল ফোটেনি। অনেক গাছই প্রাণ ফিরে পায়নি। প্রত্যাশিত চেহারায় আসতে আরও অন্তত ছ’মাস লেগে যেতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ